কলকাতা, 18 এপ্রিল: মুক্তির পথে অরিন্দম ভট্টাচার্য পরিচালিত 'দুর্গাপুর জংশন'। আমেরিকার বুকে ঘটে যাওয়া এক সত্য ঘটনাকে দুর্গাপুরের প্রেক্ষাপটে ফেলে অরিন্দম ভট্টাচার্য বানিয়েছেন ক্রাইম থ্রিলার জঁরের 'দুর্গাপুর জংশন'। 25 এপ্রিল ছবির মুক্তি ৷ ছবিতে সাংবাদিক ঊষসীর ভূমিকায় দেখা যাবে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে। প্রথমে সাংবাদিকের চরিত্রটি করার কথা ছিল বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু পরে স্বস্তিকা এবং বিক্রমের ইচ্ছেতেই চরিত্রের অদলবদল হয়। বিক্রম চেয়েছিলেন পুলিশ অফিসারের চরিত্র। কেননা 'খোঁজ'-এর পর আর পুলিশের চরিত্র করেননি তিনি। ওদিকে স্বস্তিকা 'নিখোঁজ'-এ পুলিশের চরিত্র করায় চাননি ওই একই ইমেজে আরও এত তাড়াতাড়ি আর একবার ফিরতে।
স্বস্তিকা ইটিভি ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, "এখানে আমি মায়ের চরিত্রে নেই। অনেকরকমের মায়ের চরিত্র অনেকবার করেছি ৷ আমার সন্তানদের অনেক ক্রাইসিসের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এখানে আমার সন্তানও নেই তাই ক্রাইসিসও নেই। মায়ের চরিত্রে আমার কোনও আপত্তি নেই। বিভিন্ন রকমের মায়ের চরিত্রে আমি নিজেকে মেলে ধরারও অনেক সুযোগ পেয়েছি। তবে, অনেকবার পরপর মায়ের চরিত্র করে ফেলায় একটু অন্যকিছু চেয়েছিলাম। আর ঊষসীর মতো চরিত্র আমি আগে কখনও করিনি।"
এই ছবিতে বেশ কিছু সংলাপ নিজের মতো করেই বলেছেন স্বস্তিকা। পাল্টেওছেন অনেক কথা। ট্রেলারে তাঁর সংলাপ, "মানুষ টাকার জন্য কিডনি বেচে জানতাম, শিরদাঁড়াটুকুও বেচা যায় আজ জানলাম..."- ইতিমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে দর্শক মহলে। সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কোনওরকম হোমওয়ার্কের প্রয়োজন পড়েনি স্বস্তিকার। তিনি বলেন, "আমি কোনওকালেই ওভাবে হোমওয়ার্ক, ওয়ার্কশপ করে কাজে বিশ্বাসী নই। ওটা আমার স্কুল না। তা ছাড়া আমি বাবার কাছে বাবার সময়কার যে সব সৎ সাংবাদিকের কথা শুনেছি বা আমিও যাঁদের কাছ থেকে দেখেছি, যাঁরা উপর মহলের চোখরাঙানিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সত্যতা তুলে ধরে, তাঁদের রেফারেন্স আমাকে সাহায্য করেছে। আর এই চরিত্রটা আমার মতো প্রতিবাদী, স্পষ্টবাদী। তাই কাজটা করতে সুবিধা হয়েছে অনেকাংশে।"
সামাজিক মাধ্যমে ট্রোলিং-এর প্রসঙ্গ তুললে স্বস্তিকার মত, "আমি বিরক্ত হই। আজকাল সবাই নিজের কানটা আছে কিনা না দেখে কাকের পেছনে ছোটে। যে যা পারে লেখে সমাজ মাধ্যমে। নিউজ না পড়েই মন্তব্য করে। আবার নিউজগুলোও এমন হেডলাইন করে যা যুক্তিহীন। তা ছাড়া যারা উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে খারাপ কথা বলতে ছাড়ে না তারা আমাকে ছাড়বে কেন?" |
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "কোনও এক বছর মহালয়ায় আমি কুমোরটুলিতে দুর্গা ঠাকুরের একটা অসম্পূর্ণ মূর্তির ছবি পোস্ট দিয়েছিলাম। কাঠামোর উপরে সবে মাটি লাগানো হয়েছিল মূর্তিটার। সেটা নিয়েও কত কথা বলল লোকজন। মা দুর্গার স্তন নিয়ে কথা বলতেও ছাড়ল না কেউ। মানুষ দুর্গাঠাকুরের বুক নিয়ে কথা বলতে ছাড়ে না, আর আমাকে ছাড়বে!"
স্বস্তিকা আরও বলেন, " আমার আর অনির্বাণের সম্প্রতি একটা চিঠি পাঠের অনুষ্ঠান নিয়ে যা চলল ক'দিন। অনেকগুলো হেরে যাওয়া মানুষের চিঠি পড়লাম দুজনে সেদিন। তার মধ্যে লেডি রানুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা চিঠিও পড়ি আমি। আর সেই চিঠির কথা এক প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের খবরে বসিয়ে দেওয়া হল আমার মুখে। সবই খবর বিক্রির পদ্ধতি। কই আমাকে আর মৈনাক ভৌমিককে নিয়ে তো কোনও কথা হয় না। ওর সঙ্গে আমি যতটা ক্লোজ ততটা কোনও প্রেমিকের সঙ্গেও নই। আসলে আমাকে আর মৈনাককে নিয়ে তৈরি হেডলাইনে খবর বিক্রি হবে না। অনির্বাণ আর আমাকে ঘিরে খবর হলে বিক্রি হবে।..."
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও নিজের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বস্তিকা। মুম্বইতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তিনি। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের একটি হিন্দি ছবিতেও কাজ করলেন স্বস্তিকা। বলেন, "ছবিটা আসতে একটু সময় লাগবে। ওখানে অনেক ধীরে সুস্থে কাজ হয়। ওরা সেই খরচাটাও করতে পারে অবশ্য। আর আমাদের এখানে তো দু'মাস আগে শুটিং হয়ে গিয়ে দু'মাস পরে রিলিজও হয়ে যায়। পরের কাজ শুরু হয়ে যায়। ফ্যাকট্রির মতো কাজ হয় এখানে। তবে, এটাও ঠিক আমাদের এখানে একটা কাজ করে দু'তিন মাস বসে থাকলে না খেতে পেয়ে মরে যাবো। আর মুম্বই এখানকার মতো ফ্যাক্টরি আউটলেট না যে তাড়াতাড়ি সব হয়ে যাবে। তাই সময় লাগবে।"
'দুর্গাপুর জংশন'-এ অভিনয় করতে রাজি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার ক্রাইম থ্রিলার ভালো লাগে। আর মানুষও ক্রাইম থ্রিলার পছন্দ করছেন আজকাল। আর এরকম চরিত্র আমি এর আগে কখনও করিনি। গ্যারান্টি দিচ্ছি, অন্য স্বস্তিকা মুখার্জিকে পাবেন দর্শক। " প্রসঙ্গত, ছবির গল্পের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দুর্গাপুরের বুকে ঘটছে একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। ওষুধের বিষক্রিয়াই এর কারণ বলে অনুমান । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি পরিকল্পিত সিরিয়াল কিলিং। তা স্পষ্ট নয় কারোর কাছে। জানা যাবে 25 এপ্রিল ছবি মুক্তির পর।