কলকাতা, 13 এপ্রিল: 'ইষ্টি কুটুম'-এর কমলিকা থেকে 'বিন্নি ধানের খই'-এর গিনি ৷ আবার কখনও ব্যোমকেশ সিরিজের মোহিনী বা মেদিনী ৷ এহেন বহু উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মাধ্যমে অঙ্কিতা চক্রবর্তী বাংলা বিনোদন জগতে পার করে ফেলেছেন 19টি বছর । এখন 'ঝনক' ধারাবাহিকের দৌলতে মুম্বইবাসী অঙ্কিতা । 'ঝনক' ধারাবাহিকে তাঁর অপরাজিতা বা আপ্পু নামের চরিত্রটি দর্শকের মন জিতে নিয়েছে শুরুর দিন থেকেই । নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে কাজ এবং বাকিটা সময় কীভাবে কাটে অভিনেত্রীর? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ।
ইটিভি ভারত: অনেকদিন হল নিজের শহর থেকে দূরে, মিস করেন না?
অঙ্কিতা: আমি তো নিজের সিদ্ধান্তেই অন্য শহরে এসেছি । কলকাতাতেও আমার ঠিকানা আছে । এখানেও আছে । খুব ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । 2-3 বছর টানা আছি এখানে । এখন এটাও নিজের বাড়িই হয়ে গিয়েছে । মিস তো করিই । বাবা-মা, এত বন্ধু বান্ধব, রাস্তাঘাট, আত্মীয় স্বজন- সবই তো ওখানে । ওই শহর আমার ইমোশনের জায়গা । আমার প্রথম প্রেমে পড়াও তো ওখানেই । সবটাই ওখানে । তবে, কেরিয়ারের কথা ভেবে তো আমাদের নানা রকমের সিদ্ধান্ত নিতে হয় । আর কলকাতায় কাজের সুযোগ তো খুব কম । সেই কারণেই শিফট করেছি ।

ইটিভি ভারত: এর মধ্যে বাংলা থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি কোনও প্রজেক্ট নিয়ে?
অঙ্কিতা: জুন মাসে পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তীর পরিচালনায় একটা কাজ করার কথা আছে । সেটা করব । আমার মতে, যাদের যোগাযোগ করার তারা ঠিকই করবে । আজকাল তো কোথায় আছি সেটা বড় কথা নয় । সব জায়গার অভিনেতা সব জায়গায় গিয়ে অভিনয় করছেন । এই মুহূর্তে কলকাতাতে আমার কাজ নেই বলেই আমি এখানে আছি । আবার কলকাতা থেকে কাজ এলে এবং সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলে, ওখানেই বেশি থাকব । এখানে মাঝে মাঝে আসব । এভাবেই নিজেকে অপারেট করছি আমি । ভালো কাজের জন্য যেখান থেকে ডাক পাব সেখানেই চলে যাব । আর একটা কথা বলব, এখন কলকাতা এবং মুম্বই মিলিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে । মুম্বইতে ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল, রিজিওনাল সব ধরনের কাজই হয় । একইভাবে কোনও ছবির শুটিং কলকাতাতে হচ্ছে তো রেকর্ডিং মুম্বইতে । আবার উলটোটাও হচ্ছে । সুতরাং, কোনও কাজ পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে জায়গাটা বাধা হতে পারে না, এটা আমার বিশ্বাস ।

ইটিভি ভারত: প্রখ্যাত কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়া কলকাতাতে কাস্টিং কোম্পানি খুলবেন শুনছিলাম ।
অঙ্কিতা: এই ব্যাপারে আমার কোনও আইডিয়া নেই । তবে, বাংলাতে কাস্টিং এজেন্সি খুললে তো সাধারণ নিয়মে কাস্টিং হবে । বাছাই হবে, অডিশন হবে, যারটা সবথেকে ভালো হবে সে কাজটা পাবে । কিন্তু, সেটা কি বাংলাতে হয় আদৌ? আমার ক্ষেত্রেই তো কতবার এমন হয়েছে যে ডিরেক্টরের আমাকে পছন্দ হয়েছে কিন্তু প্রোডিউসারের আমাকে পছন্দ হয়নি । প্রত্যেক সংস্থারই আসলে নিজস্ব কিছু পছন্দের পাত্র পাত্রী থাকেন । আর কলকাতায় মূলত প্রেফারেন্স আর পিআর মারফতই কাজ হয় । মুম্বইতেও হয় । কিন্তু তুলনায় অনেক কম । কারণ এখানে কাজের পরিসর অনেক বেশি । ফলে, কারওকে কারওর পছন্দের হতে লাগে না । মুম্বইতে যারা কারওর প্রেফারেন্সের নয় তারাও কাজটা পেয়ে যায় । তা বলে এখানেও পছন্দের অভিনেতারা সুযোগ বেশি পান না তেমন নয় । তবে, কলকাতার মতো নয় ।

ইটিভি ভারত: তা হলে কি আপনার কলকাতায় কাজ কমে যাওয়ারও এটা কারণ ধরে নেওয়া যায়?
অঙ্কিতা: তা ছাড়া আবার কী ! টলিউড একটা ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রি । এখানে সবাই সবাইকে চেনে । এমন কোনও পরিচালক, প্রযোজক নেই যাঁদের আমি চিনি না । আবার এমন কোনও পরিচালক, প্রযোজক নেই যাঁরা আমাকে চেনেন না । তাই তাঁদের আমাকে কাজ না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ইচ্ছাকৃতভাবেই । যেখানে আমাকে কেউ চেনে না সেখানে গিয়ে আমি বলতে পারি নিজের কাজের জন্য । কলকাতাতে তো বলার জায়গা নেই । আর কলকাতায় অডিশন দিয়ে কাজ হয় এমন কথা আমি কখনও শুনিনি ।

