অনামিকা ভট্টাচার্য্য
ভারতের সমসাময়িক অ্যাংলোফোন কবিদের মধ্যে, সনেট মণ্ডল মানবিক দুর্দশার সবচেয়ে মহৎ ও সুমধুর কণ্ঠস্বর এবং বিশুদ্ধ সচেতনতার একজন বিরল কবি । সনেট মণ্ডল একজন ইংরেজি ভাষার কবি এবং ভার্সভিল ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক । তিনি চেয়ার পোয়েট্রি ইভিনিংস ৷ কলকাতার আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ।
সাহিত্য কীর্তির জন্য 2016 গায়ত্রী গামার্শ মেমোরিয়াল পুরস্কারের বিজয়ী । এছাড়াও তিনি 2014 থেকে 2016 পর্যন্ত আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক লেখার প্রোগ্রামের সিল্ক রুট প্রকল্পের একজন বিশিষ্ট লেখক ছিলেন । আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, নিকারাগুয়া, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি, ইতালি, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া-সহ পৃথিবীর নানা দেশের কবিতা উৎসবে তিনি কবিতা পড়েছেন । এটি কবিতা প্রমী মানুষের জীবনে মূলমন্ত্র হিসাবে কাজ করে ৷
সনেটের কবিতার প্রতি ঝোঁক স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু 2006 সালে তিনি কবিতা লিখেছিলেন তারপর তিনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন । মজার বিষয় হল, তার নাম সনেটের অর্থ চৌদ্দ লাইনের একটি কবিতা যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ছন্দের স্কিম ব্যবহার করা হয়েছে ৷ তিনি জানান এটি কোনও ছদ্মনাম নয় বরং তাঁর বাবা-মা দিয়েছেন ৷ কিছু বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইটিভি ভারত ৷
সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ:
তিনি বলেন, "কবিতার ইন্সপিরেসন বলে একটা কথা আছে ৷ বার বার সব জায়গাতে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কোথায় ইন্সপিরেসন পান ? আমার মনে হয় Poetry Itself Inspiration To Write More poet. এই একটা Nature কবিতার এবং অল্প জায়গায় অনেককিছু বলে দেওয়া যায় এই জিনিসটা মনে হয় আমাকে সবথেকে বেশি অ্যাট্রাক্ট করেছে ৷"
"সার্বজনীন বলতে সবার জন্য যদি লেখা বোঝানো হয় আমি হয়ত কোনওদিনই লিখতে পারবো না ৷ আমার নিজের ভাব প্রকাশে লিখি সেটা হতে পারে ৷ কোনও জায়গার ঘটনা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক সেটা যদি আমাকে নাড়া দেয় সেই পরিপ্রেক্ষিতে লিখছি সেটা যদি International Arena- কে কানেক্ট করে ৷ সেখানে আমার মনে হয় আমি নিজের থেকে লিখি অথবা গ্লোবালের হয়েও লিখছি ৷ কারণ আমার আপকামিং বই গ্লোবালের ঘটনা ৷"
"আমি আমার নিজের থট প্রসেসটা যতক্ষণ না ধরে চলতে পারবো এবং আমি যেখান থেকে বড় হয়েছি সেখানের যদি থট প্রসেস তুলে ধরতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকায় বসে একজন বা ইউকে তে বসে একজন গুরুত্ব দিতে পারবেন না ৷ কিন্তু আমি যদি পশ্চিমবঙ্গের কোনও একটা ঘটনাকে ঘিরে আমেরিকায় লিখি তাহলে সেটা একটা গ্রহনযোগ্য হতে পারে ৷ যেগুলো আমি শুনতে পাই দেখতে পাই এবং খুব ছোট ছোট জিনিসগুলিই আমাকে নাড়াচাড়া দেয় সেখান থেকে একটা Prospective টা গ্রো করে ৷"
কবিতার অর্থ ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে কী ? কবাতার ধারনাটি আপনি কীভাবে উপলব্ধি করেন ?
