কলকাতা, 14 এপ্রিল: ইন্ডিয়ান আইডলের এই সিজনে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন বাংলার উদীয়মান শিল্পীরা। জয়ী হয়েছেন মানসী ঘোষ, দ্বিতীয় শুভজিৎ চক্রবর্তী। এ ছাড়াও এবারের প্রতিযোগিতায় ছিলেন আরও এক ঝাঁক বাংলার প্রতিযোগী। এবার তাঁদের পথেই হাঁটার স্বপ্নে বুক বাঁধছেন বাংলার আরেক কন্যে আরাত্রিকা সিনহা। গত সিজনে সারেগামাপা'র প্রতিযোগী ছিলেন তিনি। পদাধিকার না পেলেও পেয়েছিলেন সম্মানীয় 'কালিকাপ্রসাদ সম্মান'। পাশাপাশি পেয়েছিলেন 'খুদে কমরেড' তকমা।
নববর্ষের প্রাক্কালে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় ধনধান্য অডিটোরিয়ামে এক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গাইতে হাজির আরাত্রিকা সিনহা। এরপর কাঁথি-সহ একাধিক জায়গায় বর্ষবরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠান রয়েছে তাঁর। ব্রিগেডের মঞ্চে গণনাট্য সঙ্গীত গাওয়া থেকে সারেগামাপার মঞ্চ এবং বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক- মাত্র পনেরো বছরের মধ্যেই জীবনের অনেক লড়াই দেখে নিয়েছেন বাঁকুড়ার দশম শ্রেণীর ছাত্রী আরাত্রিকা সিনহা।
সারেগামাপা'র মঞ্চে দর্শক, শ্রোতা এবং বিচারকদের মন কেড়ে নিয়েছেন তিনি। অনেকেরই আশা ছিল আরাত্রিকার হাতেই উঠবে জয়ীর ট্রফি। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। কালিকাপ্রসাদ পুরস্কার পান আরাত্রিকা। তাতেই খুশি বাঁকুড়ার কন্যে। তাঁর মতে, শেখার আরও অনেক বাকি, লড়াই আছে আরও। তাই আগামীর দিকে তাকিয়ে আছেন আরাত্রিকা। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় ধনধান্য অডিটোরিয়ামে গান গাইতে আসার পথেই ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। জানতে চাওয়া হয় তাঁর আগামী পরিকল্পনার কথা। আরাত্রিকা বলেন, "আপাতত মাধ্যমিকটা মন দিয়ে দেবো। এ বছর সেটা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। পরীক্ষাটা ভালো করে দিতে হবে। তা ছাড়া গান তো আমার সবসময়ের সঙ্গী। শো থাকছে প্রায়ই।"
কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার ইচ্ছা আরাত্রিকার? হেসে বলেন, "সায়েন্স তো নিচ্ছিই না। আমি আগামী দিনে ইংলিশ লিটারেচার নিয়ে পড়তে চাই।" সম্প্রতি 'ভালোবাসা ডট কম' নামের একটি আসন্ন বাংলা ছবির জন্য 'জীবন যখন শুকায়ে যায়' শীর্ষক রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্লেব্যাক করেছেন আরাত্রিকা। তাছাড়া একটি গানের অ্যালবামও আসছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ব্যাপারে যদিও বিশেষ কিছু এখনই বলতে নারাজ বাঁকুড়ার মানি। সারেগামাপার মঞ্চে আরাত্রিকার গণনাট্য সঙ্গীত পরিবেশন নিয়ে নেট দুনিয়ায় প্রশ্ন ওঠে, আরাত্রিকা কি বামপন্থী? এই প্রশ্ন থামেনি ফিনালে অবধি। অথচ সব ধরনের গান গেয়ে দর্শকের মনোরঞ্জন করেন তিনি।
গণনাট্য সঙ্গীত গেয়েও বিচারকদের প্রশংসা পান আরাত্রিকা। তাঁকে বিচারক শান্তনু মৈত্র অবধি প্রায় হারিয়ে যেতে বসা গণসঙ্গীত গাইতে বলেন। সেদিন ফের গেয়ে পরের রাউন্ডে যান আরাত্রিকা। এই প্রসঙ্গে কথা বললে আরাত্রিকা বলেন, "আমি জানি না কেন এই কথা বলা হয়েছিল। কেউ মন দিয়ে শুরুর দিন থেকে সারেগামাপা দেখলে এই কথা বলতে পারতেন না। আমি সারেগামাপার মঞ্চে প্রতি পর্বে চেষ্টা করে গিয়েছি যেন 'বামপন্থী গায়িকা'র তকমা আমার নামের পাশ থেকে উঠে যায়। আমি সব ধরনের গান গাই এবং আগামী দিনেও গাইতে চাই। আমি বামপন্থী গায়িকা নই, আমি শুধুই গায়িকা।"
এহেন আরাত্রিকা পা রাখতে চান ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে। কিন্তু এই মুহূর্তে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মাধ্যমিক। তবে, ইচ্ছা অফুরান। আর ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূরে পৌঁছে দিতে পারে তা চিরকালের প্রমাণিত সত্য। 'ইন্ডিয়ান আইডল সিজন 15'-য় আরাত্রিকার ভালো লাগত মানসী, শুভজিৎ, ময়ূরীদের গান। সারেগামাপা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "জীবনের প্রথম রিয়ালিটি শো ছিল ওটা আমার। অনেককিছু শিখেছি। ভালো মন্দ অনেক স্মৃতি ওই মঞ্চটা ঘিরে আমার। গান এবং গানের বাইরেও আছে স্মৃতি। তবে কোনও খেদ নেই। এরপরে ইন্ডিয়ান আইডলে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই।"