ETV Bharat / bharat

স্বপ্নকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করেছিলেন রামোজি রাও, প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ - RAMOJI RAO

গত বছর 7 জুন তিনি প্রয়াত হন ৷ সংবাদমাধ্যম থেকে সিনেমা নির্মাণ, প্রযোজনা, ফিল্ম সিটি তৈরি- এক বিশাল বর্ণময় জীবনের নাম রামোজি রাও ৷

Ramoji Rao
রামোজি রাও (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : June 8, 2025 at 6:07 AM IST

9 Min Read

হায়দরাবাদ: জীবনের শুরুর দিকটা খুবই সাধারণ ছিল ৷ একেবারে সাদামাটা মানুষ থেকে তেলেগুদের কাছে মহান হয়ে ওঠেন তিনি ৷ জীবন সংগ্রামে প্রতিটি যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়েছেন ৷ প্রতি মুহূর্তে তিনি কিছু না কিছু শিখেছেন ৷ একহাতে হাজার জনের কাজ করার ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে ৷ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাহুবলী ৷ একটাই জীবনে একজনের পক্ষে এতকিছু অর্জন করা সম্ভব ? রামোজি রাওয়ের এই যাত্রাপথ সত্যি সবাইকে অবাক করে দেবে ৷

এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামোজি রাও ৷ পরে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন ৷ কেউ কেউ বলে তিনি যা স্পর্শ করতেন, তাই সোনা হয়ে যেত ৷ কিন্তু প্রতিটি অর্জনের নেপথ্যে তাঁর গভীর ভাবনা, কৌশল, সংগ্রাম, প্রচেষ্টা, এবং পরিশ্রমকে খুব কম লোকই বুঝতে পেরেছিল ৷ একটি পাথরকে রত্নে পরিণত করার ক্ষমতা ছিল তাঁর ৷ প্রতিকূল সময়েও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সদর্থক ছিল ৷ জটিলতার মধ্যেও তিনি সুযোগ দেখতে পেতেন ৷ তাঁর একটাই মন্ত্র ছিল: পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন এগিয়ে চলো, পিছনে দেখো না ৷ লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত তিনি থামতেন না ৷

রামোজি রাও শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান (ইটিভি ভারত)

সাংবাদিকতায় অজস্র পথ খুলে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ সারাজীবন ধরে সাংবাদিকতার মান ধরে রেখেছিলেন ৷ ভারতের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে একটি দাগ কেটে গিয়েছেন তিনি, যা কোনও দিন মোছা যাবে না ৷ রঙিন হেডলাই, দুর্ধর্ষ ছবি, জেলার জন্য সংস্করণ, বিশেষ পাতা, মহিলাদের জন্য বসুন্ধরা, এনাডু ৷ রবিবারের ক্রোড়পত্র ছিল বইয়ের মতো এবং তুলনাহীন ৷ তেলেগু পাঠকদের কী চাই, তা তাঁর মতো আর কেউ বুঝতে পারেনি ৷ শিক্ষামূলক চাডুভু, সুখীভব, ই-নাডু, সিরি, ই-তরম, হি বুজ্জি, মকরন্দম এবং আহা, ইনাডু-তে সেই প্রতিফলন স্পষ্ট ৷

দৈনন্দিন খবরের কাগজ থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা, বিভিন্ন ভাষার টিভি চ্যানেল থেকে ওয়েবসাইট- সমাজকে জাগরণে রামোজি রাও একাধিক মঞ্চ ব্যবহার করেছিলেন ৷ তেলেগুভাষী জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দিক দিয়ে সজাগ করে তোলা এবং মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিতরণে তাঁর ভূমিকা বিশাল ব্যাপ্ত ৷ অভাবনীয় ইস্যুগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে জাগিয়ে তুলতেন তিনি ৷ খবরের কাগজে ছবির মূল্য কী, তা তিনিই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন ৷ কৃত্রিম আলো ছাড়া আসল ছবি ছাপার উপর জোর দিতেন তিনি ৷ কখনও কখনও হাজার হাজার ছবির মধ্যে থেকে নিজে বাছাই করে নিতেন ৷ পরের দিন সেই ছবিগুলিই টিভির অনুষ্ঠানে এমনকী বিধানসভাতেও চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠত ৷ তাঁর পর আর কেউ এই দূরদর্শিতা দেখাতে পারেননি ৷

