ETV Bharat / entertainment

ছবির মতো সুন্দর-সুদর্শন অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের মৃত্যু ছিল ভয়াবহ-মর্মান্তিক - REMEMBERING CHHABI BISWAS

দুমড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে যখন রক্তাক্ত অভিনেতাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকরা জানান সব শেষ ৷

remembering Chhabi Biswas on his death anniversary
ছবির মতো সুন্দর ছবি বিশ্বাস (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : June 11, 2025 at 11:49 AM IST

3 Min Read

হায়দরাবাদ, 11 জুন: ঠিক 63 বছর আগে আজকের দিনে আরজি কর হাসপাতালে লোকে লোকারণ্য ৷ মুখে মুখে ফিরছে এক খ্যাতনামা অভিনেতা মারাত্মক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ৷ তখনও অনেকে বুঝে উঠতে পারছে না কে তিনি ? মধ্যমগ্রামের কাছে গঙ্গানগরে পুরনো যশোর রোডে উল্টো দিক থেকে আসা ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে সাদা অ্যাম্বাসডরের। দুমড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে যখন রক্তাক্ত অভিনেতাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকরা জানান সব শেষ ৷ বাংলা সিনেমা জগতে 11 জুন অবসান ঘটল একটা যুগের ৷ সিনেপর্দায় উত্তম-সুচিত্রা-সাবিত্রীর পিতৃবিয়োগ ৷ প্রয়াত হন ছবি বিশ্বাস (Chhabi Biswas) ৷

অনেক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণায় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, "অভিনয়ের সময় তাঁর মতো অমন রাজীয় উপস্থিতি আর কারও মধ্যে দেখিনি ৷ ছয় ফুচ দুই ইঞ্চি উচ্চতা, সুপুরুষ, গৌরবর্ণ, হাবভাবে সবার থেকে আলাদা ৷" সেই সুপুরুষ আজকের দিনেই 1962 সালে অকালে প্রাণ হারান ৷

ছবি বিশ্বাস কলকাতার নিবাসী ছিলেন। বাবার নাম ভূপতিনাথ। ছবি বিশ্বাসের আসল নাম ছিল শচীন্দ্রনাথ। বারাসতের ছোট জাগুলিয়ায় জমিদারি ছিল দে বিশ্বাস পরিবারের। 'দে' পদবি আর'বিশ্বাস'টা নাকি তাঁর পূর্বপুরুষ পেয়েছিলেন আকবর বাদশাহর কাছ থেকে। ছবি বিশ্বাসের বাবা ভূপতিনাথ দে বিশ্বাসের চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শচীন্দ্রনাথ। তার যখন এক বছর বয়স তখন মায়ের মৃত্যু হয়। মা আদর করে ডাকতেন 'ছবি' নামে। সেই নামটাই রয়ে যায় আজীবন।

শিল্পীর সিনেমায় জার্নি

জানা যায়, ছবি বিশ্বাস (Chhabi Biswas) একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৷ সামনেই ছিল উত্তরা সিনেমা, তখনকার দিনে যার নাম ছিল কর্নওয়ালিস ক্রাউন সেখানে বুকিংয়ে বসেছিলেন পরিচালক প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি সুদর্শন পুরুষকে ডেকে সিনেমা করবেন কি না, জিজ্ঞাসা করেন ৷ থিয়েটার চর্চা থাকার দরুণ ছবি বিশ্বাস এককথায় রাজি হয়ে যান ৷ সেই সময় পরিচালক তিনকড়ি চক্রবর্তী বানাচ্ছিলেন অন্নপূর্ণার মন্দির ৷ সেই ছবিতেই অভিনয় করেন ছবি বিশ্বাস ৷ কালী ফিল্মসের ব্যানারে 1936 সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অন্নপূর্ণার মন্দির ৷

তাঁর অভিনীত সিনেমার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) পরিচালনায় 'জলসাঘর', 'দেবী' (Devi), 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' (Kanchenjunga ), তপন সিংহের পরিচালনায় 'কাবুলিওয়ালা' (Kabuliwala) সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের অভিনয় দেখে আজ শিক্ষা নেন নবীশরা ৷ এছাড়াও পরশ পাথর, মায়ামৃগ, সপ্তপদী, ক্ষুধিত পাষাণ, বিরাজ বৌ, সবার উপরে, ওরা থাকে ওধারে, হসপিটাল, সূর্য শিখা-র মতো অসংখ্য সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের অভিনয়-ব্যক্তিত্ব, ব্যারিটোন ভয়েস মুগ্ধ করে দর্শকদের ৷

