পুরী (ওড়িশা), 11 জুন: পুরীতে চলছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা উৎসব ৷ স্নানের পর বুধবার দেবতাদের হাতির মতো পোশাক (হাতিবেশা) পরানো হয়েছে, যা তাদের ঐশ্বরিক এবং মহিমান্বিত রূপের প্রতীক । এই মহা স্নানযাত্রা উৎসব দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ ভক্ত ৷
বুধবার ভোরে ত্রিমূর্তিগুলিকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে স্নানের জন্য মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এদিন মহা স্নানযাত্রার জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয় মণ্ডপটি । পুরীর জগন্নাথ ধাম প্রাঙ্গণে অবস্থিত সোনার কূপ (সুনা কুয়া) থেকে আনা 108 ঘড়া পবিত্র জল দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্নান করানো হয় । এরপরই বিকেল সাড়ে 3টার দিকে পুরীর রাজা গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব 'স্নান মণ্ডপ' ঝাড়ু দেওয়ার অনুষ্ঠান করবেন ।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এক আধিকারিক বলেন, "শ্রী সুদর্শনকে প্রথমে মন্দির থেকে বের করে আনা হয় এবং ভোর 5টা 45 মিনিটে স্নানবেদীতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে । এরপর, ভগবান বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা এবং ভগবান জগন্নাথের মূর্তি স্নানবেদীতে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ 'পহান্ডি' অনুষ্ঠান সকাল 8টা 55 মিনিটে সম্পন্ন হয় ।"
বুধবার পুরীর মন্দির প্রাঙ্গণে একটি খোলা প্যান্ডেলে স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান হয় ৷ এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন ৷ পুরীর সাংসদ সম্বিত পাত্রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী 'উত্তর দ্বার' দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং সকালের প্রার্থনা ও দেবতাদের আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা প্রত্যক্ষ করেন ৷

এদিন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি সোশাল মিডিয়া পোস্টে স্নানযাত্রা নিয়ে বলেন, "আজ পবিত্র দেবস্নান পূর্ণিমা উপলক্ষে আমি সন্নুবেদীর চতুর্ধামূর্তি দর্শন করেছি ৷ রাজ্য ও এর জনগণের কল্যাণ এবং উন্নত ওড়িশা গড়ে তোলার জন্য আশীর্বাদ চেয়েছি । প্রভুর কৃপায় সকলের জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক ।"

জানা গিয়েছে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ক্যালেন্ডারে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে 7টা থেকে 'সাহন মেলা' বা জনসাধারণকে মূর্তি দর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে । স্নানের পর অসুস্থ হওয়ায় দেবতাদের দ্বাদশ শতাব্দীর মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে এবং 14 দিন 'অনাসার ঘর'-এ (আইসোলেশন রুম) রাখা হবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে । মন্দিরের 'বৈদ্য' (চিকিৎসক) ভেষজ ওষুধ দিয়ে তাদের চিকিৎসা করবেন এবং দেবতাদের জনসাধারণের দর্শন 26 জুন 'নবজৌবন দর্শন' পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ৷ 27 জুন বার্ষিক রথযাত্রার দিন সকলে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দর্শন পাবেন ।

উল্লেখ্য, স্নানযাত্রা, যা দেবস্নান পূর্ণিমা নামেও পরিচিত, হিন্দু ক্যালেন্ডারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র উৎসব । এটি জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়, যা সাধারণত জুন বা জুলাই মাসে পড়ে এবং ভগবান জগন্নাথ তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার পবিত্র স্নান ও দিব্য সুদর্শন চক্রকে চিহ্নিত করে ।