কলকাতা, 23 এপ্রিল: রোম সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অধিষ্ঠাতা, নির্ভীক, অভিজ্ঞ সৈনিক জুলিয়াস সিজারকে সাম্প্রতিককালে মঞ্চে নিয়ে এসেছেন নির্দেশক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। যা ফের মঞ্চস্থ হতে চলেছে আগামী 11 মে দুপুর 2 টো এবং সন্ধে 6টায়, আকাদেমিতে।
সিজারের ভূমিকায় শঙ্কর দেবনাথ। সিজারের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী ক্যালপুর্নিয়ার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে অভিনেত্রী নবনীতা দত্তকে। এ ছাড়াও পদ্মনাভ দাশগুপ্ত (মার্ক অ্যান্টনি), লোকনাথ দে (ক্যাসিয়াস), অসীম রায়চৌধুরী (কাসকা), গৌতম পুরকায়স্থ (পম্পেই), লিপিকা চট্টোপাধ্যায় (কর্নেলিয়া), অস্মিতা ঘোষ (জুলিয়া),মৌলি রায় (পর্শিয়া), শ্রেয়া সিনহা (চারুবক), পিয়ালি বসু (ক্লিওপেট্রা)।
এই নাটক নিয়ে কথা হয় সিজারের তৃতীয় স্ত্রী ক্যালপুর্নিয়া অর্থাৎ নবনীতা দত্তর সঙ্গে। নবনীতা বাংলা টেলিভিশনেরও জনপ্রিয় মুখ। এবং ব্যস্ত মুখও বটে। এই মুহূর্তে 'রাঙামতী তীরন্দাজ' ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন নবনীতা। সিজারের তৃতীয় স্ত্রীর চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ক্যালপুর্নিয়া সিজারকে সাবধানবাণী দেয় সবসময়। তাকে আগলে রাখে। সিজারের বিপদ সে আগে থেকে জানতে পারে। কিন্তু সিজার নিজের দাপটে চলে। সে লিডার। সে কেন থেমে থাকবে? সে থেমে গেলে তার সাম্রাজ্যও থেমে যাবে৷ তাই সে থামে না।"

নবনীতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নাট্যদল শৈলুষিকের সঙ্গেই কি তাঁর গাঁটছড়া বাঁধা। নবনীতার উত্তর, "শৈলুষিক আমার কাছে মায়ের মতো। অন্য জায়গায় কাজ করতে গেলেও এই জায়গাকে অবহেলা করব না কোনওদিন। পদ্মনাভ দা (দাশগুপ্ত)'র হাত ধরেই আমার এখানে আসা। কীভাবে মঞ্চে উঠে দাঁড়াতে সেটাও এখানে এসে শিখেছি।" নবনীতা বলেন, "এই নাটকে প্রত্যেকটা চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। যে মাত্র দুটো লাইন বলছে সেটা শুনলেও মনে হবে, আরে এই চরিত্রটাই বেশি দরকারি। তবে, দিনের শেষে কেন্দ্রে জুলিয়াস সিজার। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। এই নাটকের শুরু থেকে শেষ সবই কমলেশ্বর দা'র হাতে তৈরি। আমাদের 'বিশ্বাসঘাতক' নাটকের সময়েও কমলেশ্বর দা অনেক গাইড করেছেন। মাঝেমাঝেই গাইড করেন আমাদের। তাতে আমরা সমৃদ্ধ হই।"
নাটক এবং বাংলা ধারাবাহিকের ব্যস্ততা কীভাবে ব্যালান্স করেন জানতে চাইলে নবনীতা বলেন, "ভালোবাসা আর নিষ্ঠা থাকলে সবকিছু হয়ে যায়। আর অনেকদিন হয়ে গেল আমার এই জগতে। ফলে, সবার থেকে সেই সহযোগিতাটাও পাই। নাটক আছে বললে ছুটিও পাই।" উইলিয়াম শেক্সপিয়ার অনুপ্রাণিত 'সিজার' নাটকটি কমলেশ্বর শুধু পরিচালনাই করেননি, 2024 সালের নতুন বয়ানে এক নতুনতর চেহারাও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সিজার কতটা ভালো বা মন্দ ছিলেন, তা নিয়ে নানা মহলে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন, সিজার ছিলেন ডিক্টেটর, একনায়কতান্ত্রিক শাসক এবং কেউ আবার বলেন, সিজার ছিলেন যুদ্ধবাজ, নিজের সাম্রাজ্য বিস্তারে যথেষ্ট হিংস্র, আপোসহীন, অত্যন্ত ধুরন্ধর এবং কৌশলী। নিজের স্বার্থচরিতার্থ করতে নিষ্ঠুর হতেও তার হাত কাঁপত না। অথচ এই সিজারই সাধারণ মানুষ ও সৈন্যদের জন্য জমি বিলিয়েছেন, কর রদ করেছেন, আবার নৃশংস হাতে সরিয়ে দিয়েছেন পথের কাঁটা। যিশুর জন্মের একশো বছর আগেই রোম সাম্রাজ্যের বিকাশ ও বিস্তার ঘটাতে গিয়ে দারুণ সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন যা নজির বহন করেছে।
একদিকে মার্ক এন্টনি অন্যদিকে ব্রুটাস, তীব্রতর সংঘাত, সেনেটরদের ভিতর প্রবল সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিশ্বাসঘাতকতার আবহ - এইসব নিয়েই সেদিনের রোম ! সেই পুরনো ইতিহাস মঞ্চে নিয়ে হাজির হয়েছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। আলোর দায়িত্বে প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী। প্রক্ষেপণ শুভঙ্কর। মঞ্চ নির্মাণ গৌতম পুরকায়স্থ, শোভন মাইতি, নারায়ণ গায়েন, অরূপ কর। মঞ্চ উপকরণ সরবরাহে সুরজিৎ দে, সপ্তর্ষি ভৌমিক, সৌরভ পয়রা। পোশাক পরিকল্পনায় পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়, পোশাক নির্মাণে শুভদীপ মিত্র। অলংকারের দায়িত্বে শৌভিক ও দেবমাল্য ৷ রূপসজ্জায় মহঃ আলি, কেশসজ্জায় পিঙ্কি বিশ্বাস, কোরিওগ্রাফিতে অদ্রিজা ভট্টাচার্য, স্থির চিত্রগ্রহণ জয়দীপ মন্ডল। প্রচারে অসীম রায়চৌধুরী ও রুপম ভট্টাচার্য। নামাঙ্কণ ও পোস্টার সাজিয়েছেন দীপ্তেশর মন্ডল। নাটকের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে থার্ড বেল থেকে ।