খবরের কাগজকে মানুষের হাতে অস্ত্র হিসাবে তুলে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ তেলেগু সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয় ৷ 1983 সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টিকে সমর্থন করেন ৷ এরপর যখন টিডিপির মিশন সফল হল, তখন তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি মানুষের সঙ্গে রয়েছেন ৷ 1984 সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ইনাডু ৷ বিষয়বস্তুর পেশাদারিত্ব, প্রতিবেদনের নীতি, উৎপাদনের মান, প্রচার, বিতরণ, অথবা বিজ্ঞাপন- যাই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ তিনি জোর দিয়েছিলেন, সাংবাদিকতার একমাত্র মানদণ্ড হল যোগ্যতা এবং প্রচেষ্টা ৷ তিনি তাঁর সংবাদপত্রটিকে এমনভাবে পরিচালনা করেছিলেন, যাতে তা ব্যক্তি-নির্ভর না হয়ে যায় ৷

তিনি বিশ্বাস করতেন, একজনের বয়স বাড়তে পারে, কিন্তু সংবাদপত্র যেন সর্বদা সতেজ থাকে ৷ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হয়ে যায় ৷ তাঁর এই সতর্কবাণী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনই ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রেও ৷ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে ইনাডু ৷ তার কারণ নিরন্তর উদ্ভাবন এবং গতি ৷ রামোজি রাও বিশ্বাস করতেন, একটি সংবাদপত্রকে শুধু প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তার বাইরে যেতে হবে ৷ সংকটকালে সংবাদপত্রকে এগিয়ে গিয়ে নেতৃত্বের জায়গা নিতে হবে ৷ হাজার হাজার সাংবাদিক এবং পেশাদাররা তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের জীবন খুঁজে পেয়েছেন ৷ আজ ভারতের বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পেশাদারদের শিকড় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ইনাডু অথবা ইটিভিতে রয়েছে ৷ এটা বললেও অত্যুক্তি হবে না যে তাঁর প্রভাবে প্রভাবিত হননি, এমন কোনও ভারতীয় সাংবাদিক নেই ৷

ইনাডুর সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন নির্ভীক ৷ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি কখনও আপস করেননি ৷ যেখানেই সংবাদপত্রের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, সেখানেই তিনি লড়াই করেছেন ৷ এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি হিসেবে তিনি সেই স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ সাংবাদিকতায় তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল ইনাডুর আগেই অন্নদাতা পত্রিকা দিয়ে ৷ এই পত্রিকায় তাঁর কৃষক পটভূমি গভীরভাবে প্রোথিত ৷ এই পত্রিকা তেলুগু কৃষকদের কাছে বিশ্বের কৃষির খবর পৌঁছে দিত ৷

সাংবাদিকতায় অসংখ্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথিকৃৎ ইনাডু ৷ ইনাডু টেলিভিশন মিডিয়াকে যেভাবে নতুন রূপ দিয়েছে, তা তুলনাহীন ৷ সকালে কফির সঙ্গে ইনাডু, রাতে খাওয়ার সময় ইটিভির খবর দেখা- সব মিলিয়ে ইনাডু তেলুগুদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে ৷ ইটিভির 24 ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলগুলি একটি অনন্য ধারা বজায় রেখেছিল ৷ কোনও রকম চাঞ্চল্য ছাড়া বাস্তবতার কাছাকাছি ৷ ইটিভি অভিরুচুই, ইটিভি হেলথ, ইটিভি লাইফ, ইটিভি প্লাস এবং সিনেমার মতো চ্যানেলগুলি বৈচিত্র্য যোগ করেছিল ৷ ইটিভি বালা ভারত শিশুদের কাছে জ্ঞানের জগৎ খুলে দিয়েছে ৷ ভারতজুড়ে আঞ্চলিক ভাষার চ্যানেলগুলির পথিকৃৎ ছিলেন রামোজি রাও ৷ ইটিভি ভারতের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সংবাদ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন তিনি ।

