নয়াদিল্লি, 26 জুলাই: বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অসমের অহম রাজবংশের কবরের ঢিবি 'মইডাম' ৷ মৃত্যুর পর এখানেই কবর দেওয়া হত অহম রাজবংশের প্রতিনিধিদের ৷ সেই অনন্য কবরের ঢিবিগুলিই 'মইডাম' নামে পরিচিত ৷ এটিকে উত্তর-পূর্বের প্রথম সাংস্কৃতিক সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো ৷
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অহম রাজবংশের ঢিবির আকারে কবরস্থান, চরাইদেও মইডামকে বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করল ইউনেস্কো ৷ এই স্থান অহম শাসনের 600 বছরের সোনালি ইতিহাসের সাক্ষী ৷ 21জুলাই থেকে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির 46তম সম্মেলনে অহম রাজত্বের কাহিনি এবং তাদের গৌরব বর্ণনাকারী অহম রাজবংশের স্মৃতিস্তম্ভ এই পবিত্র সমাধিস্থলকে বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
🔴 BREAKING!
— UNESCO 🏛️ #Education #Sciences #Culture 🇺🇳 (@UNESCO) July 26, 2024
New inscription on the @UNESCO #WorldHeritage List: Moidams – the Mound-Burial System of the Ahom Dynasty, #India 🇮🇳.
➡️https://t.co/FfOspAHOlX #46WHC pic.twitter.com/H3NU2AdtIq
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ৷ তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "এই বিশাল ব্যাপার ৷ মইডাম সাংস্কৃতিক সম্পত্তি বিভাগের অধীনে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে - অসমের জন্য এটা একটি দুর্দান্ত জয় ৷ ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজি, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সদস্য এবং অসমের জনগণকে ৷"
World Heritage Committee announces inclusion of Moidams- the Mound-Burial System of the Ahom Dynasty Assam, India as the 43rd World Heritage Site from India#WHC#46WHC#IndianHeritage@gssjodhpur @MinOfCultureGoI @secycultureGOI @PIB_India @MIB_India pic.twitter.com/Y3SCbPt1bZ
— PIB Culture (@PIBCulture) July 26, 2024
চরাইদেও মইডাম কী?
2023-24 সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ভারতের মনোনয়ন হিসাবে 'মইডাম'-এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল । কেন্দ্রীয় সরকার 2014 সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের প্রাথমিক তালিকায় স্থান করে নেওয়ার জন্য ইউনেস্কোতে চড়াইদেও মইডামের নাম পাঠানোর পর কেন্দ্রীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল এবং ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার চরাইদেও মইডাম পরিদর্শন করেন ।
অসমের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রাজার শাসনকালে নির্মিত সমাধির উপস্থিতি দেখা যায় । যা স্থানীয় ভাষায় পরিচিত মইডাম হিসেবে ৷ অন্যান্য স্থানের তুলনায় রাজ্যের উচ্চ অসম অঞ্চলে অবস্থিত এবং অহম রাজ্যের পূর্ববর্তী রাজধানী চরাইদেওতে বিপুল সংখ্যক ঐতিহাসিক মইডাম রয়েছে । এই মইডামগুলো মৃতের কবরস্থান । তাই-অহম রাজংবশের প্রতিনিধিরা মৃতদেহ পোড়ানোর পরিবর্তে সমাধি দেওয়ার ঐতিহ্য পালন করতেন । রাজার মৃত্যু হলে তাঁর বংশের লোকেরা সমাধিস্থলে একটি মইডাম নির্মাণ করতেন । সেই ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, তাই-অহমরা মইডামগুলিকে পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করে আসছে ।
চড়াইদেও মইডামের ইতিহাস:
চরাইদেও মইডাম বৃহত্তম ভূমি এলাকা যেখানে প্রচুর সংখ্যক মইডাম রয়েছে, যা অহম রাজ্যের শাসনকালে নির্মিত হয়েছিল । ইতিহাসে উল্লিখিত মইডামগুলি চরাইদেও মইডাম নামে পরিচিত, যেখানে রাজপরিবারের সদস্যদের কবর দেওয়া হত । অহম রাজা চাওলুং সুকাফা তাঁর রাজত্বকালে চরাইদেওতে রাজধানী স্থাপন করেন । সেই থেকে অহম রাজা এবং রাজপরিবারের মৃতদেহগুলিকে সেখানে সমাধি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইতিহাসবিদ ডোমব্রুধর রাজকনওয়ার ।
ঐতিহাসিক চরাইদেও মইডাম এলাকায় 578 বিঘা জমিতে 42 জন অহম রাজার সমাধিস্থল রয়েছে । এ ছাড়া চরইদেও মইডামের কাছে বিভিন্ন ছোট ছোট মইডাম রয়েছে, যা রাজার পরিবারের সদস্যদের সমাধিস্থল বলে মনে করা হয় ।
ঐতিহাসিক ডোমব্রুধর রাজকনওয়ারের মতে, এমন একটি সময় ছিল যখন অহম রাজবংশের কেউ অন্য কোথাও মারা গেলেও তাঁদের মৃতদেহ চড়াইদেওতে এনেই কবর দেওয়া হত এবং তারপরে মইডাম স্থাপন করা হত । এখনও পর্যন্ত পুরো চরইদেও জেলায় দেড় শতাধিক মইডাম উদ্ধার করা হয়েছে । তবে মইডাম আবিষ্কার ও শনাক্তকরণে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও ঐতিহাসিকরা এখনও কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ঐতিহাসিক রাজকনওয়ার ৷
চড়াইদেও মইডাম এলাকার ভিতরে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকবার সেখানে খনন করা হয়েছে । প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খননকালে অহম আমলে ব্যবহৃত সামগ্রী উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে । বহু বছর ধরে সবাই দাবি করে আসছিল যে, অহম শাসনের সোনালি ইতিহাসের স্বাক্ষর বহনকারী এই ঐতিহাসিক চরাইদেও মইডাম এলাকাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হোক । কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ।