ওয়াশিংটন, 19 মার্চ: নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটতে নারাজ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৷ পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেন না তিনি ৷ তবে সাময়িকভাবে 30 দিন ইউক্রেনের শক্তিকেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ চালানো হবে না ৷ এমনটাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ৷ অর্থাৎ, শক্তিকেন্দ্র ছাড়া ইউক্রেনের বাকি জায়গাগুলিতে হামলা জারি রাখবে ক্রেমলিন ৷ যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিলেন ৷ কিন্তু, পুতিনের থেকে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে এখনও কোনও সাড়া পেলেন না ট্রাম্প ৷
মঙ্গলবার ট্রাম্প ও পুতিন দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলেন ৷ দু'দেশের রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয় ৷ সেখানেই ট্রাম্পকে ইউক্রেনের শক্তিকেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুতিন বলে জানা গিয়েছে হোয়াইট হাউস সূত্রে ৷ তবে পুতিন সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হননি ৷ অর্থাৎ, ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালিয়ে যাবে রাশিয়া ৷
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপকে হোয়াইট হাউস প্রথম ধাপ হিসাবে বর্ণনা করেছে ৷ ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে, এর ফলে কৃষ্ণ সাগরে একটি সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি এবং অবশেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পুরোপুরি ও স্থায়ী সমাপ্তি ঘটবে । কিন্তু, শান্তি চুক্তির জন্য পুতিন যে শর্ত দিয়েছেন, তিনি তাঁর সেই শর্ত থেকে সরে এসেছেন বলে এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি ৷ পুতিনের শর্তগুলির তীব্র বিরোধিতা করছে কিয়েভ । আর তাই পুতিন ও ট্রাম্পের ফোনে কথোপকথন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয় ৷ তারপরে শহরে বিস্ফোরণ ঘটে । স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা সেখানকার সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা জানান ৷
ক্রেমলিনের দাবি, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের সময় পুতিন ইউক্রেনে বিদেশি সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধের দাবি ফের তুলে ধরেন । তবে, মঙ্গলবার ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তাঁদের আলোচনায় এই বিষয়টি উত্থাপনের কথাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন, "আমরা সাহায্য নিয়ে মোটেও কথা বলিনি ।"
এদিকে রাশিয়া আরও চায়, ইউক্রেন চারটি অঞ্চল থেকে তার সেনা প্রত্যাহার করুক, যেগুলো মস্কো কখনওই পুরোপুরি দখল করতে পারেনি এবং ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের সম্ভাবনা ত্যাগ করুক এবং সেনাবাহিনীর সংখ্যা তীব্রভাবে কমিয়ে আনুক । ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তির দিকে পরিচালিত করে এমন যেকোনও প্রস্তাবের জন্য রাজি ইউক্রেন ৷ তবে আলোচনায় পূর্ণ স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন তিনি ।
জেলেনস্কি বলেছেন, "পুতিন এবং ট্রাম্প কী বিষয়ে একমত হয়েছেন সে সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে হবে ৷ কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চই আমাদের জানানো হবে ৷ অংশীদাররা আমাদের সঙ্গেও সবকিছু নিয়ে আলোচনা করবে ।" তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করার পুতিনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ ইউক্রেনকে দুর্বল করে দেবে । তিনি আরও বলেছেন, "এই যুদ্ধে দুটি পক্ষ রয়েছে - রাশিয়া এবং ইউক্রেন । আমার মতে, ইউক্রেন ছাড়া আলোচনার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না ।"
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এই মাসের শুরুতে কৃষ্ণ সাগর ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং বন্দিদের মুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন । ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে মঙ্গলবারের আলোচনার পর রাশিয়ার 30 দিন শক্তিকেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ না চালানোর বিষয়ে সম্মত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধের অবসানের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখা করেছেন ।
ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "আমরা সমস্ত জ্বালানি ও পরিকাঠামোর বা শক্তিকেন্দ্রগুলির উপর তাৎক্ষণিক হামলা থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছি ৷ এই বোঝাপড়ার সঙ্গে আমরা দ্রুত একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কাজ করব ৷" ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন যে রাশিয়া ও ইউক্রেন বুধবার 175 জন করে যুদ্ধবন্দিকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত এবং রাশিয়া 23 জন গুরুতর আহত সেনাকেও ইউক্রেনের হাতে তুলে দেবে ৷