কলকাতা, 17 মে: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত ও প্রযোজিত 'হামি' ছবির চাচা'জির কথা মনে আছে? সেই চরিত্রে অভিনয় করেন মাসুদ আখতার। যে চাচা'জি আগলে রাখত স্কুল গাড়ির সব বাচ্চাদের৷ আর বাচ্চাগুলোর কাছেও চাচাজি ছিল পরম প্রিয়। ভুলবশত তাকে যখন চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সেই দৃশ্যে চোখে জল আসেনি এমন বাঙালি দর্শক নেই। এহেন চাচা'জিকে এবার দেখা যাবে সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত 'সোনার কেল্লায় যকের ধন' ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
কী রকম চরিত্র? মাসুদ আখতার ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "এই ছবির মধ্যেও একজন বয়স্ক কাঠপুতলি বাবা আছে। আর সে সোনার কেল্লার আশেপাশে কাঠপুতুলের খেলা দেখায়। যারা গুপ্তধন খুঁজতে এসেছে তারা খবর পায় যে এই কাঠপুতলি বাবা সব জানে। তারা আমাকে ধরে মারধর করে। অবশেষে আমি ওদের গুপ্তধনের ব্যাপারে সবটা বলি। কোথায় আছে, কীভাবে এলো, কীভাবে যেতে হবে সেই জায়গায় এই জাতীয় সব কিছু। তারপর কী হয় সেটা ছবিটাতে আছি ৷ খুব ইন্টারেস্টিং একটা ক্যারেক্টার। আমরা যখন জয়সলমীরে শুটিং করতে গিয়েছি খুব ঠান্ডা ছিল তখন। কাজ ছাড়া আমরা তো রুমেই থাকতাম। আমাদের কোনও কষ্ট হয়নি কাজ করতে। খুব মজা করে কাজ হয়েছে। আয়োজন ভালো ছিল। টেকনিক্যাল টিমের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাতে হয়।"
শ্যাম বেনেগালের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শ্যাম বেনেগালের প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, "অনেক স্মৃতি আছে ওঁর সঙ্গে। এইটুকু সময়ে তা বলা সম্ভব নয়। পাঁচ-ছয়টা প্রজেক্ট করেছি আমি শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে। শেষ কাজ করলাম 'মুজিব'। ওই কাজের জন্য এক বছর ওঁর সঙ্গে ছিলাম। উনি আমাকে অভিনেতা হিসেবে চেনেন আমার 'নুক্কড়'-এ কাজ করার সময় থেকে। 1985-এ 'নুক্কড়' হয়। কাজের ফাঁকে কথা হলে বলতেন আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। এবার ইয়ং ডিরেক্টরদের সঙ্গে কাজ করো। আমিও বলতাম, হ্যাঁ পেলে করব। শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে বসিয়ে চা খাওয়াতেন, কত গল্প করতেন। ওঁর সঙ্গে প্রত্যেকটা সাক্ষাতে আমি সমৃদ্ধ হতাম। অনেক অজানাকে জেনে ফিরতাম। সব বিষয়ে জ্ঞান ছিল মানুষটার। পৃথিবী, প্রকৃতি সব জানতেন। সব বিষয়ে কথা বলতে পারতেন। শ্যাম বেনেগালের পাশে থাকা মানে একটা স্কুলে থাকা। "
'হামি' প্রসঙ্গে বলেন, "হামি খুব ইন্টারেস্টিং একটা ছবি ছিল। শিবপ্রসাদকে আমি ইয়ং ডিরেক্টর বলব। আমার সঙ্গে যে গানটা ছিল 'চাচাজি' ভোলার না। কয়েকটা বাচ্চা আমার সঙ্গে যা করত! কেউ কাঁধে উঠে পড়ত, কেউ কোলে চেপে বসত। আমাকে কাঁদিয়ে দিয়েছিল ওরা। খুব ভালো জার্নি ছিল ওটা। আমি বাংলায় আরও অনেক কাজ করতে চাই। আমি মুম্বইতেই নেটফ্লিক্স-এর জন্যই বেশি ব্যস্ত থাকি। ওখানে আমার নাটকের কাজও থাকে। কিন্তু আমি বাংলাতে আরও কাজ করতে চাই। বাংলায় কাজ করিনি তা নয়। তবে, অনেক কম। সৃজিতের, কৌশিকের সিনেমায় কাজ করেছি। কিছু বাংলা সিরিয়ালও করেছি। মনে পড়ছে না নামগুলো। রাজ চক্রবর্তীও একটা কাজের জন্য মেসেজ পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারিখ সমস্যা করায় কাজটা করতে পারিনি। তবে, ভালো চরিত্র পেলে আমি করতে রাজি সবসময়। "
প্রসঙ্গত, সিনেমা, থিয়েটার, মেগা সিরিয়াল সবেতেই অবাধ বিচরণ তাঁর বিগত তিন যুগ ধরে৷ সরাসরি যুক্ত থিয়েটার গ্রুপ 'আইপিটি এ'র সঙ্গে। হিন্দি ধারাবাহিক 'নুক্কড়', 'ইন্তেজার', 'মীর্জা গালিব', 'স্বভিমান' তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে কয়েকটি। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়, শ্যাম বেনেগাল, গুলজার, কুন্দন শাহ, গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেনের মতো তাবড় তাবড় পরিচালকদের সঙ্গে।
রোনাল্ড জোফে, স্ক্রিস্টফার মোরাহানের মতো আন্তর্জাতিক মানের পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। ছবির তালিকায় 'পার', 'কাহা কাহা সে গুজর গয়ে', 'আগমন', 'লেকিন', 'সর্দারি বেগম', 'বাঘ বাহাদুর', 'ফির হি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি', 'রাজ', 'দেব', 'চলতে চলতে', 'ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর', 'ওম শান্তি ওম', 'পিপলি লাইভস', 'পাটিয়ালা হাউজ', 'কাহানি', 'রাম লীলা'-তে তাক লাগানো অভিনয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন তিনি।