আমেদাবাদ, 13 জুন: আচমকা এক দুপুর অনেক কিছুই পালটে দিয়েছে গুজরাতের আমেদাবাদের মেঘনিনগরে ৷ ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সিভিল হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন এলাকার লোকজন ৷ তেমনই দু'জন গোবিন্দ ও ইমানুল ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তাঁরা এই হাসপাতালেই পড়ে আছেন ৷ কখন কার কী সাহায্য লাগে সে কথা ভেবে এখানেই রয়ে গিয়েছেন ৷
12 জুন দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমানটি বিমানবন্দর চত্বরের বাইরে মেঘানিনগরে চিকিৎসকদের হস্টেল এবং রেসিডেনশিয়াল ডাক্তারদের আবাসনের উপর ভেঙে পড়ে ৷ 230 জন যাত্রী এবং 2 জন পাইলট-সহ মোট 12 জন কর্মী ছিলেন ওই বিমানে ৷ শুধু এমার্জেন্সি গেটের কাছে 11এ আসনে থাকা যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ৷ আর কেউ জীবিত নেই ৷ কমপক্ষে 265 জনের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায় ৷
এই সঙ্কটকালে আরএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবীরাও হাজির হয়েছেন হাসপাতাল চত্বরে ৷ তাঁরা খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করছেন হাসপাতালে আসা মৃত ও আহতদের পরিজনদের ৷ টেবিলের পাশে একটি বড় গামলায় খিচুড়ি রাখা ৷ মেঘানিনগরের কাছেই দরিয়াপুর এবং জুহাপুরা থেকে কয়েকজন তরুণ জলের বোতল নিয়ে এসেছেন সিভিল হাসপাতালে ৷ শুষ্ক গরমে হাসপাতালের লোকজনকে জল দিচ্ছেন তাঁরা ৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমান দুর্ঘটনার পর হাসপাতালের চেহারাটা বদলে গিয়েছে ৷ চারদিকে আহতদের নিয়ে আসার হুড়োহুড়ি ৷ অ্যাম্বুলেন্স আসছে ৷ ঘন ঘন সাইরেন বাজছে ৷ দেহ শনাক্তকরণে ডিএনএ সংগ্রহের কাজও চলছে পাল্লা দিয়ে ৷ সবমিলিয়ে কাল থেকে হাসপাতালে ভিড়ে ভিড় ৷ অনেকেই কাল থেকে এখানেই রয়ে গিয়েছেন ৷ সারাক্ষণই তৎপর এই স্বেচ্ছাসেবীরা ৷
গোবিন্দর কথায়, "আমরা জানি, এটা একটা কঠিন সময় ৷ যা ঘটেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাও চ্যালেঞ্জিং ৷ এত মানুষের মৃত্যু হল এবং অনেকেই আহত হয়েছেন ৷ কারও রক্ত চাই ৷ কোথাও ডিএনএ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ করতে হবে ৷ আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি ৷ যাঁরা তাঁদের বন্ধু বা আত্মীয়দের হারিয়েছেন আমরা তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করি ৷"
গোবিন্দের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইনামুল ইরাকিস ৷ তাঁর হাতে জলের বোতল ৷ ইনামুল বলেন, "এটা মানবিকতার বিষয় ৷ পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে ৷ স্বজন হারানো মানুষদের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা রেহাই দিতে যা করা দরকার সেটাই করছি আমরা ৷"
গোবিন্দ-ইনামুলের মতো আরও অনেকে এসেছেন সিভিল হাসপাতালে ৷ শুধু সাহায্য করতে ৷ এদিন সকালে হাসপাতালের যেখানে ময়নাতদন্ত হচ্ছিল, তার কাছেই একদল মহিলা দাঁড়িয়েছিলেন ৷ মৃতদের আত্মীয়-পরিজনদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন ৷ পাশে থাকার বার্তাও দিচ্ছিলেন ৷ আমেদাবাদে এখন শোকের ছায়া ৷ কিন্তু সময়ের পরীক্ষায় এক হয়েছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতির ঊর্ধ্বে সবাই ৷