রাঁচি, 28 মে: 'গোটা দেশে ইন্ডিয়া জোটের ঢেউ চলছে। এবার ঝাড়খণ্ডের 14টি আসনেই জয়ী হবে ইন্ডিয়া জোট।' এমনটাই দাবি করলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন। ইটিভি ভারত-কে তিনি জানান, মোদি সরকারের 10 বছর জনগণ দেখেছে। এই সরকার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে বলেও কটাক্ষ করেন সোরেন। পাশাপাশি বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, দুর্নীতি, দলে কল্পনা সোরেনের সক্রিয়তা, সারনা ধর্ম কোড, ওবিসি সংরক্ষণ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরেও নিজের অভিমত ইটিভি ভারত-কে জানিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
- ইটিভি ভারত: ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনের বিষয়ে আপনার দাবি এবং যুক্তি কী ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: ইন্ডিয়া জোট এক ইস্যু এবং এক চিন্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বেকারত্ব দূরীকরণ, নারী উন্নয়ন-সহ অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, গত 10 বছরে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যা-ই ঘোষণা করেছেন, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এটা দেশের মানুষও বুঝতে পেরেছে। এতে লাভবান হবে ইন্ডিয়া জোট। আমাদের সরকার জনকল্যাণকর কাজের ভিত্তিতে ভোট চাইছে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যে শাসন করেছে, কিন্তু আদিবাসী এবং দরিদ্র কেউই কোনও সুফল পায়নি। আদিবাসীদের বাঁচাতে সারনা ধর্মীয় বিধিকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। ওবিসিদের 14 থেকে 27 শতাংশ সংরক্ষণের দাবি স্থগিত রাখা হয়েছে। বিষয়টি রাজভবনে রয়েছে ৷ এমনকী স্থানীয় নীতি নিয়েও নীরব বিজেপি।
- ইটিভি ভারত: বিজেপি যদি আদিবাসী বিরোধী হয়, তাহলে অর্জুন মুণ্ডা কেন্দ্রে মন্ত্রী হলেন কীভাবে ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: তারপরও তো বিশ্ব আদিবাসী দিবসে একটি দাবিও মানা হচ্ছে না। সারনা ধর্ম কোডের জন্য আদমশুমারির তালিকায় কেন একটি পৃথক কলম তৈরি করা হচ্ছে না ? তাদের (বিজেপি) উপজাতীয় শুভাকাঙ্ক্ষী বলা যায় কী করে ?
- ইটিভি ভারত: কীসের ভিত্তিতে 14 আসনে জয়ের দাবি করছেন আপনারা ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সরেন: 10 বছর ধরে কেন্দ্রে মোদি সরকার রয়েছে। এই লোকেরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের সরকার আবুয়া হাউজিং স্কিম চালু করতে বাধ্য হয়েছিল। আমাদের সরকার এখানে গরিবদের সর্বজন পেনশন প্রকল্পের সুবিধা দিচ্ছে। এতে সরাসরি লাভবান হচ্ছে দরিদ্ররা।
- ইটিভি ভারত: 10 বছরে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে আলোচনা হয়নি কেন ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: এরা কী ইস্যু নিয়ে এসেছেন ? কখনও মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে কথা বলেনি। উজ্জ্বলা প্রকল্পে একবার গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছিল। এর পর আর কোনও সুবিধা নেই। 2014 সালে মুদ্রাস্ফীতির নামে এই লোকেরা ক্ষমতায় এসেছিল। এখন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম 400 থেকে 1200 টাকা। পেট্রোলের দামও বেড়েছে ৷ প্রতি লিটার 100 টাকার ওপরে চলে গিয়েছে। তাদের কোনও ঘোষণাই সত্য প্রমাণিত হয়নি ৷ তাহলে তারা কীসের ভিত্তিতে ভোট চাইছেন ?
- ইটিভি ভারত: বিজেপি দাবি করেছে, দেশে দারিদ্র্য কমেছে, অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে...
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: কীভাবে দারিদ্র্য কমেছে ? আজও আপনি 80 কোটি মানুষকে 5 কেজি খাদ্যশস্য দিচ্ছেন। এটা স্পষ্ট যে, দেশে দারিদ্র্য রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য আবারও খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা বলছেন তারা। সেই লাইন থেকে গরীবদের কীভাবে বের করে আনা যায়, সে বিষয়ে কোনও আলোচনাই নেই। হ্যাঁ, এই সরকার অবশ্যই গুটিকয়েক পুঁজিপতির জন্য কাজ করেছে। তারা এগিয়ে গিয়েছে।
- ইটিভি ভারত: ঝাড়খণ্ড সরকার সমস্ত দরিদ্রদের পেনশন দিচ্ছে ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: কেন্দ্রীয় সরকার গরীবদের জন্য কিছুই করেনি। আমাদের সরকার দরিদ্রদের পেনশন দিচ্ছে। সেচের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী সময়ে এখানকার কৃষকরা দেশকে শস্য দেবে।
- ইটিভি ভারত: দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: দেশের অনেক রাজ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ না করে কীভাবে মন্ত্রী আলমগীর আলমকে বাদ দেওয়া যায় ? এজেন্সির কাজে সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করছে না। কিন্তু দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা-ও দেখা উচিৎ। দুর্নীতির আইন তার কাজ করছে। আদালত থেকে ফলাফল আসার পরই যে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে।
- ইটিভি ভারত: কল্পনা সোরেন কি মুখ্যমন্ত্রীর সমান্তরাল ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: কেউ কী বলেন, দু-একজন কী বলেন, এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ঠিক নয়। কল্পনা সোরেন নির্দল হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন না। তাঁকে দলের পক্ষ থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। গাণ্ডে আসনটি খালি করার বিষয়টি দলের কৌশলের একটি অংশ। তবে দলের কৌশল আমরা প্রকাশ করছি না।
- ইটিভি ভারত: সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: এটা জোট সিদ্ধান্ত নেবে। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও দরকার নেই।
- ইটিভি ভারত: জেলে হেমন্ত সোরেন ৷ কী ভাবছেন ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: হেমন্ত সোরেন দলের কার্যকরী সভাপতি। তাঁর সঙ্গে যখনই দেখা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে শুধু দল নিয়ে। জোটের অধীনে কাকে টিকিট দেওয়া উচিত, আসন ভাগাভাগি কীভাবে হবে, কীভাবে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা যায়, শুধু এসব বিষয়েই তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
- ইটিভি ভারত: তার মানে আপনি বলছেন, বিজেপির 400 পার করার স্লোগানে শক্তি নেই ?
মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন: কীসের ভিত্তিতে বিজেপির লোকেরা দাবি করছে যে, তারা এবার 400টিরও বেশি আসন জিতবে ? যদি তাই হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে কেন বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাতে হবে ? এমনকী 2019 সালে ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও 65টি দাবি করা হয়েছিল। ফলাফল কী ছিল ? বিজেপি 25-এ নেমে এসেছে। জনগণ তাদের বুঝতে পেরেছে।