নয়াদিল্লি, 27 এপ্রিল: ফের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনল এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং)। সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হল মুঘল এবং দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য । পরিবর্তে ভারতীয় রাজবংশের উপর অধ্যায়, পবিত্র ভূগোল ও চলতি বছর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে হওয়া মহাকুম্ভ-সহ মেক ইন ইন্ডিয়া এবং বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও-এর মতো সরকারি উদ্যোগগুলি নতুন সংযোজন করা হয়েছে ।
এই সপ্তাহে প্রকাশিত নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলি নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP) এবং স্কুল শিক্ষার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো (NCFSE) 2023 এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ডিজাইন করা হয়েছে । যা স্কুল শিক্ষায় ভারতীয় ঐতিহ্য, দর্শন, জ্ঞান ব্যবস্থা এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে অন্তর্ভুক্ত করার উপর জোর দেয় ।
এই বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে এনসিইআরটি কর্মকর্তারা জানান, এগুলো বইয়ের প্রথম অংশ এবং দ্বিতীয় অংশ আগামী কয়েকমাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তবে বাদ পড়া অংশগুলি বইয়ের দ্বিতীয় অংশে রাখা হবে কিনা সে বিষয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি ।
যদিও এনসিইআরটি পূর্বে মুঘল এবং দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের উপর কিছু অংশ ছাঁটাই করেছিল — যার মধ্যে ছিল তুঘলক, খলজি, মামলুক এবং লোদিদের মতো রাজবংশের বিস্তারিত বিবরণ । 2022-23 সালে করোনা মহামারীর সময় তার পাঠ্যক্রমের যুক্তিসঙ্গতকরণের অংশ হিসাবে মুঘল সম্রাটদের কৃতিত্বের উপর দুই পৃষ্ঠার একটি টেবিল ছিল, নতুন পাঠ্যপুস্তক থেকে সেগুলি সমস্ত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । বইটিতে এখন যে নতুন অধ্যায় রয়েছে সেখানে মুঘল এবং দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের কোনও উল্লেখ নেই ।
'এক্সপ্লোরিং সোসাইটি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড' নামক সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে মগধ, মৌর্য, শুঙ্গ এবং সাতবাহনের মতো প্রাচীন ভারতীয় রাজবংশের উপর নতুন অধ্যায় রয়েছে । যেখানে ভারতীয় নীতির উপর আলোকপাত করা হয়েছে । বইয়ের আরেকটি নতুন সংস্করণ হল 'ভূমি কীভাবে পবিত্র হয়' নামক একটি অধ্যায় । যা ভারত এবং ভারতের বাইরে ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, ইহুদি ধর্ম, জরাথুষ্ট্র ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং শিখ ধর্মের জন্য পবিত্র বলে বিবেচিত স্থান এবং তীর্থস্থানগুলির উপর আলোকপাত করে ।
অধ্যায়টিতে 'পবিত্র ভূগোল' এর মতো ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে । যেখানে 12টি জ্যোতির্লিঙ্গ, চারধাম যাত্রা এবং শক্তিপীঠের মতো স্থানগুলির বিবরণ দেওয়া হয়েছে । অধ্যায়টিতে নদীর সঙ্গমস্থল, পাহাড় এবং বনের মতো স্থানগুলিরও বিবরণ দেওয়া হয়েছে । এই লেখাটিতে জওহরলাল নেহরুর একটি উক্তি রয়েছে, যিনি ভারতকে তীর্থভূমি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন - বদ্রীনাথ এবং অমরনাথের বরফাচ্ছাদিত শৃঙ্গ থেকে শুরু করে কন্যাকুমারীর দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত ।
পাঠ্যপুস্তকে দাবি করা হয়েছে যে, বর্ণ-জাতি ব্যবস্থা প্রথমে সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রদান করলেও, পরে এটি অনমনীয় হয়ে ওঠে । বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসনকালে, যার ফলে বৈষম্য দেখা দেয় ।এই বছরের শুরুতে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলারও উল্লেখ রয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে যে কীভাবে প্রায় 66 কোটি মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন । পদদলিত হয়ে 30 জন তীর্থযাত্রী মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহত হন, সেই ঘটনার কোনও উল্লেখ নেই ।মেক ইন ইন্ডিয়া, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এবং অটল টানেলের মতো সরকারি উদ্যোগের উল্লেখ নতুন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
বইটিতে ভারতের সংবিধানের একটি অধ্যায়ও রয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে একটা সময় ছিল যখন মানুষের বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর অনুমতি ছিল না । অধ্যায়ে লেখা হয়েছে, "2004 সালে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় যখন একজন নাগরিক মনে করেন যে দেশের প্রতি গর্ব প্রকাশ করা তার অধিকার এবং আদালতে এই নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করেন । সুপ্রিম কোর্ট একমত হয়ে বলে যে পতাকা ওড়ানো মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের অংশ । আমরা এখন গর্বের সঙ্গে তেরঙা ওড়াতে পারি, মনে রাখবেন এটি কখনই অসম্মানিত হওয়া উচিত নয় ।"
'পূর্বী' নামক ইংরেজি পাঠ্যপুস্তকে 15টি গল্প, কবিতা এবং আখ্যানের মধ্যে নয়টি ভারতীয় লেখক বা বৈশিষ্ট্য বিষয়বস্তু এবং ভারতীয় চরিত্রদের লেখা, যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এপিজে আবদুল কালাম এবং রাস্কিন বন্ডের লেখাও রয়েছে । 'হানিকম্ব' নামক পূর্ববর্তী পাঠ্যপুস্তকে 17টি গল্প, কবিতা এবং অন্যান্য লেখা ছিল, যার মধ্যে চারটি ভারতীয় লেখকদের লেখা ছিল ।
এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকের এই সংস্কার, বিরোধী দলগুলির সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে । যারা এই সংস্কারকে 'গেরুয়াকরণ' বলে অভিহিত করেছেন । এনসিইআরটি পরিচালক দীনেশ প্রসাদ সাকলানি গত বছর পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, "দাঙ্গা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া ছোট বাচ্চাদের নেতিবাচক নাগরিক করে তুলতে পারে ।"