ডাকা, 18 সেপ্টেম্বর: দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়িয়ে দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৷ দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি এবং 'নাশকতামূলক' কাজকর্ম প্রতিরোধ করতে সেনাকে দু'মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা দেওয়া হল ৷ মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ ৷ সেখানে সাফ জানানো হয়, অবিলম্বে কার্যকর করা হবে এই নির্দেশ ৷
বিবৃতি অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকের হাতে থাকবে এই বিশেষ ক্ষমতা ৷ বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির 17 নম্বর ধারা অনুযায়ী এই ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ তার জেরে পুলিশের মতোই কাউকে গ্রেফতার করা থেকে শুরু করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার অধিকার থাকবে সেনা জওয়ানদের কাছে ৷ এমনকী, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে বা এমন কোনও প্রয়োজনীয় অবস্থায় গুলিও চালাতে পারবেন তাঁরা।
সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, "এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিবেশ রয়েছে ৷ এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷" তিনি বিশ্বাস করেন, সেনা ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক উপদেষ্টার মতে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন ৷
উল্লেখ্য, 5 অগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাস্তায় সেভাবে দেখা যাচ্ছে না পুলিশ কর্মীদের ৷ আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে বাংলাদেশ জনতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশ কর্মীদের ৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাঁদের উপর হামলা চালানো হয় ৷ সেই ঘটনার জেরে 6 অগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা করে পুলিশ বাহিনী ৷ অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর 10 অগস্ট ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয় । কিন্তু তারপরও কাজে ফেরেননি বহু পুলিশকর্মী ৷ এই আবহে মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলে জানান প্রাক্তন সচিব আবু আলম । তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি এই পদক্ষেপটি সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা উন্নতি ঘটাবে ৷"
প্রসঙ্গত, এর আগেও সেনার হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে ৷ 2001 সালে ক্ষমতায় ফেরার কিছুদিন পরই 'অপারেশন ক্লিন হান্ট' চালু করেছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির নেত্রী খালেদা জিয়া ৷ যদিও সেই স্মৃতি আওয়ামি লিগের নেতাদের কাছে মোটেই মধুর নয় ৷ সেই সময়, আওয়ামী লিগের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে সেনা ও পুলিশের যৌথবাহিনী ৷ ফলে মঙ্গলবার রাতে ইউনুস সরকার একইভাবে সেনাকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ায় চিন্তায় আওয়ামী লিগের নেতা কর্মীরা ।