একটা লাইনে বলা যেতে পারে Something That Allows It To Derive Joy Inconclusive. এই একটা খুব বড় লাইন ৷ যদি বলা হয় আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডেও Inconclusive ৷ যে সত্যর প্রতি আমরা কথাবার্তা বলতে থাকি সেই সত্যটাও Inconclusive ৷ কারণ সত্যটাকে আমরা Celebrate করতে চাই ৷ কিন্তু যখন কেউ মারা যায় তখন আমরা কাঁদি কিন্তু মারা যাওয়াটাই সবথেকে বড় সত্য় ৷ সময়ে মৃত্যু হলেও মানুষ দুঃখ প্রকাশ করে ৷ জীবনে বড় সত্য ওটাই কিন্তু সেই জায়গাটা থেকেও দাঁড়িয়ে আমরা হয়ত সত্যটাকে উদযাপন করতে পারিনি ৷ আমার মনে হয় কবিতার উৎপত্তি এখানেই যে জিনিসটা Inconclusive এরমধ্য়ে তুলে ধরা যে ব্যাপার সেটাই কবিতা ৷
জীবন মৃত্যুর প্রত্যাবর্তনের বিষয় আপনার কবিতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয় ৷ এর জন্য কি কোনও নির্দিষ্ঠ ভাব আছে আপনার মতে কী ?
দার্শনিক ভাব সবার মধ্যেই আছে ৷ কেউ ওটাকে নিয়ে বেশি ভাবে আবার কেউ ভাবে না ৷ আমার মনে হয় আমি একটা জিনিস নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবি ৷ যদি সারাদিন পেরিয়ে যাই এবং রাতে একা বসে থাকি সারদিনের বিষয়গুলি নিয়ে মাঝে মাঝে অনেক পিছনেও চলে যায় ৷ আমার চারজন Grand Parents বেঁচে ছিলেন যখন আমার জন্ম হয়েছিল তখন ৷ আমি ওদের সঙ্গেই বড় হয়েছি ৷ আমার খুবই প্রিয় ছিলেন সবাই ৷ দুঃখের বিষয় আমি পর পর চলে যেতে দেখেছি ৷ 2028, 19, 21, 23 একের পর এক ওনারা চলে গিয়েছেন ৷

একজনের দাহকার্যতে আমি গিয়েছিলাম তিনি আমার ঠাকুমা ৷ বাকিদের যাইনি ৷ আমার কাছে ওই জিনিসটা সমস্যার বলে মনে হয় ৷ এই সত্যটা আমি মেনে নিতে পারতাম না ৷ এখান থেকে আমার জীবনে এত উপলব্ধি হয়েছে কয়েকমিনিটের মধ্যে ধোঁয়া হয়ে বেড়িয়ে যাওয়া জীবনের সমস্ত সংঘর্ষ এই দর্শনটাও একটা Infinite দর্শন ৷ এইগুলি আমার নিজের দিক থেকে লেখার চেষ্টা করা হয় ৷ আমি কোনও মৃত্যুর খবর শুনলে নিজেকে বিচলিত মনে হয় ৷ যবে থেকে মানুষের জন্ম হয়েছে তবে থেকেই সংঘর্ষ চলে আসছে ৷ তারমধ্যেই আমরা বেঁচে আছি ৷ তারমধ্যে কবিতা একটা পথ দেখিয়েছে ৷ যেগুলি ভাবি এবং যেটা আমি মুখে বলতে পারি না সেটা আমি কবিতাম মাধ্যমে বলতে পারি ৷ বলা যেতে পারে Medium of Conversation.
অনুপ্রেরনা সবার মধ্যেই থাকে ৷ আপনার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে আসে ?
ব্যক্তিগত ফিলিং ছাড়া আমি লিখতে পারি না ৷ ব্যক্তিগত বিষয় তখনই হয় যখন আপনাকে নাড়া দেয় ৷ সেটা আমার জীবনের কিছু অংশ রিলেট করে ৷ আমার মনে হয় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছাড়া আমি লিখতে পারি না ৷ বেশি ভাবনা আমার রাত্রিতে আসে একাই থাকি ৷ তাই ব্যক্তিগতভাবে যতক্ষণ না টাচ হচ্ছি আমি লিখতে পারি না ৷

আপনার প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে কী আছে যা এখনও নাড়া দেয় ?