ইটিভি ভারত: হিন্দিতে অন্য কোনও কাজের কথা হয়েছে?
অঙ্কিতা: কাজের সুযোগ আসছে, করছি না । 'ঝনক' আমার প্রথম ন্যাশনাল চ্যানেলের কাজ । এটাতেই আপাতত আমি মন দিয়েছি । মানুষ প্রশংসা করছেন । আর সিরিয়ালের যা ফরম্যাট তাতে সাতদিনের জন্য শুটের একটা দারুণ চাপ থাকে । তার উপরে এই ধারাবাহিক এক ঘণ্টার এপিসোড দেয় । ফলে, অন্য কাজে মন দেওয়াটা সম্ভব না । তাছাড়া 'ঝনক' আমার রেসপন্সিবিলিটি । এক্ষুণি অন্য কাজে লাফ দিতে চাইছি না । তবে হ্যাঁ, খুব বেটার কিছু এলে করব । আর লীনা দি, শৈবাল দা আমাকে সেই সুবিধাটা দেন । যেভাবে অবন্তী চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করতে দিচ্ছেন । লীনা দি আর শৈবাল দা আমার কাজের উপর ভরসা রেখেছেন এত বছর ধরে । এটাও আমার প্রাপ্তি ।

ইটিভি ভারত: দুই শহরের মধ্যে কাজের পরিবেশের ফারাক কী?
অঙ্কিতা: আমি লীনা দি আর শৈবাল দা'র সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকে কাজ করছি । টানা আটবছর ওঁদের সঙ্গে মেগা সিরিয়ালে কাজ করার পর অনেকদিনের বিরতি ছিল । আবার যখন করেছি তখনও তাঁদেরই সঙ্গে । এপিসোডের চাপ থাকলেও যে খুব স্ট্রেসড আউট হয়ে কাজ হয় তা নয় । যতটা সম্ভব শৈবাল দা কমফর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন । খুব শান্তিপূর্ণভাবেই কাজ করি । অন্য প্রযোজনা সংস্থাতে খুব কমই কাজ করেছি আমি । এঁদের সঙ্গেই বেশি করেছি । আবার মুম্বইতেও যখন করছি তখন এঁদের সঙ্গেই করছি । আমার কোনও অভিযোগ নেই । আসলে কোনও কাজের চাপটা শুধু পরিচালক বা শুধু অভিনেতার নয় । চাপটা সবার থাকে । আর সবাই সবারটা বুঝলেই সমস্যা থাকে না । একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাটাও বেড়ে যায় ।

ইটিভি ভারত: মুম্বইতে বন্ধুবান্ধব হল?
অঙ্কিতা: একটা বয়সের পর আর সেভাবে 'বন্ধু' হয় না । এমনিতেও আমার বন্ধু কম । আমি ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছি । প্রকৃত অর্থে 'বন্ধু' বলতে যা বুঝি যেমন, যে আমার অকারণ বকবক সহ্য করবে, ডিপ্রেশনে বাজে বকা মেনে নেবে, একই কথা নিয়ে অনবরত ঘ্যান ঘ্যান করার কারণ যাকে বলে দিতে হবে না, না খেলে যে মুখের কাছে খাবার ধরবে, যার বাড়িতে যেতে জিজ্ঞেস করতে লাগে না, যার উপরে আমি রাগ করতে পারব আর সে সেই রাগের কারণটা বুঝবে সেই হল বন্ধু । এরকম বন্ধু আমার দু'জন । প্রান্তিক আর সোহিনী । এছাড়া ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আমার বহু বন্ধু আছে । তাদের আমি আলাদাই রাখি আমার এই জগৎ থেকে ।
ইটিভি ভারত: শুটিং না থাকলে কী করেন?
অঙ্কিতা: মূলত ল্যাদ খাই । হাহাহা...। আমার অনেককিছু করার আছে । সুইমিং করি, আঁকি, গাছপালা আছে এসব নিয়েই কেটে যায় । আমার মা বলে, আমাকে একটা সাদা দেওয়াল দিলেই আমি একা থেকে যাব ।
ইটিভি ভারত: 'ভবিষ্যতের ভূত' নিয়ে সায়নীকে, আপনাকে গলা ফাটাতে দেখেছিলাম । সায়নী আজ শাসকদলের লোক । কী বলবেন?
অঙ্কিতা: আমি ওঁকে নিয়ে গর্বিত । এই বয়সে সায়নী যা করে ফেলেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে । এমন নয় যে ওর হাতে কাজ ছিল না । কাজ থাকাকালীনই রাজনীতিতে ! সত্যি কথা বলতে কী, আমরা কেউই সেদিন আকাডেমির সামনে কোনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা হাতে কথা বলিনি । সত্যিটা বলতে চেয়েছিলাম । সায়নী তাঁর নিজের জায়গা থেকে এই বয়সে যে কাজ করছে তা প্রশংসনীয় । প্রত্যেক দলের নিজস্ব নীতি থাকে । ওকেও সেই নীতি মেনেই চলতে হবে । আর একটা দলের সবাই খারাপ, এই কথায় আমার বিশ্বাস নেই ।