নয়াদিল্লি, 22 জানুয়ারি: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো নিয়ে সম্প্রতি উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দু'দেশে কর্মরত হাই কমিশনারদেরও ডেকে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে কাঁটাতরের বেড়া নিয়ে বিএসএফের একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল । তাতে দাবি করা হয়েছে এই সমস্ত বেড়ার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দ্রুত মেরামত করার কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে।
পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় মিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য 4,096 কিলোমিটার। এর মধ্যে সমতল এলাকার পাশপাশি নদী-পাহাড় ও জঙ্গল সবই আছে। সেখানেই কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে সমীক্ষা করেছিল বিএসএফ। অনুপ্রবেশ থেকে চোরাচালান কিংবা দেশবিরোধী কার্যকলাপ আটকাতে অসুরক্ষিত জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর কাজ শুরু করেছে ভারত । মোট এলাকার মধ্যে 3196.705 কিলোমিটারে আগে থেকেই বেড়া আছে । এই রিপোর্টে সেই অংশ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে ।
কী কী আছে রিপোর্টে ?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা পড়া রিপোর্ট ইটিভি ভারতের হাতে এসে পৌঁছেছে । সেখানে বলা হয়েছে, "কাঁটাতারের বেশ কয়েকটি অংশের পরিস্থিতি খুব খারাপ । বিভিন্ন জায়গায় গর্ত হয়ে গিয়েছে। সেখানেই সংস্কার দরকার ।" এই কাজের দায়িত্বে আছে এনপিসিসি থেকে শুরু করে এনবিসিসি-র মতো সংস্থা। তাদের কথাও আছে রিপোর্টে। 74.580 কিলোমিটার এলাকায় বেড়া লাগানোর বরাত পেয়েছিল এনপিসিসি। সম্প্রতি এনবিসিসি সেই কাজের বরাত পেয়েছে । এখানেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ হবে এই সংক্রান্ত নথি এখনও নিজেদের কাছেই রেখেছে এনপিসিসি । এছাড়া আরও একটি জায়গায় কাজের ভার পেয়েছিল এনপিসিসি। সেখানেও তাদের কাজ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন থেকে গিয়েছে ।
কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর চ্যালেঞ্জ
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারির ক্ষেত্রে বিএসএফের প্রধান সমস্যা হল প্রকৃতি ৷ পাহাড়, নদী বা উপত্যকা- নানা বাধা পেরিয়ে পাহারা দিতে হয় জওয়ানদের ৷ এখান থেকেই অনুমান করা যায়, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো ঠিক কতটা কঠিন কাজ ৷ এই বিষয়ে বিএসএফের মুখপাত্র শুভেন্দু ভরদ্বাজ বলেন, "সীমান্তে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে চোরাচালান রুখতে কাঁটাতারের বেড়া খুবই জরুরি। আমরা সেই কাজটাই করে চলেছি। "
আবহাওয়াগত সমস্যা
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আরও একটি বড় সমস্যা আবহাওয়া। এখানে মিজোরামের মতো এলাকা আছে ৷ সেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় প্রবল বৃষ্টিপাত হয় ৷ তার জেরে আর্দ্রতা অনেকটাই বেশি থাকে ৷ ঠিক সেদিক থেকে এখানে যে কাঁটাতার লাগাতে হবে তারও মান সেরকমই হওয়া দরকার ৷ রিপোর্ট বলছে, অনেক জায়গায় কাঁটাতার বসানোর ক্ষেত্রে এই নিয়মের পালন হয়নি ৷ রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়ার 50 শতাংশই বদলানো দরকার। এখানেই আরও বলা হয়েছে, বেড়ার নকশায় বড় ধরনের বদল আনা প্রয়োজন। আগে বেড়া হত ত্রিস্তরের । সেটিকে একটি স্তরের করার কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে ।
নির্মাণ সংস্থার গাফিলতি
বিএসএফের রিপোর্টের একটি জায়গায় নির্মাণ সংস্থাগুলির গাফিলতির কথাও বলা হয়েছে । তাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় নিরাপত্তার চেয়ে নিজেদের মুনাফার বিষয়টা বেশি দেখেছে তারা। আর তার জেরে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এরকম হয়ে উঠেছে যেখানে সীমান্তের ওপার থেকে শত্রুরা খুব সহজে এদেশে আসতে পারবে। প্রত্যাঘাতের ভয় না পেয়েই আক্রমণও চালাতে পারবে। পাশাপাশি কতটা কাজ হল সে সংক্রান্ত তথ্য বিএসএফ-কে দেয়নি সংস্থাগুলি ।
বাংলাদেশ সীমান্ত এবং ভারতের পাঁচ অঙ্গ রাজ্য
পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামে আন্তর্জাাতিক সীমানা আছে । পশ্চিমবঙ্গে 2216.7 কিলোমিটার, অসমে 263 কিলোমিটার, মেঘালয়ে 443 কিলোমিটার, ত্রিপুরায় 856 কিলোমিটার এবং মিজোরামে 318 কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে ।
বর্ডার আউট পোস্ট
সীমান্তে বিএসএফের কাজের মূল জায়গা বর্ডার আউট পোস্ট । দেশের প্রতিরক্ষার দিক থেকে এই সমস্ত কেন্দ্রর ভূমিকা বিরাট । সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে হওয়া সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রুখতে এর ভূমিকা সকলেই মেনে নিয়েছেন । জঙ্গিদের সঙ্গে লড়তে যাবতীয় সাহায্য মেলে এখান থেকেই । আন্তর্জাতিক সীমান্তে এমন 1,113টি বিওপি আছে । আরও 509 এমন বিওপি তৈরি হবে । তার মধ্যে 383টি হবে বাংলাদেশ সীমান্তে ।