নয়াদিল্লি, 15 এপ্রিল: ফের সুপ্রিম তোপের মুখে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ৷ সম্প্রতি একটি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিয়ে আদালত উল্লেখ করে 'অভিযোগকারী নিজেই সমস্যা ডেকে এনেছেন' ৷ বিচারপতির এহেন মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে ৷ গত মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক বিচারপতির মন্তব্যকে 'সম্পূর্ণ অসংবেদনশীল' বলে উল্লেখ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷
গত 11 মার্চ এলাহাবাদ হাইকোর্ট ধর্ষণে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করে ৷ এই মামলায় বিচারপতি সঞ্জয় কুমার সিং জামিনের কারণ প্রসঙ্গে জানান, তরুণী নিজেই সমস্যা তৈরি করেছেন ৷ কারণ তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অভিযুক্তের বাড়িতে যেতে রাজি হয়েছিলেন ৷ এই মন্তব্যে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট ৷
এদিন বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চ জানায়, প্রতিটি মামলার তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিচারপতি অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারেন ৷ কিন্তু অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে এধরনের অযাচিত পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য অভিপ্রেত নয় ৷
এর আগে এলাহাবাদ হাইকোর্টেরই আরেক বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্যে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ তিনি এক নাবালিকার ধর্ষণের চেষ্টায় মামলায় জানিয়েছিলেন, শিশুর বুকে হাত দেওয়া, তার পায়জামার দড়ির গিঁট খুলে ফেলা কিংবা তাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়াকে ধর্ষণের সঙ্গে একই শ্রেণিতে রাখা যায় না ৷ 17 মার্চ এই মন্তব্যেও স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট ৷
এরপর ফের এই আদালতের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে বিচারপতি বিআর গাভাই প্রশ্ন করেন, "এই হাইকোর্টে কী হচ্ছে ? একই হাইকোর্টের আরেকজন বিচারপতি এধরনের মন্তব্য করছেন ৷ হ্যাঁ, জামিন দেওয়া যেতেই পারে ৷ কিন্তু 'তিনি নিজে সমস্যা ডেকে এনেছেন', এর মানে কী ? মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষত বিচারপতিকে ৷" এই সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে উল্লেখ করেন, "এধরনের মন্তব্যে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা মাথায় রাখতে হবে ৷"
কী হয়েছিল ?
ধর্ষণের অভিযোগে 2024 সালের ডিসেম্বর মাস থেকে জেল হেফাজতে ছিল অভিযুক্ত ৷ তাকে জামিন দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট ৷ জামিন দেওয়ার সময় বিচারপতি সঞ্জয় কুমার সিং জানান, এই ধর্ষণের ঘটনার জন্য অভিযোগকারী নিজেই দায়ী ৷ তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্বেচ্ছায় অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন ৷ আদালয় জানায়, তরুণী স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী ৷ তাই কোন কাজটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা বোঝার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তাঁর ৷ নিজের কাজকর্মের গুরুত্বও তিনি জানেন ৷
এই মামলায় জামিনের আবেদনকারীর তরফে আদালতে জানানো হয়, অভিযোগকারী তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক ৷ তিনি পিজি হস্টেলে থাকেন ৷ তিনি নিজের ইচ্ছায় তাঁর মহিলা বন্ধু ও তাঁদের পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন ৷ সেখানে তাঁরা সকলে মদের নেশা করেছিলেন ৷ অভিযোগকারী তরুণী চরম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন ৷
অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতে সওয়াল-জবাবে জানান, ভোররাত 3টে পর্যন্ত ওই তরুণী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বারে ছিলেন ৷ তিনি একা বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না ৷ তাঁর একজন কাউকে দরকার ছিল ৷ তিনি নিজেই অভিযুক্তের বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন ৷
এদিকে তরুণীর অভিযোগ ছিল, অভিযুক্ত তাঁকে নিজের ফ্ল্যাটের বদলে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় এবং সেখানে দু'বার ধর্ষণ করে ৷ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্তের আইনজীবী ৷ তিনি আদালতে সওয়াল করেন, আদালতে যে প্রমাণ রয়েছে এই অভিযোগের সঙ্গে মিলছে না ৷ এটা মিথ্যা ৷ এই ঘটনা দু'জনের ইচ্ছায় হয়েছিল ৷