ঢাকা, 23 মার্চ: আওয়ামী লীগকে তাদের হারানো জমি ফিরে পেতে সাহায্য করছে বাংলাদেশের সেনা ৷ সদ্যগঠিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) এই অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ৷ এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনার পাশাপাশি সেনাকে নিজের ছাউনির মধ্যে থাকার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের এই নয়া রাজনৈতিক দলটি ৷
ছাত্রদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে সেনাবাহিনী পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। তাদের দাবি, এনসিপি'র এই অভিযোগ হাস্যকর এবং অপরিণত চিন্তা ভাবনার ফসল ৷ এদিকে এই অভিযোগকে হাতিয়ার করে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করে এনসিপি ৷ তাদের দাবি, উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার যে ছক বাংলাদেশ সেনা কষছে তা যে কোনও মূল্যে বানচাল করতে হবে ৷
নেট্রো নিউজকে একটি বিবৃতিতে বাংলাদেশের সেনা জানিয়েছে, "এটা একটা রাজনৈতিক চমক ৷ এই দাবি হাস্যকর ৷ কাঁচা হাতে লেখা গল্প ৷" পাশাপাশি সেনার তরফে এও জানানো হয়েছে, গত 11 মার্চ বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে দুই এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লা এবং সরজিস আলমের সাক্ষাৎ হয় ৷ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনার সরকারি বাসভবনে এই সাক্ষাৎ ছিল নিতান্ত সৌজন্যের ৷
এই বৈঠক প্রসঙ্গে সেনা বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেনা প্রধানের কার্যালয়ের তরফে দুই এনসিপি ছাত্রনেতাকে সেনার সদর কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছিল ৷ তাঁরা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি ৷ পরিবর্তে সেনা প্রধানের সরকারি বাসভবন 'সেনা ভবন'-এ যান দুই নেতা ৷
ফেব্রুয়ারির শেষে নয়া রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করেছে ৷ এই পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে কর্মরত ছিলেন ৷ তিনি পদত্যাগ করে এই দলের আহ্বায়ক পদে যোগ দেন ৷ বাংলাদেশের এই নয়া রাজনৈতিক দলটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ৷
আত্মপ্রকাশের এক মাস যেতে না যেতেই সেনার বিরুদ্ধে পথে নেমেছে এনসিপি ৷ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাসনাত আবদুল্লা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেনা ৷ এই অভিযোগে সেনা প্রধান ওয়াকারের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিলে আবদুল্লার কয়েকশো অনুগামী অংশ নেন ৷ তাঁরা সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন ৷ হাসিনা এবং তাঁর ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁসি দেওয়ার দাবি তোলেন ৷
এদিকে জুলাই-অগস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনের সময় হাসিনা সরকার সেনার সাহায্য চেয়েছিল ৷ পুলিশের সঙ্গে সেনাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদকারীদের মোকাবিলা করুক । এমনটাই চেয়েছিলেন মুজিব-তনয়া ৷ কিন্তু তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়নি সেনা ৷ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশের সেনা ৷ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার মাত্র কয়েক দিন আগে সেনা প্রধান জানিয়েছিলেন, এই সঙ্কটের সময় তাঁর বাহিনী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশে আছে।
দু'দিন আগে ছাত্রনেতা আবদুল্লা ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন ৷ সেখানে তিনি দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত হচ্ছে ৷ ভারতের সমর্থনে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে ফিরবে আওয়ামী লীগ ৷ এরপর গতকাল এনসিপি'র এই নেতা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে যাঁদের কাজকর্ম, তাঁরা সেখানেই থাকুন ৷ বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে তাঁরা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে বেরিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে, তা মেনে নেওয়া হবে না ৷" নাম না করলেও তিনি সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামানকেই নিশানা করেছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে ৷
আবদুল্লাকে সমর্থন করেছেন এনসিপি'র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ৷ তিনিও সরব হয়েছেন। জানিয়েছেন, সেনা বা অন্য কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান দেশের রাজনৈতিক কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ৷ তাদের সেই অধিকার নেই ৷ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে সেনা একেবারে নীরব ৷ তারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি ৷
সেনার বিরুদ্ধে তোলা এনসিপি'র এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক থেকে শুরু করে প্রাক্তন সেনা আধিকারিকরা ৷ জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে 16 বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় ৷ এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা নাহিদ-সহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে ৷ আন্দোলনের চাপে গত বছরের 5 অগস্ট বাংলাদেশে ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার ৷
আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁর দলের সদস্যদের কেউ কেউ দেশের মধ্যে আত্মগোপন করে রয়েছেন ৷ কেউ বা দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন ৷ এছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ সদস্যদের গ্রেফতার করে হাজতে পুরেছে ৷ দেশের অভ্যন্তরে, এমনকী বিদেশে থাকা দলের প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধেও খুন, রাহাজানির মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ দায়ের করেছে ইউনূস প্রশাসন ৷ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা।
অতি সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার, 20 মার্চ অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মুখ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন না ৷ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি দলকে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই ৷ কিন্তু ওই দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে খুন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করার মতো অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের বিচার হবে বাংলাদেশের আদালতে ৷" এমনকী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্য উপদেষ্টা ৷
এদিকে, আওয়ামী লীগ দেশে ফিরলে তাতে কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে বিরোধী বিএনপি ৷ শুক্রবার দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দলের তরফে জানানো হয়েছে, সরকার স্বচ্ছ থাকলে বিরোধী দলটি দেশে ফিরতেই পারে ৷ তাতে বিএনপি অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না ৷