তেলুগু ভাষা ছিল তাঁর হৃদস্পন্দন ৷ আধুনিক যুগের সমর্থক রামোজি ইংরেজি আধিপত্য বৃদ্ধির যুগে মুদ্রণ ও সম্প্রচারের মাধ্যমে খাঁটি তেলুগু প্রচার করেছিলেন ৷ মাসিক পত্রিকা ভিপুলা এবং চতুরা সহজ বোধগম্য ভাষায় সাহিত্য এবং গল্প প্রকাশ করেছে ৷ তিনি তেলুগু ভেলুগু, বালা ভারতম প্রকাশ করেছিলেন এবং এমনকী একটি তেলুগু কথ্য অভিধানও প্রকাশ করেছিলেন ৷ সিনেমা বিষয়ক সিতারা পত্রিকা এবং ইংরেজি সংবাদপত্র নিউজটাইমও পরিচালনা করেছিলেন রামোজি রাও ৷

জনসাধারণের মতামত তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল ৷ তিনি নিজে সমালোচনার জবাব দিতেন ৷ সঠিক সমালোচনা গ্রহণ করতেন এবং ভুল সংশোধন করতেন ৷ তাঁর স্বাক্ষরিত হাজার হাজার চিঠি এখন অমূল্য সম্পদ ৷ কোনও বিস্তারিত প্রতিবেদনের প্রতিটি শব্দ বিশ্লেষণে কর্মীদের মতামতের প্রতি সমান মনোযোগ দিতেন তিনি ।

মার্গদর্শী রামোজি রাও চিটফান্ড ব্যবসাকে কর্পোরেট মানে উন্নীত করেছিলেন ৷ 1962 সাল থেকে, মার্গাদর্শী দক্ষিণ ভারতে লক্ষ লক্ষ লোকের সেবা করেছে এবং এখন দেশের এক নম্বর চিটফান্ড ৷ রাজনৈতিক শক্তিগুলি যখন অন্যায়ভাবে এই চিটফান্ডকে নিশানা করেছিল, তখনও তিনি দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ গুজবের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যখন ভেঙে পড়ছিল, তখন মার্গদর্শী এবং রামোজি রাওয়ের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট ছিল ৷

খাদ্য শিল্পে তাঁর অবদানও সমানভাবে যুগান্তকারী ছিল ৷ ঐতিহ্যবাহী গৃহস্থালির অঙ্গ প্রিয়া পিকলস আন্তর্জাতিক মানের রফতানি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল ৷ বিশাখাপত্তনমে ডলফিন হোটেলের মাধ্যমে আতিথেয়তার জগতে তাঁর প্রবেশ নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছিল ৷ বছরের পর বছর ধরে আধুনিকীকরণের ফলে, ডলফিন এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছে ৷ রামোজি ফিল্ম সিটির অতিথিদেরও আতিথেয়তা দেয় এই হোটেল ৷

ফিল্ম সিটি ছিল রামোজি রাওয়ের স্বপ্নের প্রজেক্ট ৷ শহর থেকে অনেক দূরে অনুর্বর, পাথুরে জমিতে তৈরি, এই সিটি চলচ্চিত্রের উৎকর্ষতার একটি বিশ্বব্যাপী প্রতীক হয়ে উঠেছে ৷ 'একটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসো, ফাইনাল মুদ্রণটি নিয়ে যাও'- এই প্রতিশ্রুতি RFC-তে বাস্তবে পরিণত হয়েছে ৷ তিন হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রের আয়োজন করেছে ফিল্ম সিটি ৷ এটি বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র প্রযোজনা কেন্দ্র হিসাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে ৷ ফিল্ম সিটি এখন সিরিয়াল এবং ওয়েব সিরিজ প্রযোজনাও করে ৷ আজ, প্রায় 15 লক্ষ পর্যটক প্রতি বছর রামোজি ফিল্ম সিটিতে ঘুরতে আসে, যা হায়দরাবাদের মুকুটে একটি রত্ন ৷

1983 সালে রামোজি ঊষা কিরণ মুভিজের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজনার নতুন পথ খুলে দেন ৷ সেখানে বার্তা থাকবে, স্বাস্থ্যকর বিনোদনও ৷ তাঁর ময়ূরী, মৌনাপোরতম এবং প্রতিঘটনের মতো সিনেমাগুলি ইতিহাস তৈরি করেছে ৷ চিত্রম এবং নুভভে কাভালি প্রমাণ করে দিয়েছে, কম বাজেটের ছবিগুলিও ব্যাপক সফল হতে পারে ৷ তিনি শত শত নতুন তারকা এবং প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে কাজ করেছেন ৷ ETV WIN চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দল সফলভাবে ওটিটি-তে প্রবেশ করেছে এবং E-FMও পরিচালনা করে ৷