থিয়েটারে ছবি বিশ্বাস

অভিনেতার অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি মদন মিত্র লেনে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের বৈঠকখানায় বারবেলা বৈঠক ক্লাবে ৷ তখন ছিল শখের অভিনয় ৷ এরপর 1938 সালে ছবি বিশ্বাসকে মিনার্ভা থিয়েটারে ডেকে নিয়ে যান নাট্য পরিচালক সতু সেন ৷ নাট্যনিকেতন মঞ্চে পেশাদারি শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ হয় ছবি বিশ্বাসের ৷ তিনি মঞ্চঅভিনয়েও সুখ্যাতি অর্জন করেন ৷ সমাজ, ধাত্রীপান্না, মীরকাশিম, দুইপুরুষ, বিজয়া প্রভৃতি নাটকে তাঁর অভিনয় উল্লেখযোগ্য। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি বিশ্বাস প্রতিকার (1944) এবং যার যেথা ঘর (1949)নাটক পরিচালনা করেছেন ৷

কীভাবে অভিনেতার মৃত্যু ?

11 জুন অ্যাম্বাসাডরে চেপে ছবি বিশ্বাস যাচ্ছিলেন বারাসতের ছোট জাগুলিয়ার বাড়ি। তাঁর সঙ্গে অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়েরও যাওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু রেডিয়োতে রিহার্সাল আছে বলে ভানু বাবু যান নি। এরপর নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ির পথে যাচ্ছিলেন ৷ মধ্যমগ্রামের কাছে গঙ্গানগরে পুরনো যশোর রোডে উল্টো দিক থেকে আসা ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ছবি বিশ্বাসের অ্যাম্বাসডরের। আরজিকর হাসপাতালে অভিনেতাকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুরস্কার

অভিনেতার ঝুলিতে যেসব বিখ্যাত সিনেমা রয়েছে এখনকার সময়ে হলে বাড়িতে পুরস্কার রাখার জায়গা হয়তো কম পড়ত ৷ তবে সেই সময় অর্থাৎ 1959 সালে'সঙ্গীত নাটক একাডেমী' তাঁকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান জানায়।

হায়দরাবাদ, 11 জুন: ঠিক 63 বছর আগে আজকের দিনে আরজি কর হাসপাতালে লোকে লোকারণ্য ৷ মুখে মুখে ফিরছে এক খ্যাতনামা অভিনেতা মারাত্মক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ৷ তখনও অনেকে বুঝে উঠতে পারছে না কে তিনি ? মধ্যমগ্রামের কাছে গঙ্গানগরে পুরনো যশোর রোডে উল্টো দিক থেকে আসা ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে সাদা অ্যাম্বাসডরের। দুমড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে যখন রক্তাক্ত অভিনেতাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকরা জানান সব শেষ ৷ বাংলা সিনেমা জগতে 11 জুন অবসান ঘটল একটা যুগের ৷ সিনেপর্দায় উত্তম-সুচিত্রা-সাবিত্রীর পিতৃবিয়োগ ৷ প্রয়াত হন ছবি বিশ্বাস (Chhabi Biswas) ৷

অনেক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণায় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, "অভিনয়ের সময় তাঁর মতো অমন রাজীয় উপস্থিতি আর কারও মধ্যে দেখিনি ৷ ছয় ফুচ দুই ইঞ্চি উচ্চতা, সুপুরুষ, গৌরবর্ণ, হাবভাবে সবার থেকে আলাদা ৷" সেই সুপুরুষ আজকের দিনেই 1962 সালে অকালে প্রাণ হারান ৷

ছবি বিশ্বাস কলকাতার নিবাসী ছিলেন। বাবার নাম ভূপতিনাথ। ছবি বিশ্বাসের আসল নাম ছিল শচীন্দ্রনাথ। বারাসতের ছোট জাগুলিয়ায় জমিদারি ছিল দে বিশ্বাস পরিবারের। 'দে' পদবি আর'বিশ্বাস'টা নাকি তাঁর পূর্বপুরুষ পেয়েছিলেন আকবর বাদশাহর কাছ থেকে। ছবি বিশ্বাসের বাবা ভূপতিনাথ দে বিশ্বাসের চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শচীন্দ্রনাথ। তার যখন এক বছর বয়স তখন মায়ের মৃত্যু হয়। মা আদর করে ডাকতেন 'ছবি' নামে। সেই নামটাই রয়ে যায় আজীবন।

