নয়াদিল্লি, 13 সেপ্টেম্বর: সিবিআই-এর হাতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ দিল্লি আবগারি নীতি মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে ৷ ব্যক্তিগত 10 লক্ষ টাকার বন্ডে আজ কেজরিওয়ালের জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট তার নির্দেশে বলেছে যে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের মামলায় কেজরিওয়ালকে হেফাজতে রাখা ন্যায়বিচারের জন্যে প্রতারণা করা হবে । সন্ধ্যায় জামিন পাওয়ার পর রোড শো করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ।
जेल के ताले टूट गए - केजरीवाल जी छूट गए🔥#केजरीवाल_आ_गये pic.twitter.com/wW2MRr9aLU
— AAP (@AamAadmiParty) September 13, 2024
গত 5 সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভূইয়াঁর বেঞ্চ দিল্লি আবগারি নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হেফাজত থেকে কেজরিওয়ালের জামিন ওর মুক্তির আবেদনের ওপর রায় সুরক্ষিত রেখেছিল ৷ এদিন রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মণীশ সিসোদিয়া, অতীশি-সহ আপ শীর্ষনেতারা আনন্দে ফেটে পড়েন। দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সিসোদিয়া বলেন, "ভারতে সংবিধানের ঊর্ধ্বে কিছুই নয় ৷ সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায় শুধু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য নয়, এটি একটি নিশ্চয়তা যে, যে কেউ স্বৈরতান্ত্রিক শাসক হিসেবে আসুক না কেন, দেশের সংবিধান একটা ঢাল হিসেবে সবসময় তাঁর সামনে থাকে ৷ এটা আজ প্রমাণিত যে, সিবিআই-এর গ্রেফতার আসলে ছিল ইডি মামলায় কেজরিওয়ালের জামিন আটকাতে। তবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে সংবিধানের ঢাল রয়েছে। সচ্চাই অউর কট্টর ইমানদারি হামেশা জোশ মে রেহতি হ্যায়।"
জামিনের খবর পাওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেজরিওয়ালপত্নী সুনিতা বলেন, "আপ পরিবারকে অভিনন্দন, শক্তিশালী থাকার জন্য ধন্যবাদ।" কেজরিওয়ালের জামিন নিয়ে আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা বলেন, "সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ। তিনি (অরবিন্দ কেজরিওয়াল) শুধু একটি নাম নন, বরং সৎ রাজনীতির একটি ব্র্যান্ড। এর জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। কেজরিওয়াল যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নাম। এই সিদ্ধান্তে আপ আরও উজ্জীবিত হবে এবং সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় পড়ার পর আমরা পরবর্তী কৌশল তৈরি করব। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবার আসন্ন হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে আপের হয়ে প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন।"
আজ সুপ্রিম কোর্টে রায়দানের সময় জামিন দেওয়া নিয়ে বিচারপতি কান্তের সঙ্গে একমত হয়ে বিচারপতি ভূঁইয়া বলেন, সিবিআই 22 মাস ধরে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেনি, অথচ ইডি-র মামলায় জামিন পাওয়ারই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা চলাকালীন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি জোরালো ভাবে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, কেজরিওয়াল দিল্লি আবগারি কেলেঙ্কারি মামলায় মূল হোতা এবং 'কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে প্রমাণের পাহাড়' রয়েছে ৷ মূল মামলায় দুই মাস আগে জামিন পেলেও, প্রায় ছয় মাস পরে আজ কেজরিওয়াল জেলের বাইরে আসতে চলেছেন কারণ, গত 12 জুলাই জামিন পাওয়ার পরই তাঁকে সিবিআই ফের গ্রেফতার করায় যিনি ছাড়া পাননি।
কেজরিওয়ালের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভি আদালতে বলেন, "কেজরির দ্বিতীয়বার গ্রেফতারিকে মূলতঃ 'বীমা' হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল ৷" পাল্টা যুক্তি দিয়ে সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, "কেজরিওয়ালের পক্ষে যদি মামলার রায় যায়, তাহলে সেটা এমন নজির স্থাপন করতে পারে, যা অধস্তন আদালতগুলির কর্তৃত্বকে ক্ষুন্ন করবে।" কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এও দাবি করে যে, কেজরিওয়াল 2011 সালের নভেম্বরে বিতর্কিত আবগারি নীতির খসড়া তৈরি এবং তা পাস করানোর পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ওই আবগারি নীতি যদিও আট মাস পরে প্রত্যাহার করে নেয় দিল্লি সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে সাফ জানায়, রায় এমনভাবে দেওয়া হবে, যাতে সমস্ত বিচারবিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের অখণ্ডতা রক্ষা করবে। সম্প্রতি একাধিক মামলার রায় দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদী বিরোধী আইন (UAPA) বা বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) এর মত কঠোর আইনের ক্ষেত্রেও জামিন হচ্ছে নিয়ম, জেল হল ব্যতিক্রম। বিশেষ আইনের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। যেখানে জামিন অনুমোদন করা সম্ভব ৷ আদালত যদি তা মঞ্জুর না করে, তা হলে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ 21-এ দেওয়া অধিকারের বিরোধী হয়ে পড়ে।
শীর্ষ আদালত যদিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে প্রবেশ এবং ফাইলে স্বাক্ষর করার ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। প্রথমে বিচারপতি ভূইয়াঁ এই শর্তগুলির বিরুদ্ধে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত এই শর্তগুলি রেখে দেওয়ার পক্ষে মত দেন, কারণ নিষেধাজ্ঞাগুলি ইডি-র দায়ের করা অন্য একটি মামলায় কেজরিওয়ালকে জামিন দেওয়ার সময়ে আরোপ করা হয়েছিল।
আজকের এই রায়ের পর, আগামী 5 অক্টোবরের আসন্ন হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ণশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারবেন কেজরিওয়াল। হরিয়ানা নির্বাচনে আপ 90টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এছাড়াও, দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনেরও আর মাত্র চার মাস বাকি। কেজরিওয়ালের জামিন পাওয়ার পর মনে করা হচ্ছে মহিলাদের 1000 টাকার আর্থিক সহায়তার মতো দিল্লি সরকারের একধিক প্রকল্প রূপায়ণে আপ সরকার জোর দেবে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্য বিজেপির পক্ষে খুব সুখের হল না কারণ, দিল্লিতে বিরোধী আসনে বসা ভারতীয় জনতা পার্টি চেয়েছিল আপ সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুক। দিল্লি আবগারি মামলায় গ্রেপ্তারির পর কেজরিওয়াল পঞ্চম ব্যক্তি, যিনি জামিন পেলেন। এর আগে, দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে কবিতা এবং আপ নেতা দুর্গেশ পাঠক জামিনে মুক্ত হয়েছেন।