নয়াদিল্লি, 4 এপ্রিল: ভোটার পরিচয়পত্রের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণ নিয়ে ফের উদ্বেগ প্রকাশ করল তৃণমূল ৷ দলের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়ায় একাধিক ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে, যার সুযোগ নিয়ে ভূতুড়ে ভোটাররা তালিকায় ঢুকে পড়তে পারেন ৷ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে এই সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস ৷
শুক্রবার সকালে তৃণমূলের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল কমিশনের দফতরে গিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেয় ৷ প্রতিনিধি দলে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ৷ এর আগে মার্চ মাসের 11 তারিখ 10 সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনের গিয়েছিল ৷
Today, a delegation of our MPs met with @ECISVEEP, demanding answers on why they are pushing for Aadhaar-EPIC linkage without first addressing the glaring fraud in voter identities.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) April 4, 2025
Key questions remain unanswered:
👉🏻 How many voter identities have actually been verified
👉🏻… pic.twitter.com/mdCeWH6cLV
এদিনের স্মারকলিপিতে তৃণমূল জানিয়েছে, "আমাদের পক্ষ থেকে কমিশনকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে এই সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখতে, যতক্ষণ না এই বিষয়ে উত্থাপিত সব উদ্বেগ ও প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ সমাধান পাওয়া যায় ৷"
তৃণমূলে মূল আপত্তি, এপিক ও আধার সংযুক্তিকরণের বিষয়টি ফর্ম 6বি-তে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না ৷ সেখানে এমন কোনও বিকল্প রাখা হয়নি, যাতে কোনও একজন ভোটার জানাতে পারেন, তিনি আধার নম্বর দিতে ইচ্ছুক নন ৷ অথচ কমিশন 2023 সালের 18 সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, আধার দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় ৷ কাজেই আধার এবং এপিক নম্বরের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক কীভাবে হতে পারে ? সেই প্রশ্নই তুলেছে তৃণমূল ৷ তৃণমূলের আরও প্রশ্ন, যদি আধার নম্বর দেওয়া ঐচ্ছিক হয়, তবে কমিশন কেন কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে ? আর কেন্দ্রীয় সরকার যদি কমিশনের প্রস্তাবে সম্মতি না দেয়, তবে কমিশন কেন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় না ?
স্মারকলিপিতে 2022 সালের ক্যাগ রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ বলা হয়েছে, আধার তথ্যভাণ্ডারে মারাত্মক ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য দেখা গিয়েছে ৷ তথ্যের ভুল থেকে শুরু করে তথ্য যাচাইয়ের সময় ত্রুটি, অথবা সংরক্ষণের ঘাটতির মতো সমস্য়া আছে ৷ সেই সঙ্গে ক্যাগ জানিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ তথ্য বা দুর্বল বায়োমেট্রিক তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক আধার নম্বর ইস্যু হয়েছে, যার ফলে একই ব্যক্তির নামে একাধিক আধার তৈরি হয়েছে, নকল আধার জারি হয়েছে ৷
স্মারকলিপিতে তৃণমূলের আরও দাবি, "এই ভুয়ো, ক্লোনড ও ডুপ্লিকেট আধার যদি ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তবে ভূতুড়ে ভোটারদের প্রবেশ ঠেকানো যাবে না। কমিশনের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এই আশঙ্কা রুখতে তাদের নির্দিষ্ট রণকৌশল কী ?"
তৃণমূল কংগ্রেসের আরেকটি বড় অভিযোগ, এখনও বহু ডুপ্লিকেট এপিক চালুর রয়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত 27 ফেব্রুয়ারি এই ইস্যু প্রথম প্রকাশ্যে আনেন ৷ তার পর 7 মার্চ কমিশন একটি প্রেস বিবৃতিতে জানায়, 2000 সাল থেকে দেশের বহু ভোটারের নামে একাধিক এপিক ইস্যু হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা সেই সমস্যার সমাধান করবে ৷
তৃণমূল মনে করে, যখন এপিকের মধ্যেই এত গলদ থেকে গিয়েছে, তখন আধার সংযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে ৷ আর তাই, এই মুহূর্তে এপিক-আধার সংযুক্তিকরণ অবিবেচক এবং তড়িঘড়ি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত ৷ এটি সমাধানের পথ নয়, বরং নতুন জটিলতার সৃষ্টি করবে ৷"