নিউইয়র্ক, 8 জুন: অভিবাসন দফতরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণ পূর্বের প্যারামাউন্ট শহর ৷ বিক্ষোভের মোকাবিলায় 24 ঘণ্টার মধ্যে সেখানে আমেরিকার দুর্ধর্ষ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৷ প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ নৌ-সেনা নামানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ৷
বাদ যাননি এফবিআই-এর ডিরেক্টর কাশ প্যাটেলও ৷ কয়েক ধাপ এগিয়ে তিনি প্রতিবাদীদের জেলে পাঠানোর হুঁমকি দিয়েছেন ৷ পাল্টা তাঁকে অবশ্য অনেকেই 2021 সালের 6 জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হওয়া হিংসার ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ৷
The federal government is taking over the California National Guard and deploying 2,000 soldiers in Los Angeles — not because there is a shortage of law enforcement, but because they want a spectacle.
— Gavin Newsom (@GavinNewsom) June 8, 2025
Don't give them one.
Never use violence. Speak out peacefully.
এদিকে প্রশাসনের এই সব পদক্ষেপে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর গেভিস নিউসম ৷ অভিবাসীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাশও ৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছে, "সরকারের এই কাজ আমরা সমর্থন করছি না ৷"
কোনও বৈধ নথি ছাড়া আমেরিকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের তাঁদের দেশে ফেরানো নিয়ে প্রথম থেকেই কঠোর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৷ দেশজুড়ে এই অভিযান চলছে ৷ আমেরিকার স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ অভিবাসীদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালায় দেশের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ৷ ট্রাম্প প্রশাসনের এই তল্লাশিকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্যারামাউন্ট শহর ৷ শুক্র-শনি দু'দিনের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে প্যারামাউন্ট ৷
— The White House (@WhiteHouse) June 8, 2025
ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর গেভিস নিউসম এবং মেয়র কারেন ব্যাশ অশান্ত লস অ্যাঞ্জেলেসকে সামলাতে অপারগ বলে তাঁদের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৷ তিনি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "যদি ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর গেভিস নিউসম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস তাঁদের কাজ ঠিকমতো করতে না পারেন, তাহলে সরকারই পদক্ষেপ করবে ৷ সবাই জানে তাঁরা এই কাজ পারবেন না ৷ কিন্তু যারা অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং লুট করছে, তাদের বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার সরকারই নেবে ৷"
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যারামাউন্টে কেউ মেক্সিকোর পতাকা দেখিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ৷ কেউ বা পুলিশ প্রশাসনকে দেখে স্লোগান দিচ্ছেন, 'এলএ ( লস অ্যাঞ্জেলেস) ছেড়ে বেরিয়ে যাও' ৷ শুক্রবার অবৈধ অভিবাসীদের হাতেনাতে ধরার অভিযানে এজেন্সির আধিকারিকদের সঙ্গে ধস্তধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা ৷ পুলিশও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট থেকে শুরু করে গ্রেনেড ছুড়ছে ৷ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে এই বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে 118 জনকে গ্রেফতার করেছে ৷
একটি বিবৃতিতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর জানায়, "এক হাজার বিক্ষোভকারী সংস্থার ভবন ঘিরে প্রতিবাদ করছে ৷ প্রতিবাদকারীরা আইসিই-র আধিকারিকদের হেনস্থা করছে ৷ ভবনের উপর হামলাও চালিয়েছে ৷" এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কমপক্ষে 2 হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আমেরিকায় প্রাকৃতি বিপর্যয়ের মোকাবিলায় এই দুর্ধর্ষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে ৷ লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের ঘটনায় ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাউকে মাস্ক পরতে দেওয়া হবে না ৷ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তরফে ক্রিস্টি নোয়েম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আইসিই'র আধিকারিকদের উপর হামলা করলে ফল ভালো হবে না ৷ আইনের আওতায় যত কঠোর শাস্তি দেওয়া যায়, তাই করা হবে ৷
Hit a cop, you’re going to jail… doesn’t matter where you came from, how you got here, or what movement speaks to you. If the local police force won’t back our men and women on the thin blue line, we @FBI will.
— FBI Director Kash Patel (@FBIDirectorKash) June 8, 2025
এদিকে শনিবার (আমেরিকার স্থানীয় সময়) রাতে এফবিআই-এর ডিরেক্টর কাশ প্যাটেল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, "পুলিশকে ছুঁলে জেলে যেতে হবে ৷ আপনি কোথা থেকে এসেছেন, কীভাবে এখানে এসেছেন অথবা এই আন্দোলন আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এগুোল কোনও ব্যাপার নয় ৷ স্থানীয় পুলিশ বাহিনী আমাদের মহিলা ও পুরুষদের বাঁচাতে না পারলে,এফবিআই সেটা করবে ৷"
তাঁর এই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই 2021 সালের 6 জানুয়ারি ক্যাপিটল হিংসার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ এই হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৷ ক্যাপিটল হিংসার সময় 140 জনেরও বেশি পুলিশ আধিকারিক আহত হয়েছিলেন ৷ 2020 সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ট্রাম্প ৷ এর পরের বছর 6 জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে বিক্ষোভে সামিল হন ট্রাম্পের সমর্থকরা ৷ সেদিন কার্যত তাণ্ডবলীলা চলেছিল মার্কিন সংসদ ভবনে ৷