নয়াদিল্লি, 26 মার্চ: শিশুর বুকে হাত দেওয়া, তার পাজামার দড়ির গিঁট খুলে ফেলা কিংবা তাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়াকে ধর্ষণের সঙ্গে একই শ্রেণিতে রাখা যায় না ৷ সম্প্রতি একটি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ ছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের ৷ বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্র জানিয়েছিলেন, শিশুর বুকে হাত দেওয়া বা তার পাজামার গিঁট খুলে ফেলা ধর্ষণের অপরাধ নয় । ওই রায়ের ওপরই স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷
বিচারপতি বি আর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছে, এই রায় ‘সম্পূর্ণ অসংবেদনশীল’ । বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘‘বিচারপতি এক্ষেত্রে অসংবেদনশীলতা দেখিয়েছেন । মাননীয় বিচারপতি সম্পর্কে এই ধরনের শব্দের ব্যবহার করার জন্যও আমরা দুঃখিত ।’’
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘‘এটি খুব গুরুতর বিষয় ৷ আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ওই রায়ে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে । সংবিধানের অনুচ্ছেদ 21, 24 এবং 26-এর পর্যবেক্ষণগুলি অসংবেদনশীল ৷ এই রায় মামলার অন্তত চার মাস পরে দেওয়া হয়েছে ৷ তাৎক্ষণিকভাবে এই রায় দেওয়া হয়নি ৷ স্বাভাবিকভাবে এই ধরণের রায়ের স্থগিতাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সময় নেই ৷ কিন্তু এটির ক্ষেত্রে আমরা এখনই স্থগিতাদেশ দিচ্ছি ।’’
‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিতর্কিত রায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নজরে আনে ৷ তারপরেই শীর্ষ আদালত একটি সুয়ো মোটো মামলা শুরু করে ৷ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন । তিনি বলেন, ‘‘কিছু রায়ের উপর অবিলম্বে স্থগিতাদেশ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ।’’
কী হয়েছিল ?
এক নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলছিল এলাহাবাদ আদালতে । 11 বছর বয়সি এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার চেষ্টায় অভিযুক্ত হয়েছিল দুই যুবক । পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে । কিন্তু অভিযুক্তদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার ধারা প্রযুক্ত হয় না । এই দাবিকে সামনে রেখে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই দুই যুবক । সেই মামলার শুনানিতেই এই মন্তব্য করে আদালত।
বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘‘দুই অভিযুক্ত 11 বছর বয়সি নির্যাতিতার বুক স্পর্শ করে পাজামার গিঁট খুলে ফেলে এবং তাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । তবে পথচারীদের হস্তক্ষেপে নাবালিকাকে ওখানেই ফেলে রেখে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং মামলার তথ্য ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধকে প্রমাণিত করে না।’’
আদালত নির্যাতিতার আইনজীবীকে জানিয়ে দেয়, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করার জন্য প্রমাণ করতে হবে যে এটি প্রস্তুতির পর্যায়ের বাইরে চলে গিয়েছিল । প্রস্তুতি এবং অপরাধ করার প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে পার্থক্য মূলত বৃহত্তর মাত্রার উপর নির্ভর করে ৷ বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, কাসগঞ্জের পতিয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তের সংশোধিত আবেদনটি আংশিকভাবে গ্রহণযোগ্য । ধর্ষণের কোনও অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।
অবশেষে আদালত এই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবর্তন করে। প্রথমে আইপিসি ধারা 376 (ধর্ষণ) এবং 18 (অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা) দেওয়া হয়েছিল ৷ পাশাপাশি যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষার (পকসো) ধারাও যোগ করা হয়েছিল । আদালত নির্দেশ দেয়, অভিযুক্তদের আইপিসি ধারা 354-বি (বস্ত্র খুলতে আক্রমণ বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগ) এর কম অভিযোগের পাশাপাশি পকসো আইনের ধারা 9/10 (বড় যৌন নির্যাতন) এর অধীনে বিচার করা হোক ।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি ৷ এর পরিবর্তে, তাদের আইপিসি ধারা 354(বি) (একজন মহিলাকে পোশাক খুলতে বা নগ্ন করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ বা নির্যাতন) এবং পকসো আইনের ধারা 9 (এম)-এর একটি ছোট অভিযোগের জন্য তলব করা যেতে পারে ।