দেরাদুন (উত্তরাখণ্ড), 6 সেপ্টেম্বর: কথায় আছে গোবর গণেশ ৷ তবে এক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থ অন্য হলেও এবার গোবর গণেশ তৈরি হচ্ছে দেরাদুনে ৷ রাজ্যের কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠী গোবর থেকে গণেশের মূর্তি তৈরি করছে । অন্যান্যর থেকে এই মূর্তির চাহিদা বেশি । এছাড়াও এই প্রতিমা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ৷
উৎসব শুরুর প্রায় তিন-চার মাস আগে থেকেই প্রতিমা তৈরি শুরু করেন এখানকার শিল্পীরা । দেরাদুনে স্বদেশ কুটুম্ব নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে ৷ তারা গোবর থেকে গণেশের মূর্তি তৈরি করে । গ্রীষ্মকাল থেকেই প্রতিমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় । সনাতন ধর্মে গোবরকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয় । এই কারণেই যে কোনও পূজা বা আচারের সময় গোবর ব্যবহার করা হয় । এই ভাবনা থেকেই গোবর দিয়ে গণেশের মূর্তি তৈরি করছেন স্বদেশ কুটুম্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকেরা । ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময় গ্রুপের প্রশিক্ষক পবন থাপা জানান যে, পুজো শেষের পর যখন গণেশ বিসর্জন দেওয়া হয়, তখন নদীতে পড়ে থাকা সেই মূর্তি দেখে পছন্দ হত না তাঁর । এটা দেখে তিনি গোবর থেকে গণেশের মূর্তি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন । কারণ এই গোবরের তৈরির মূর্তি জলে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে গলে যায় ।
পবন থাপার কথায়, গোবর থেকে গণেশের মূর্তি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় গ্রীষ্মের মরশুমে । সেই সময় গোবর আনার পর তা ছাদে ভালো করে শুকিয়ে তার গুঁড়ো তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয় । এছাড়া এঁটেল মাটি শুকিয়ে তারও গুঁড়ো করে রাখা হয় । এরপর গোবর ও মাটির গুঁড়ো দিয়ে ভালো দ্রবণ তৈরি করে ছাঁচে রাখা হয় এবং তারপর ছাঁচ থেকে প্রতিমা তোলার পর আঠার প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে প্রতিমা মজবুত হয় এবং তোলার সময় ভেঙে না যায় ।
তিনি আরও বলেন, গণেশের মূর্তি তৈরিতে শুধুমাত্র পাহাড়ি ও বদ্রি গরু বা দেশি গরুর গোবর ব্যবহার করা হয় । একটি বড় মূর্তি তৈরি করতে এক মাস এবং ছোট মূর্তি তৈরি করতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে । মানুষও গোবর দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তির দিকে ঝোঁক দেখাচ্ছে । কারণ গত বছর 50 জনেরও বেশি মানুষ গোবর দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তি কিনেছিলেন ৷ এবারও বুকিং করেছেন সবাই । তবে কেউ কেউ আরও বড় মূর্তি তৈরির দাবি জানিয়েছে ৷ তাই আগামী বছর থেকে আরও বড় মূর্তি তৈরি করা হবে ।
একইসঙ্গে স্বদেশ কুটুম্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভাপতি তৃপ্তি থাপা জানান, প্রতিমা তৈরির পর তা সাজানো হয় । একটি প্রতিমা সাজাতে সময় লাগে আধ থেকে এক ঘণ্টার মতো । মূর্তি সাজানোর জন্য রং ব্যবহার করা হয় ৷ এই রং দিয়ে শুধু মুকুট তৈরির পাশাপাশি গহনা-সহ অন্যান্য ডিজাইনও রং দিয়ে তৈরি করা হয় । এই দলে 10 জন মহিলা রয়েছেন ৷ তারা এই সমস্ত প্রতিমা তৈরির কাজ করেন । গোবর থেকে গণেশের মূর্তি তৈরির পাশাপাশি ধূপকাঠি এবং অন্যান্য সাজসজ্জার সামগ্রীও প্রস্তুত করে তারা ।
পবন থাপা জানান, বছরের পর বছর গোবর দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তির চাহিদা বাড়ছে । প্রাথমিকভাবে লোকজন সচেতন না হলেও তথ্য পাওয়ার পর তারা এখানে প্রতিমা কিনতে আসছেন । বর্তমানে 50 থেকে 1500 টাকা পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি হচ্ছে । তবে আগামী বছর থেকে তারা 24 ইঞ্চি পর্যন্ত প্রতিমাও তৈরি করবেন ৷ যার দাম বেশি হবে ।