শিল্পীর সিনেমায় জার্নি

জানা যায়, ছবি বিশ্বাস (Chhabi Biswas) একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৷ সামনেই ছিল উত্তরা সিনেমা, তখনকার দিনে যার নাম ছিল কর্নওয়ালিস ক্রাউন সেখানে বুকিংয়ে বসেছিলেন পরিচালক প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি সুদর্শন পুরুষকে ডেকে সিনেমা করবেন কি না, জিজ্ঞাসা করেন ৷ থিয়েটার চর্চা থাকার দরুণ ছবি বিশ্বাস এককথায় রাজি হয়ে যান ৷ সেই সময় পরিচালক তিনকড়ি চক্রবর্তী বানাচ্ছিলেন অন্নপূর্ণার মন্দির ৷ সেই ছবিতেই অভিনয় করেন ছবি বিশ্বাস ৷ কালী ফিল্মসের ব্যানারে 1936 সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অন্নপূর্ণার মন্দির ৷

তাঁর অভিনীত সিনেমার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) পরিচালনায় 'জলসাঘর', 'দেবী' (Devi), 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' (Kanchenjunga ), তপন সিংহের পরিচালনায় 'কাবুলিওয়ালা' (Kabuliwala) সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের অভিনয় দেখে আজ শিক্ষা নেন নবীশরা ৷ এছাড়াও পরশ পাথর, মায়ামৃগ, সপ্তপদী, ক্ষুধিত পাষাণ, বিরাজ বৌ, সবার উপরে, ওরা থাকে ওধারে, হসপিটাল, সূর্য শিখা-র মতো অসংখ্য সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের অভিনয়-ব্যক্তিত্ব, ব্যারিটোন ভয়েস মুগ্ধ করে দর্শকদের ৷

থিয়েটারে ছবি বিশ্বাস

অভিনেতার অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি মদন মিত্র লেনে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের বৈঠকখানায় বারবেলা বৈঠক ক্লাবে ৷ তখন ছিল শখের অভিনয় ৷ এরপর 1938 সালে ছবি বিশ্বাসকে মিনার্ভা থিয়েটারে ডেকে নিয়ে যান নাট্য পরিচালক সতু সেন ৷ নাট্যনিকেতন মঞ্চে পেশাদারি শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ হয় ছবি বিশ্বাসের ৷ তিনি মঞ্চঅভিনয়েও সুখ্যাতি অর্জন করেন ৷ সমাজ, ধাত্রীপান্না, মীরকাশিম, দুইপুরুষ, বিজয়া প্রভৃতি নাটকে তাঁর অভিনয় উল্লেখযোগ্য। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি বিশ্বাস প্রতিকার (1944) এবং যার যেথা ঘর (1949)নাটক পরিচালনা করেছেন ৷

কীভাবে অভিনেতার মৃত্যু ?

11 জুন অ্যাম্বাসাডরে চেপে ছবি বিশ্বাস যাচ্ছিলেন বারাসতের ছোট জাগুলিয়ার বাড়ি। তাঁর সঙ্গে অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়েরও যাওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু রেডিয়োতে রিহার্সাল আছে বলে ভানু বাবু যান নি। এরপর নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ির পথে যাচ্ছিলেন ৷ মধ্যমগ্রামের কাছে গঙ্গানগরে পুরনো যশোর রোডে উল্টো দিক থেকে আসা ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ছবি বিশ্বাসের অ্যাম্বাসডরের। আরজিকর হাসপাতালে অভিনেতাকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুরস্কার

অভিনেতার ঝুলিতে যেসব বিখ্যাত সিনেমা রয়েছে এখনকার সময়ে হলে বাড়িতে পুরস্কার রাখার জায়গা হয়তো কম পড়ত ৷ তবে সেই সময় অর্থাৎ 1959 সালে'সঙ্গীত নাটক একাডেমী' তাঁকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান জানায়।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.