কলকাতা, 19 এপ্রিল: বড় পর্দায় বেশ অনেকদিন পরেই আবার সাহিত্য পাতার চরিত্রদের আগমন। পরিচালক কাকলি ঘোষ এবং অভিনব মুখোপাধ্যায় বানাচ্ছেন নতুন বাংলা ছবি ‘ভূতপূর্ব’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'মণিহারা', বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তারানাথ তান্ত্রিক' এবং মনোজ সেনের ‘শিকার’ শীর্ষক গল্পগুলিকে এক সূত্রে বেঁধে 'ভূতপূর্ব' বানাচ্ছেন পরিচালকদ্বয়।
অভিনয়ে কারা?
রূপাঞ্জনা মিত্র (মাতু পাগলি), সুহোত্র মুখোপাধ্যায় (পূর্ণেন্দু), সত্যম ভট্টাচার্য (ফণীভূষণ), অমৃতা চট্টোপাধ্যায় (মণিমালিকা), সপ্তর্ষি মৌলিক (তারানাথ তান্ত্রিক), সন্দীপ্তা সেন (তিলোত্তমা) ।
'তারানাথ তান্ত্রিক'-এ মাতুর চরিত্রে রূপাঞ্জনা মিত্র
'তারানাথ তান্ত্রিক' গল্পের অন্যতম চরিত্র মাতু পাগলি। পাগলি বেশে থাকলেও মাতুর চরিত্রের মধ্যে রয়েছে গভীরতা। এই নতুন কাজ নিয়ে রূপাঞ্জনা বলেন, "মাতু তো এক জন্মে তার আরাধ্য দেবীকে পায়নি। তাই বারবার তার জন্ম হয়েছে। মাতুর কাছেই আসে তারানাথ তান্ত্রিক। আমরা অজয় নদীর তীরে শুটিং করেছি। অজয় নদীর তীরে তো আজও মানুষ পোড়ানো হয়। সেখানে অন্ধকারেও শুটিং করেছি। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হল এই কাজের মাধ্যমে। তার উপরে অনেকদিন পর একটা সাহিত্যধর্মী ছবি বড় পর্দায়। তার সঙ্গে নিজে যুক্ত থাকায় বেশ ভালো লাগছে। মাতু খুব ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র। তাকে বুঝতে আমার বেশ মজা লেগেছে।"
রূপাঞ্জনা আরও বলেন, "আমাদের সিনেম্যাটিক যুগটা ঐতিহাসিক ছিল। ফলে সাহিত্যধর্মী গল্প নিয়ে সেই সময়ে কাজ কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বাংলা সাহিত্য ঘুরে ফিরে এসেছে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে। যার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর 'চোখের বালি'র মাধ্যমে। আমাদের বাংলা সাহিত্যের যে খনি আছে তা দর্শকের সামনে আসা উচিত। দর্শকের চাক্ষুষ করা উচিত। একইভাবে দৃশ্যের প্রয়োজনে শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা হাওড়া ব্রিজ নয়, আমাদের কাছে আছে কত ছোট ছোট সুন্দর গ্রাম। সেগুলোও দেখানো উচিত বাংলা সিনেমায়।"
ছবির গল্প
ছবির গল্পে ষাটের দশকের শেষ ভাগের সময়কাল তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যায়, বিভূতিভূষণের বাড়িতে এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় দুই ব্যক্তি আসে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় নীলকণ্ঠ ও শশীধর নামে। তিনজনের একত্রে আড্ডা শুরু হয়। এই আড্ডায় নীলকন্ঠ, বিভূতিভূষণ, শশীধর আলাদা আলাদা তিনটি কাহিনি শোনায়।
নীলকণ্ঠ ফনিভূষণ সাহা এবং তার স্ত্রী মনিমালিকার গল্প বলে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'মণিহারা'। মনিহারা' গল্পের দিকে তাকালে দেখা যায় বনেদি ব্যবসায়ী পরিবারের শেষ বংশধর ফনীভূষণ সাহা। ফনীভূষণ প্রেমিক এবং স্ত্রৈন। আর মণিমালিকা ভীষণ স্বার্থপর, গয়নার প্রতি তার অসীম লালসা, স্বামীর প্রতি নেই তার একটুও ভালোবাসা। মণিমালিকার গয়নার প্রতি এই অদম্য আকর্ষণ তার আত্মাকে মৃত্যুর পরেও রেখেছিল অতৃপ্ত এবং ফণীভূষণের মণির প্রতি এক অসহায় প্রেম ও অমোঘ আকর্ষণই ছিল তার মৃত্যুর কারণ।
এরপর বিভূতিভূষণ বলে তার এক অভিজ্ঞতার কথা। যে অভিজ্ঞতা ঘিরে রয়েছে 'তারানাথ তান্ত্রিক'। এক সাধুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী স্বপ্নে ইশারা পাওয়ার পর গৃহত্যাগ করে তারানাথ পৌঁছেছিল বীরভূমের এক গ্রামে। সেখানে তার দেখা হয় মাতু পাগলির সঙ্গে। সেই পাগলির কাছ থেকে দীক্ষা নেবার বাসনায় এক অনন্য অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায় তারানাথ, কিন্তু ভোগ ও ত্যাগের মাঝে থাকায় সাধনার আকাঙ্ক্ষা তারানাথের অতৃপ্ত থেকে গেছে, তবে পাগলি তাকে কিছু শক্তি দান করেন।
এরপর শশীধর বলে পূর্ণেন্দুর কথা। এখানে আসে 'শিকার' গল্পটি। ইন্দো চীনা যুদ্ধের পর শহরে চোরাচালানকারীদের রমরমা শুরু হয়। এই ব্যবসার অন্যতম ব্যবসায়ী নটবর দত্ত। তার অধীনে কাজ করত পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। পূর্ণেন্দু ছিল সুদর্শন ও উচ্চশিক্ষিত তবে যে কোনও অপরাধমূলক কাজে ছিল সিদ্ধহস্ত। নটবর দত্ত পূর্ণেন্দুকে একজন সুন্দরী বিধবা তিলোত্তমাকে জপিয়ে তাদের বনেদী বাড়ির সিন্দুক থেকে এক ঠাকুরের মূর্তিতে বসানো বহুমূল্যের রত্ন চুরি করার কাজ দেয়। পূর্ণেন্দুর আগেও একজন বাহুবলীকে পাঠিয়েছিল নটবর দত্ত, কিন্তু সে কাজটা শেষ করতে ব্যর্থ হয় এবং তার রহস্যজনকভাবে মৃত্যু ঘটে।
পূর্ণেন্দু সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়ে সেই কাজে নামে এবং ক্রমে সফল হতে থাকে তবে শেষ পর্যায়ে এসে পূর্ণেন্দু যে পরিণতির সম্মুখীন হয় সেই পরিণতির কথা ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে শশীধরের গল্প শেষ হয়। তৃতীয় গল্পের শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে রাত্রিও শেষ হয় এবং তিনজনের আড্ডার সমাপ্তি হয়। তিনটি কাহিনিকে এক সুতোয় বেঁধেছে যে গল্প সেটাই চতুর্থ গল্প।