পুরী ও কলকাতা, 12 মে: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ৷ পুরীর জগন্নাথ ধামের সেই দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রকে বরখাস্ত করল 'শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' (এসজিটিএ) ৷ আগামী 30 দিন তিনি শ্রীমন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না ৷ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
এই বিষয়ে এসজিটিএ-র প্রধান অরবিন্দ পাধির একটি বিবৃতি দিয়েছেন ৷ সেই বিবৃতি অনুযায়ী, আগামী একমাস শ্রীমন্দিরের কোনও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না দাসমহাপাত্র ৷ এই সময়ের মধ্যে মন্দিরের কোনও অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না ৷ রথযাত্রার সময় প্রভু জগন্নাথের দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকেন বেশ কয়েকজন দয়িতাপতি ৷ সেখানে কাদের কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, সচিব হিসেবে তা ঠিক করেন দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র ৷

এবারও তিনি সেই দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে ৷ এবার রথযাত্রা 27 জুন ৷ একমাসের হিসেবে তার আগেই রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে ৷ তবু এই দায়িত্বে তাঁকেই রাখা হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয় ৷ কারণ, এই বিবৃতিতেই বলা হয়েছে, এসজিটিএ-র নিয়ম পালন না-করা হলে বরখাস্ত থাকার মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে ৷ দয়িতাপতির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ আগামী এক মাস মন্দিরের কমান্ডার এবং সিনিয়র সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রের আচরণ সম্পর্কে মতামত জানাবেন ৷ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে ৷
আগই দুবার শো-কজ নোটিশ
দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রের বিরুদ্ধে দুটি শো-কজ নোটিশ জারি করেছিল এসজিটিএ ৷ গত 30 এপ্রিল দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র ৷ এরপর প্রথম নোটিসটি দেওয়া হয় 4 মে ৷ সেখানে তাঁকে 2015 সালের 'নবকলেবর' উৎসবের সময় সংগৃহীত পবিত্র কাঠ দিয়ে দিঘার জগন্নাথ মূর্তি তৈরির অভিযোগের ব্যাখ্যা চাওয়া হয় ৷ অবশ্য তদন্তের পর ওড়িশা সরকারের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানান, 2015 সালের 'নবকলেবর' অনুষ্ঠানের পবিত্র কাঠ দিঘার মন্দিরে ব্যবহার করা হয়নি ৷ দ্বিতীয় শো-কজ নোটিশটি পাঠানো হয় 9 মে ৷ সেখানে এসজেটিএ-এর তরফে জানতে চাওয়া হয়, ‘দিঘা জগন্নাথ ধাম’ লেখা থাকা সত্ত্বেও ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন অংশ নিয়েছিলেন দয়িতাপতি ? অবশেষে, সন্তোষজনক জবাব না-পেয়ে দ্বৈতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রকে 30 দিনের জন্য বরখাস্ত করা হল ।
মন্দির-কর্তৃপক্ষের বিবৃতি
এই প্রসঙ্গে এসজিটিএ প্রধান অরবিন্দ পাধি জানান, শ্রীমন্দিরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ তাঁর কথায়, "আমাদের সকলের কর্তব্য হল মন্দিরের ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আচার-অনুষ্ঠান এবং শ্রীধামের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা ৷ এভাবেই আমরা ভগবান জগন্নাথের প্রতি আমাদের ভক্তির প্রদর্শন করতে পারি। আগামিদিনেও এই ধরনের কোনও বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না ।"
Senior servitor Ramakrushna Dasmohapatra has been suspended for 30 days by Shree Jagannath Temple Administration (SJTA).
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) May 11, 2025
I welcome this decisive action in light of his unethical involvement in the Digha Jagannath Cultural Center controversy.
He got influenced by Mamata Banerjee… pic.twitter.com/NMIvh7kLIq
অন্যদিকে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শুভেন্দু ৷ এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, "আগামী 30 দিনের জন্য দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রকে বরখাস্ত করা হয়েছে ৷ এসজিটিএ-র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুরীর শ্রী জগন্নাথ ধামের পবিত্র নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অপপ্রচার চালান তিনি ৷ পরে অবশ্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি সামনে আসে ৷ দিঘা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে পুরীর জগন্নাথ ধামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও তুলে ধরেন তিনি ৷ তাঁকে সাসপেন্ড করে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে । এই সিদ্ধান্তে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষ নিশ্চিতভাবে খুশি হবেন ৷"