ঢাকা, 24 মে: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদেই থাকছেন মুহাম্মদ ইউনূস ৷ গত কয়েকদিন ধরে তাঁর ইস্তফা নিয়ে জল্পনার মাঝে শনিবার দুপুরে হঠাৎ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডাকেন ইউনূস ৷ এই বৈঠকে শেষে সরকারের প্রেস উইং-এর তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয় ৷ অন্যদিকে পরিষদের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রধান উপদেষ্টার ইস্তফা প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন ৷ উনি বলেননি উনি পদত্যাগ করবেন ৷"
এদিন বৈঠকের শেষে এই বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস ৷ সরকারি তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ৷ এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে ৷ দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ । এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে। শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার উপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে । যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ৷"
Statement from the Advisory Council
— Chief Adviser of the Government of Bangladesh (@ChiefAdviserGoB) May 24, 2025
Dhaka, 24 May 2025: An unscheduled meeting of the Advisory Council was held today, Saturday, following the meeting of the Executive Committee of National Economic Council. The two-hour long meeting included detailed discussions on three… pic.twitter.com/7hnKZiXV1t
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে করিডোর করা নিয়ে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেশের সেনা প্রধান ওয়াকার উজ-জামানের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হয় ৷ যদিও সেনা প্রধান বারবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল তাঁর উদ্দেশ্যে নয় ৷ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করে দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্রুত সরকার গঠন করা হোক ৷ তিনি এটাই চান ৷
গত 8 অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৷ তাঁর নেতৃত্ব দেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস ৷ এরপর থেকেই সেনা প্রধানের ওয়াকারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের মতপার্থক্য তৈরি হয় ৷ সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনোর জন্য বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে করিডোর তৈরির প্রস্তাব দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জ ৷ এই প্রস্তাব ঘিরে দুই প্রধানের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয় ৷
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির প্রধান নাহিদ ইসলাম ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করতে যান । বৈঠক শেষে নাহিদ বলেন, "আমরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্যরের (ইউনূস) পদত্যাগের খবর পাচ্ছি । তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আমি স্যরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম ৷ স্যর জানান, তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছেন । তাঁর মনে হচ্ছে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাঁর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় । বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলি একমত হচ্ছে না বলেই তিনি এমন কথা ভাবছেন ।"