'কঠিন' এবং 'অসম্ভব' শব্দগুলি তাঁর শব্দভাণ্ডারে ছিল না ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, চ্যালেঞ্জ ছাড়া জীবন শূন্য ৷ তিনি চ্যালেঞ্জগুলি সরাসরি গ্রহণ করেছিলেন এবং সবাইকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ৷ তাঁর একটি মাত্র ভাষণ শুনে অলসরা চাঙ্গা হয়ে উঠত ৷ লাজুকরা আত্মবিশ্বাসী বক্তায় পরিণত হতেন ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন ডিগ্রির চেয়ে অধ্যবসায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারও মধ্যে কোনও স্ফুলিঙ্গ দেখতে পেলে তিনি তা লালন ও পরিমার্জন করতেন ৷ তাঁর নেতৃত্ব নিজেই ছিল একটি ব্যবস্থাপনা স্কুল, তাঁর নির্দেশনা, একটি মাস্টারক্লাস ৷

রামোজি রাও ছিলেন একজন অক্লান্ত চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব ৷ তিনি সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়ে নিজেকে একটি বিশাল বটবৃক্ষে রূপান্তরিত করেছিলেন ৷ অর্ধ শতাব্দী ধরে তেলুগু রাজনীতি, মিডিয়া এবং সমাজে তাঁর প্রভাব ছিল অতুলনীয় ৷ তাঁর ছয় দশকের ব্যবসায়িক যাত্রাপথে তিনি একটি সাম্রাজ্য তৈরি করে গিয়েছেন ৷ যার সঙ্গে হাজার হাজার পরিবার যুক্ত ৷ খুব কম ভারতীয় ব্যবসায়ীই এত বিস্তারিত পদচিহ্ন রেখে যেতে সমর্থ হয়েছেন ৷ তাঁর বিশাল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, ভারত সরকার তাঁকে 2016 সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে।

রামোজি রাও একজন কর্মযোগী ৷ যেখানে অন্ধকার, সেখানে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছেন তিনি ৷ শুধু একটা জীবন নয়, তিনি ঐতিহ্যের নাম রামোজি রাও ৷

হায়দরাবাদ: জীবনের শুরুর দিকটা খুবই সাধারণ ছিল ৷ একেবারে সাদামাটা মানুষ থেকে তেলেগুদের কাছে মহান হয়ে ওঠেন তিনি ৷ জীবন সংগ্রামে প্রতিটি যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়েছেন ৷ প্রতি মুহূর্তে তিনি কিছু না কিছু শিখেছেন ৷ একহাতে হাজার জনের কাজ করার ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে ৷ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাহুবলী ৷ একটাই জীবনে একজনের পক্ষে এতকিছু অর্জন করা সম্ভব ? রামোজি রাওয়ের এই যাত্রাপথ সত্যি সবাইকে অবাক করে দেবে ৷

এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামোজি রাও ৷ পরে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন ৷ কেউ কেউ বলে তিনি যা স্পর্শ করতেন, তাই সোনা হয়ে যেত ৷ কিন্তু প্রতিটি অর্জনের নেপথ্যে তাঁর গভীর ভাবনা, কৌশল, সংগ্রাম, প্রচেষ্টা, এবং পরিশ্রমকে খুব কম লোকই বুঝতে পেরেছিল ৷ একটি পাথরকে রত্নে পরিণত করার ক্ষমতা ছিল তাঁর ৷ প্রতিকূল সময়েও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সদর্থক ছিল ৷ জটিলতার মধ্যেও তিনি সুযোগ দেখতে পেতেন ৷ তাঁর একটাই মন্ত্র ছিল: পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন এগিয়ে চলো, পিছনে দেখো না ৷ লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত তিনি থামতেন না ৷

রামোজি রাও শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান (ইটিভি ভারত)