যেখান থেকে আমি এতদূর এসেছি ৷ আমাদের অতীত কখনও ভুলে যাওয়া যায় না ৷ যদি আমি অতীত ভুলে যাই আমার কাছে মৃত্যুর সমান হবে ৷ কালকে কী ঘটেছে বা কীভাবে ঘটেছে সেগুলি যদি আমার মনে না থাকে আমার জন্য ওটা মৃত্যুরই সমান ৷ মেমোরি থেকে আমার ইমোশন গ্রো করেছে ৷ আমি যদি আজ ব্যক্তিগত জীবন ছাড়াও যদি কোনও বিষয় লিখি সেটাও একটা বিষয় ৷ এটি জন্ম নিয়েছে আমার অতীত ও নস্টালজিয়া থেকে ৷ আমি নস্টালজিয়া থেকে পালিয়ে যেতে চাই না কিন্তু এটাকে হ্যান্ডেল করা মুশকিল হয়ে যায় ৷ যেমন- যেখানে আমি বড় হয়েছিলাম আমি হয়ত যেতে পারবো না হয়ত বাড়িটাও নেই বা বিক্রি হয়ে গিয়েছে ৷ বাড়িতে গেলেও কিছু মনে হবে না, যারা থাকতো তারা কেউ আর নেই ৷ ফলে আমার মামার বাড়ি বা নিজের বাড়ি সেগুলিতে আমি আর যেতে পারি না ৷ বার বার মনে পড়ে কিছু কিছু জিনিস ৷ আমার মনে হয় এগুলিই থেকেই উঠে আসে ৷
আমার অতীতের ভিত্তি করে দুটো বই 'Afternoon In My Mind', 'Karmic Chanting'- এই বইগুলি আমার জীবনের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে ৷ এখানে জীবনের অনেক কিছু পার্ট তুলে ধরা হয়েছে বার বার ৷ যেটা আমার Upcoming Book সেটাতে একটা অন্যব্যাপার আছে ৷ এইবছরই বার হবে ৷ বর্তমানে যে কাজটা করছি সেটা শেষ হয়েছে দুইদিন আগে ৷ 'Clamour for a Handful of Rice'- এই বইটা আসছে ৷ এই বইটার টপিক বলতে সামাজিক সমস্যা ও অন্যান্য কিছু বিষয় এই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে ৷ এটি একটি প্রতিবাদের বই ৷ তবে শুধুমাত্র প্রতিবাদ নয় আমরা মূল্যবোধ কীভাবে হারিয়ে ফেলছি ৷ অথবা কোনও যুদ্ধ যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের স্পর্ষ না করছে আমরা বুঝতে পারি না ৷ সেই বিষয়গুলি বেশি করে তুলে ধরা হয়েছে ৷
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় কবিতা উপস্থাপনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
ভীষণই ভালো ৷ আমার মনে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলি থেকে যা অভিজ্ঞতা তা মনে প্রতিফলিত হয়েছে ৷ আমি 2014 সালে প্রথম গিয়েছিলাম ৷ এখনও পর্যন্ত 40-এর বেশি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেছি ৷ কলকাতা আন্তজার্তিক উৎসব যেটা আমরা চালু করেছিলাম সেটাও ভীষণভাবে মানা হয় পুরো আন্তর্জাতিক পৃথিবীতে ৷
অনেকে আজকাল বলে থাকেন কবিতা আজকাল পড়ে না- এইরকম শুনে থাকলে কী বলবেন ?
তারা নিজেরা পড়ে না তাই বলে থাকে সবাই ৷ কবিতা এখন প্রচুর পরিমানে বেড়ে গিয়েছে ৷ সেটা ম্যাগাজিন হোক বা কোনও অনুষ্ঠান ৷
কবিতা লেখার বাইরে, ব্যক্তিগত জীবন কীভাবে কাটানো হয় ?
সবার যেমন চলে সেরকমই আমারও চলে ৷ সবসময় তো কবিতা লিখি না ৷ রাতের বেলা মুভি দেখতে ভালো লাগে ৷ সবরকম সিনেমাই দেখি ৷ মন ফ্রি রাখার জন্য দরকার ৷ সবসময় একটানা কবিতা লেখা যায় না ৷