হায়দরাবাদ, 23 সেপ্টেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও দেবী আবার কখনও সকলের মা বলে জনসমক্ষে অভিহিত করেছেন সুরকারা, গীতিকার কবীর সুমন ৷ আরজি কর নিয়ে যখন রাজ্য উত্তাল তখন সোশাল মিডিয়ায় চুপ থাকেননি 'জাতিস্মর' শিল্পী ৷ নিজেকে 'চটিচাটা' বলে উল্লেখ করতেও দ্বিধা করেননি ৷ এরমধ্যেই জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন-আন্দোলন উঠে গিয়েছে ৷ তা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শিল্পী ৷ একনজরে দেখে নেওয়া যাক আরজি কর আবহে কবীর সুমনের সমালোচিত সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট ৷
- 17 অগস্ট- এদিন ইদি আর্দি ইমারৎ খেসারৎ, দলিল দস্তাবেজ নামে এক কবুলনামা পেশ করেন কবীর সুমন ৷ সেখানে তিনি লেখেন, "আমার বেজন্ম আর বেসুরেরনামে আমি কবুল করছি যে আমি চটিচাটা। চটিচাটা ছিলাম আছি থাকব।আমি এক সর্বজনস্বীকৃত চটিচাটা, এক গর্বিত চটিচাটা ৷" এই পোস্ট সামনে আসার পর নেটপাড়ায় তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে ৷ এমনকী, শিল্পী অনিন্দ্য বোসও সুমনের সমালোচনায় সরব হন ৷
- 18 অগস্ট- এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনা রাত্রিসাথী প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন শিল্পী ৷ সেদিনও তিনি তাঁর মনের কথা ব্যক্ত করেন ৷ যেখানে তিনি বলেন, "কে না জানে এই রাজ্যের অনেক বাংলাভাষী স্বঘোষিত প্রগতিশীল মানবনিদর্শন আমাকে চটিচাটা নামে ডেকে সুখ পান। অর্থাৎ আমি শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোলাম। পঁচাত্তরোর্ধ কবীর সুমন সম্পর্কে অষ্টপ্রহর গাল দিয়ে যাঁরা সুখ পান তাঁরা সুখেই থাকুন না হয়। কিন্তু তাঁরা যদি দাবি করেন তাঁরা রাজনীতির লোক তাহলে সংগ্রামের স্বার্থেই তাঁদের উচিত হচ্ছে না শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমানে চটিপিসি বা ঐ ধরণের নামে ডাকা।"
'চটিচাটা ছিলাম- আছি- থাকব'! কবীর সুমনের পোস্টে 'খোলা চিঠি' শহরের অনিন্দ্যর
- 7 সেপ্টেম্বর- এই সময় অভিযোগ ওঠে আরজি করে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের ৷ সেই ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলেন কবীর ৷
- 10 সেপ্টেম্বর- এই দিন মমতার কথার বিরোধিতা করতে শোনা যায় শিল্পীকে ৷ নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রীর 'উৎসবে ফিরুন' উক্তি ৷ তিনি লেখেন, "মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি সম্মান করি, কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক একটি উক্তির আমি বিরোধিতা করছি। 'উৎসবে ফিরুন'।এরকম অবস্থায় "উৎসবে ফিরুন" বলা খুবই কাঁচা কাজ, হৃদয়হীনতার পরিচয়। আন্দোলনকারীরা স্বাভাবিকভাবে রেগে গিয়েছেন। এমনিতে আমি মাননীয়া মমতার ভোটার ও প্রগ্রেসিভ বিপ্লবী মধ্যনাগরিক বাঙালিদের কাছে এক নিবেদিতপ্রাণ 'চটিচাটা'। এ হেন আমিও মনে করছি "উৎসবে ফিরুন" কথাটা বলা অন্যায় হয়েছে।"
- 11 সেপ্টেম্বর- এদিন শিল্পীর পোস্টে উঠে আসে মমতাকে নিয়ে ভালোবাসার গান ৷ তিনি লেখেন, "মমতা তোমায় ভালবাসি, তুমি জানো, এসো হে বন্ধু বিদ্রোহটাকে মানো ৷"
- 21 সেপ্টেম্বর- যেদিন জুনিয়র চিকিৎসদের ধরনা শেষ হয় ৷ সেদিনও তাঁর সোশাল পোস্টে ঝোড়ে পড়ে কটাক্ষ ও সমালোচনার সুর ৷ তিনি লেখেন, "এই বুড়ো হাবড়া তৃণমূল দালালের শুধু বিনতি - 'বাঙাল ঘটি হাওয়াই চটি' কথাগুলো হাততালি দিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বললে কি এক বয়স্ক মহিলাকেই অপমান করা হয় না? আপনারা তো এক মহিলার ওপর নির্যাতন ও তাঁর খুনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। সেটা করতে করতে আর এক মহিলাকে অপমান?"
- এরপর যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্যেও ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করেন সুমন ৷ তিনি লেখেন, "আমার বন্ধুস্থানীয় দু'একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে ফেসবুকে লিখতে দেখেছি - মমতা রাক্ষুসী। এরা নিজেদের পরিচয় দেয় মার্ক্সবাদী ব'লে, CPIM সমর্থক ব'লে। গা ঘিন ঘিন করে। শ্রীমতি মমতা দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি কে ও কী। এই বুড়ো বয়সে আমি কারুর কোনও কাজে লাগতে পারব না। শরীরটাও গিয়েছে। কিন্তু এটা জেনে মরব যে এক সাধারণ-অসাধারণ বাঙালি মহিলাকে দেখেছিলাম যিনি নানান বৈপরীত্যে, contradictionএ ভরা রক্তমাংসের এক নেতা, সাধারণ জনতার বন্ধু অভিভাবক।"
বাংলা থাকুক বাংলায়, বাংলা থাকুক মমতায়; গান বাঁধলেন কবীর সুমন
সোশাল মিডিয়ায় বিপ্লব তোলা কবীর সুমন এখন অবশ্য সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা থেকে মনে হয় বিরতি নিয়েছেন ৷ কেননা, এখন তাঁর ওয়ালে ধরা দিচ্ছে আগমনীর সুর ৷ মজার বিষয় এটাই, আন্দোলনের রাজপথে তিনি না থেকেও খবরের শিরোনামে বারাবার উঠে এসেছে কবীর সুমনের নাম ৷