সাংবাদিকতায় অজস্র পথ খুলে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ সারাজীবন ধরে সাংবাদিকতার মান ধরে রেখেছিলেন ৷ ভারতের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে একটি দাগ কেটে গিয়েছেন তিনি, যা কোনও দিন মোছা যাবে না ৷ রঙিন হেডলাই, দুর্ধর্ষ ছবি, জেলার জন্য সংস্করণ, বিশেষ পাতা, মহিলাদের জন্য বসুন্ধরা, এনাডু ৷ রবিবারের ক্রোড়পত্র ছিল বইয়ের মতো এবং তুলনাহীন ৷ তেলেগু পাঠকদের কী চাই, তা তাঁর মতো আর কেউ বুঝতে পারেনি ৷ শিক্ষামূলক চাডুভু, সুখীভব, ই-নাডু, সিরি, ই-তরম, হি বুজ্জি, মকরন্দম এবং আহা, ইনাডু-তে সেই প্রতিফলন স্পষ্ট ৷

দৈনন্দিন খবরের কাগজ থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা, বিভিন্ন ভাষার টিভি চ্যানেল থেকে ওয়েবসাইট- সমাজকে জাগরণে রামোজি রাও একাধিক মঞ্চ ব্যবহার করেছিলেন ৷ তেলেগুভাষী জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দিক দিয়ে সজাগ করে তোলা এবং মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিতরণে তাঁর ভূমিকা বিশাল ব্যাপ্ত ৷ অভাবনীয় ইস্যুগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে জাগিয়ে তুলতেন তিনি ৷ খবরের কাগজে ছবির মূল্য কী, তা তিনিই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন ৷ কৃত্রিম আলো ছাড়া আসল ছবি ছাপার উপর জোর দিতেন তিনি ৷ কখনও কখনও হাজার হাজার ছবির মধ্যে থেকে নিজে বাছাই করে নিতেন ৷ পরের দিন সেই ছবিগুলিই টিভির অনুষ্ঠানে এমনকী বিধানসভাতেও চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠত ৷ তাঁর পর আর কেউ এই দূরদর্শিতা দেখাতে পারেননি ৷

খবরের কাগজকে মানুষের হাতে অস্ত্র হিসাবে তুলে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ তেলেগু সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয় ৷ 1983 সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টিকে সমর্থন করেন ৷ এরপর যখন টিডিপির মিশন সফল হল, তখন তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি মানুষের সঙ্গে রয়েছেন ৷ 1984 সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ইনাডু ৷ বিষয়বস্তুর পেশাদারিত্ব, প্রতিবেদনের নীতি, উৎপাদনের মান, প্রচার, বিতরণ, অথবা বিজ্ঞাপন- যাই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছিলেন রামোজি রাও ৷ তিনি জোর দিয়েছিলেন, সাংবাদিকতার একমাত্র মানদণ্ড হল যোগ্যতা এবং প্রচেষ্টা ৷ তিনি তাঁর সংবাদপত্রটিকে এমনভাবে পরিচালনা করেছিলেন, যাতে তা ব্যক্তি-নির্ভর না হয়ে যায় ৷

তিনি বিশ্বাস করতেন, একজনের বয়স বাড়তে পারে, কিন্তু সংবাদপত্র যেন সর্বদা সতেজ থাকে ৷ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হয়ে যায় ৷ তাঁর এই সতর্কবাণী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনই ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রেও ৷ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে ইনাডু ৷ তার কারণ নিরন্তর উদ্ভাবন এবং গতি ৷ রামোজি রাও বিশ্বাস করতেন, একটি সংবাদপত্রকে শুধু প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তার বাইরে যেতে হবে ৷ সংকটকালে সংবাদপত্রকে এগিয়ে গিয়ে নেতৃত্বের জায়গা নিতে হবে ৷ হাজার হাজার সাংবাদিক এবং পেশাদাররা তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের জীবন খুঁজে পেয়েছেন ৷ আজ ভারতের বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পেশাদারদের শিকড় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ইনাডু অথবা ইটিভিতে রয়েছে ৷ এটা বললেও অত্যুক্তি হবে না যে তাঁর প্রভাবে প্রভাবিত হননি, এমন কোনও ভারতীয় সাংবাদিক নেই ৷

