অনন্তনাগ , 26 এপ্রিল: রক্তাক্ত ভূস্বর্গ ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর মঙ্গলবারের বর্বরোচিত হামলায় শোকাহত দেশ ৷ প্রাণ হারিয়েছেন 26 জন নিরীহ পর্যটক ৷ হামলার পর জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ৷ কিন্তু, কেমন আছে কাশ্মীর ? আর কী উপত্যকামুখী হবেন পর্যটকরা ? 'ভয়ঙ্কর' ভূস্বর্গে তাঁরা আদৌ কতটা সুরক্ষিত ? এমন সমস্ত প্রশ্ন যখন ঘোরাফেরা করছে তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন পর্যটকরা ৷
কাশ্মীর উপত্যকাবাসীর জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প ৷ কিন্তু, জঙ্গি হামলা ও সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াই প্রভৃতি কারণে বেশ পিছিয়ে পড়ে এই শিল্প ৷ তবে, বিগত তিন বছর ধরে এই সমস্যা থেকে একটু একটু সেড়ে উঠেছিল উপত্যকা ৷ পর্যটন শিল্পে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভূস্বর্গ ৷ কিন্তু, 22 এপ্রিলের হামলায় পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি নতুন করে ধাক্কা খেয়ছে ৷ ভয় এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন পর্যটন নির্ভর কাশ্মীরবাসী ৷

মঙ্গলবারের হামলার পর নিস্তব্ধতা নেমে আসে পহেলগাঁওয়ে ৷ কিছুটা সময় যাওয়ার পর ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেন এলাকাবাসী ৷ একটা দু'টো দোকানও খোলে ৷ তাঁদের রুজিরুটিতে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন কয়েকজন সাহসী পর্যটকও ৷ সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে উপত্যকায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান মুম্বই থেকে আসা পর্যটক পরাগ যোশী ৷
তাঁর কথায়, "সেদিনের ঘটনায় আমি গভীর শোকাহত ৷ ঘটনার দিনই আমি জম্মু বিমানবন্দরে এসে পৌঁছই ৷ সমির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি সমস্ত বুকিং করেছিলাম ৷ মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর পহেলগাঁওয়ে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের ৷ কিন্তু, জঙ্গি হামলার জন্য সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ সেদিনের ঘটনায় আমার এলাকার 3 জন প্রাণ হারিয়েছেন ৷"

পরাগের কথায়, "কাশ্মীর মানেই জঙ্গি হামলা বা গোলাগুলি নয় ৷ সমিরের মতো ভালো কাশ্মীরিদেরও বাস এই উপত্যকায় ৷ এতকিছুর মধ্যে আমাদের আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি রাখেননি ৷ পহেলগাঁওয়ের হামলার কুপ্রভাব পড়বে এঁদের উপর ৷ কয়েকজন জঙ্গির জন্য় এই সমস্ত ভালো মানুষদের ক্ষতি হচ্ছে ৷ এই বিষয়টি একদমই ঠিক নয় ৷"
পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তাঁর মত, "কয়েকজনের ধারণা, সেদিনের হামলার পর হয়তো পর্যটন শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে ৷ জঙ্গিরা সেটাই চাইছে ৷ কিন্তু, তাদের সেই মনোস্কামনা পূরণ হবে না ৷" স্ত্রী ও শিশুদের নিয়ে পহেলগাঁওয়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি আরও বলেন, "নিজেকে এতটুকুও অসুরক্ষিত বলে মনে হচ্ছে না ৷ তবে, বৈসরন উপত্যকায় না-যেতে পেরে খারাপ লাগছে ৷" একই কথা বলতে শোনা যায় মুম্বইের থানের বাসিন্দা পায়েল যোশীকেও ৷ তিনি বলেন, "কাশ্মীরের অর্থনীতিতে ধস নামুক, তা অনেকেই চান ৷ আর আমরা যদি কাশ্মীরে আসা বন্ধ করে দিই, তাহলে স্থানীয়রা কোথায় যাবেন ? কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না ৷"
হামলার দিন মুম্বই থেকে উপত্যকায় এসে পৌঁছন অঞ্জন ৷ তিনি বলেন, "বেশ অনুগত এবং প্রাণবন্ত এখানকার লোকজন ৷ সন্ত্রাসবাদীরা এদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ৷ কিন্তু, তারা সফল হবে না ৷ কাশ্মীরের মানুষজনের সঙ্গে আমাদের কোনও ভেদাভেদ নেই ৷ সকলের কাছে আমার একটাই আবেদন, যাঁরা কাশ্মীর ভ্রমণে আগ্রহী, তাঁরা আসুন ৷ শান্ত ও ভালোবাসার কাশ্মীর ঘুরে যান ৷"