কলকাতা, 20 মে: নতুন ডিরেক্টরস গিল্ড ছেড়ে পুরনো গিল্ডে ফিরছেন অভিনেত্রী-পরিচালক মানসী সিনহা। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনা মানহানি মামলা থেকেও নাম সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকমণ্ডলীর সমস্যার শুরু যাঁকে কেন্দ্রে রেখে সেই রাহুল মুখোপাধ্যায়ও নাম সরিয়ে নিয়েছেন স্বরূপের বিরুদ্ধে আনা মানহানি মামলা থেকে। তিনি নিজের নতুন ছবি 'মন মানে না'র কাজও শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। রাহুল ছাড়াও এই তালিকায় নাম আছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়, রাজ চন্দের। আর এবার মানসী সিনহা।

কেন সরে গেলেন তিনি? ইটিভি ভারত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর সাফ জবাব, "আমি পুরনো পরিচালক গিল্ডে জয়েন করার জন্য আবেদন করেছি। কার্ড নম্বর পাইনি এখনও। আর স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পরিচালকরা যে মানহানি মামলা করেছেন আমি তার থেকেও নিজের নাম তুলে নিয়েছি। তার কারণ আমার মনে হয় লড়াই করার সেই ক্ষমতা বা বয়স কোনওটাই আমার আর নেই। স্বল্পবয়সি ছেলেপুলেরা লড়াই করছে। তারা যদি তাদের দাবি আদায় করতে পারে করবে। যদি সেই দাবি ঠিক হয় তা হলে তারা নিশ্চয়ই সুবিচার পাবে। তা হলে তার ফল আমরা সিনিয়ররাও ভোগ করব। প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করব তখন ওদের। আর তারা যদি ভুল হয় তা হলে একদিন না একদিন তাদের পিছিয়ে আসতে হবে। তবে এই লড়াইতে আমি আর শামিল হতে চাই না। কাজে মন দিতে চাই আমি।"
তিনি আরও বলেন, "ফেডারেশন কিংবা সিনিয়র জুনিয়র কোনও টেকিনিশিয়ানই আমার সঙ্গে আজ অবধি কোনওরকম খারাপ ব্যবহার করেননি। যেটা দেখছি সেটা হল এই জটিলতাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইগোর লড়াইতে পরিণত হয়েছে এই লড়াই। আমি কোনও লড়াইতে নেই আর।"
মানসী আরও বলেন, "লোকে হয়ত আমাকে ভুল বুঝবেন। অনেকে দেখলাম লেখাও শুরু করে দিয়েছেন যে আমি নাকি তৃণমূলে জয়েন করছি। হতে পারে ফেডারেশন তৃণমূলের। আমি জানি না। তবে আদ্যন্ত বামপন্থী হওয়া সত্ত্বেও এত বছর এই ফেডারেশনের অধীনেই কাজ করে গেলাম। আর্টিস্ট ফোরাম যখন ফেডারেশনের আন্ডারে ছিল তখনও কাজ করেছি। মানুষের বলার স্বাধীনতা আছে তাই বলছেন। আমাকে ভালোবেসে বলছেন। আমি আর লড়ার ক্ষমতা পাচ্ছি না। আমার একটা পরিবার আছে। সেখানে আমার একটা কমিটমেন্ট আছে। প্রোডিউসারদের প্রতি আমার একটা কমিটমেন্ট আছে। তাঁদের প্রতি আমি অবিচার করতে পারি না। তাঁদের কারওকে মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিতে চাইছি না। কোনও কোনও সময় অনেককিছুর জন্য অনেককিছুই তো কম্প্রোমাইজ করতে হয়। তবে এটা নিয়ে যে ফেডারেশন আমার উপরে কোনও চাপ সৃষ্টি করেছে তা নয়। এই নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে আমার কোনও কথাও হয়নি। একের পর এক খবর আসা আর একের পর এক সিনিয়রের সরে যাওয়া এগুলো আমি আর নিতে পারছি না। আমার মনোবল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার ওয়ান লাইন স্টেটমেন্ট- ' আমি আর এই লড়াইতে থাকতে পারছি না'। এই দড়ি টানাটানি আর নিতে পারছি না। সবার মধ্যে চাপা টেনশন চলছে। এটা আর দেখতে পারছি না। আমি চাই ইন্ডাস্ট্রিটা কোনও না কোনওভাবে ভালো হোক। খারাপ আর মানতে পারছি না।"
প্রসঙ্গত, পরিচালক গিল্ড বনাম ফেডারেশনের কাজিয়া এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন। সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিংহ আরও এক বার নির্দেশ দিয়েছেন পরিচালকদের কাজে, স্বাধীনতায় যেন কোনওভাবে হস্তক্ষেপ না করা হয়। পাশাপাশি, রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সচিবের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারবেন। এই ব্যাপারে সমস্যার মুখে পড়লে পরিচালকেরা তাঁর দ্বারস্থ হতে পারবেন সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে আদালতে তাঁকে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে হবে। তার পরেও সমস্যা না মিটলে চাইলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারবেন পরিচালকেরা। রাজ্যের উচ্চ আদালতের এই নির্দেশের ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পরিচালক সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, বিদুলা ভট্টাচার্য-সহ অভিযোগকারী পরিচালকেরা। এরই মাঝে সরে দাঁড়ালেন মানসী সিনহা।
শুটিং বন্ধ টলিপাড়ায়, ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরে পরিচালকদের তোপ স্বরূপ বিশ্বাসের