ইনাডুর সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন নির্ভীক ৷ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি কখনও আপস করেননি ৷ যেখানেই সংবাদপত্রের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, সেখানেই তিনি লড়াই করেছেন ৷ এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি হিসেবে তিনি সেই স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ সাংবাদিকতায় তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল ইনাডুর আগেই অন্নদাতা পত্রিকা দিয়ে ৷ এই পত্রিকায় তাঁর কৃষক পটভূমি গভীরভাবে প্রোথিত ৷ এই পত্রিকা তেলুগু কৃষকদের কাছে বিশ্বের কৃষির খবর পৌঁছে দিত ৷

সাংবাদিকতায় অসংখ্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথিকৃৎ ইনাডু ৷ ইনাডু টেলিভিশন মিডিয়াকে যেভাবে নতুন রূপ দিয়েছে, তা তুলনাহীন ৷ সকালে কফির সঙ্গে ইনাডু, রাতে খাওয়ার সময় ইটিভির খবর দেখা- সব মিলিয়ে ইনাডু তেলুগুদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে ৷ ইটিভির 24 ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলগুলি একটি অনন্য ধারা বজায় রেখেছিল ৷ কোনও রকম চাঞ্চল্য ছাড়া বাস্তবতার কাছাকাছি ৷ ইটিভি অভিরুচুই, ইটিভি হেলথ, ইটিভি লাইফ, ইটিভি প্লাস এবং সিনেমার মতো চ্যানেলগুলি বৈচিত্র্য যোগ করেছিল ৷ ইটিভি বালা ভারত শিশুদের কাছে জ্ঞানের জগৎ খুলে দিয়েছে ৷ ভারতজুড়ে আঞ্চলিক ভাষার চ্যানেলগুলির পথিকৃৎ ছিলেন রামোজি রাও ৷ ইটিভি ভারতের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সংবাদ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন তিনি ।

তেলুগু ভাষা ছিল তাঁর হৃদস্পন্দন ৷ আধুনিক যুগের সমর্থক রামোজি ইংরেজি আধিপত্য বৃদ্ধির যুগে মুদ্রণ ও সম্প্রচারের মাধ্যমে খাঁটি তেলুগু প্রচার করেছিলেন ৷ মাসিক পত্রিকা ভিপুলা এবং চতুরা সহজ বোধগম্য ভাষায় সাহিত্য এবং গল্প প্রকাশ করেছে ৷ তিনি তেলুগু ভেলুগু, বালা ভারতম প্রকাশ করেছিলেন এবং এমনকী একটি তেলুগু কথ্য অভিধানও প্রকাশ করেছিলেন ৷ সিনেমা বিষয়ক সিতারা পত্রিকা এবং ইংরেজি সংবাদপত্র নিউজটাইমও পরিচালনা করেছিলেন রামোজি রাও ৷

জনসাধারণের মতামত তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল ৷ তিনি নিজে সমালোচনার জবাব দিতেন ৷ সঠিক সমালোচনা গ্রহণ করতেন এবং ভুল সংশোধন করতেন ৷ তাঁর স্বাক্ষরিত হাজার হাজার চিঠি এখন অমূল্য সম্পদ ৷ কোনও বিস্তারিত প্রতিবেদনের প্রতিটি শব্দ বিশ্লেষণে কর্মীদের মতামতের প্রতি সমান মনোযোগ দিতেন তিনি ।

মার্গদর্শী রামোজি রাও চিটফান্ড ব্যবসাকে কর্পোরেট মানে উন্নীত করেছিলেন ৷ 1962 সাল থেকে, মার্গাদর্শী দক্ষিণ ভারতে লক্ষ লক্ষ লোকের সেবা করেছে এবং এখন দেশের এক নম্বর চিটফান্ড ৷ রাজনৈতিক শক্তিগুলি যখন অন্যায়ভাবে এই চিটফান্ডকে নিশানা করেছিল, তখনও তিনি দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ গুজবের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যখন ভেঙে পড়ছিল, তখন মার্গদর্শী এবং রামোজি রাওয়ের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট ছিল ৷

খাদ্য শিল্পে তাঁর অবদানও সমানভাবে যুগান্তকারী ছিল ৷ ঐতিহ্যবাহী গৃহস্থালির অঙ্গ প্রিয়া পিকলস আন্তর্জাতিক মানের রফতানি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল ৷ বিশাখাপত্তনমে ডলফিন হোটেলের মাধ্যমে আতিথেয়তার জগতে তাঁর প্রবেশ নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছিল ৷ বছরের পর বছর ধরে আধুনিকীকরণের ফলে, ডলফিন এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছে ৷ রামোজি ফিল্ম সিটির অতিথিদেরও আতিথেয়তা দেয় এই হোটেল ৷

ফিল্ম সিটি ছিল রামোজি রাওয়ের স্বপ্নের প্রজেক্ট ৷ শহর থেকে অনেক দূরে অনুর্বর, পাথুরে জমিতে তৈরি, এই সিটি চলচ্চিত্রের উৎকর্ষতার একটি বিশ্বব্যাপী প্রতীক হয়ে উঠেছে ৷ 'একটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসো, ফাইনাল মুদ্রণটি নিয়ে যাও'- এই প্রতিশ্রুতি RFC-তে বাস্তবে পরিণত হয়েছে ৷ তিন হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রের আয়োজন করেছে ফিল্ম সিটি ৷ এটি বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র প্রযোজনা কেন্দ্র হিসাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে ৷ ফিল্ম সিটি এখন সিরিয়াল এবং ওয়েব সিরিজ প্রযোজনাও করে ৷ আজ, প্রায় 15 লক্ষ পর্যটক প্রতি বছর রামোজি ফিল্ম সিটিতে ঘুরতে আসে, যা হায়দরাবাদের মুকুটে একটি রত্ন ৷

1983 সালে রামোজি ঊষা কিরণ মুভিজের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজনার নতুন পথ খুলে দেন ৷ সেখানে বার্তা থাকবে, স্বাস্থ্যকর বিনোদনও ৷ তাঁর ময়ূরী, মৌনাপোরতম এবং প্রতিঘটনের মতো সিনেমাগুলি ইতিহাস তৈরি করেছে ৷ চিত্রম এবং নুভভে কাভালি প্রমাণ করে দিয়েছে, কম বাজেটের ছবিগুলিও ব্যাপক সফল হতে পারে ৷ তিনি শত শত নতুন তারকা এবং প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে কাজ করেছেন ৷ ETV WIN চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দল সফলভাবে ওটিটি-তে প্রবেশ করেছে এবং E-FMও পরিচালনা করে ৷

'কঠিন' এবং 'অসম্ভব' শব্দগুলি তাঁর শব্দভাণ্ডারে ছিল না ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, চ্যালেঞ্জ ছাড়া জীবন শূন্য ৷ তিনি চ্যালেঞ্জগুলি সরাসরি গ্রহণ করেছিলেন এবং সবাইকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ৷ তাঁর একটি মাত্র ভাষণ শুনে অলসরা চাঙ্গা হয়ে উঠত ৷ লাজুকরা আত্মবিশ্বাসী বক্তায় পরিণত হতেন ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন ডিগ্রির চেয়ে অধ্যবসায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারও মধ্যে কোনও স্ফুলিঙ্গ দেখতে পেলে তিনি তা লালন ও পরিমার্জন করতেন ৷ তাঁর নেতৃত্ব নিজেই ছিল একটি ব্যবস্থাপনা স্কুল, তাঁর নির্দেশনা, একটি মাস্টারক্লাস ৷

রামোজি রাও ছিলেন একজন অক্লান্ত চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব ৷ তিনি সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়ে নিজেকে একটি বিশাল বটবৃক্ষে রূপান্তরিত করেছিলেন ৷ অর্ধ শতাব্দী ধরে তেলুগু রাজনীতি, মিডিয়া এবং সমাজে তাঁর প্রভাব ছিল অতুলনীয় ৷ তাঁর ছয় দশকের ব্যবসায়িক যাত্রাপথে তিনি একটি সাম্রাজ্য তৈরি করে গিয়েছেন ৷ যার সঙ্গে হাজার হাজার পরিবার যুক্ত ৷ খুব কম ভারতীয় ব্যবসায়ীই এত বিস্তারিত পদচিহ্ন রেখে যেতে সমর্থ হয়েছেন ৷ তাঁর বিশাল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, ভারত সরকার তাঁকে 2016 সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে।

রামোজি রাও একজন কর্মযোগী ৷ যেখানে অন্ধকার, সেখানে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছেন তিনি ৷ শুধু একটা জীবন নয়, তিনি ঐতিহ্যের নাম রামোজি রাও ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.