ডায়াবেটিস এবং কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ

author img

By

Published : May 24, 2021, 11:57 AM IST

ডায়াবেটিস এবং কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ

কোভিড থেকে সেরে উঠলেও অনেকের মধ্যেই ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার এবং মিউকরমাইকোসিস দেখা দিচ্ছে । মিউকরমাইকোসিসও সরাসরি ব্লাড সুগারের সঙ্গে যুক্ত । কিন্তু দ্বিতীয় ওয়েভে ডায়াবেটিকদের মধ্যে আরও গুরুতর উপসর্গ এবং সেরে ওঠার পর অসুস্থতা বেশি দেখা যাচ্ছে কেন ? আসুন দেখি ।

সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে যে দুটি বিষয়, তা হল কোভিড-19 এবং ডায়াবেটিস । করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা জানতাম, ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে । কিন্তু বর্তমানে যখন ভারত দ্বিতীয় ঢেউয়ের গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে, তখন ডায়াবেটিকদের মধ্যে রয়েছে মারাত্মক সংক্রমণ, সেরে ওঠার পরও অসুস্থতা এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগারের ঝুঁকি ।

কোভিড-19 এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে ইটিভি ভারত সুখীভব টিম কথা বলেছিল হায়দরাবাদের ভিআইএনএন হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেশ ভুক্কালার সঙ্গে । তাঁর কথায়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত জনসংখ্যার নিরিখে ভারত সামনের সারিতে । তাই আমাদের দেশে কোভিড-19 সংক্রান্ত জটিলতাও বেশি দেখা যাচ্ছে ।

চিকিৎসক ভুক্কালা জানালেন যে কোভিড এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে যোগাযোগকে তিনভাবে দেখানো যেতে পারে :

  • ডায়াবেটিকদের উপর কোভিড আরও বেশি আগ্রাসী প্রভাব ফেলছে ।
  • যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের গুরুতর সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি ।
  • গুরুতর সংক্রমণ এবং মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহারের জন্য ডায়াবেটিসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এমনকি, মৃদু উপসর্গ থাকলেও অনেক অদক্ষ চিকিৎসক রোগীদের স্টেরয়েড ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে ।

এছাড়াও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ডায়াবেটিসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, তাঁদেরও অসুখ বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণের কারণে । 'বর্তমানে আরও একটি উদ্বেগের বিষয় হল ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ । এই বিষয়টি সরাসরি ব্লাড সুগারের সঙ্গে সম্পর্কিত । আগে কোভিডের চিকিৎসার কোনও গাইডলাইন ছিল না ৷ কিন্তু এখন অবস্থা খারাপ হওয়া আটকাতে স্টেরয়েডের ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তা সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ার ফলে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাংগাসের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে ।’

স্টেরয়েড এবং ডায়াবেটিস

বর্তমানে স্টেরয়েডের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে, এবং চড়া ডোজে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে । কখনও কখনও আগে ভাগে অথবা লক্ষণ না থাকলেও স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে । এতে সংক্রমণ আরও গভীর হচ্ছে, ডায়াবেটিস তৈরি হচ্ছে এবং সেরে ওঠার পরেও জটিলতা দেখা দিচ্ছে । “এতদিন পর্যন্ত যা যা ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে স্টেরয়েডই একমাত্র কোভিডকে সামাল দিতে পারছে। বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সদর্থক ফল পাওয়া গেছে। বাকিগুলো ধারণার স্তরেই রয়েছে।”

আমাদের বিশেষজ্ঞ জানালেন, এখন আমরা স্টেরয়েডের অপব্যবহার হতে দেখছি । সংক্রমণের প্রাথমিক স্তরে তা ব্যবহার করা উচিত নয় ৷ কারণ তা ভাইরাসের বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেয় । স্টেরয়েডের প্রধান লক্ষ্য ভাইরাসের ইনফ্লেমেটরি রেসপন্স কমানো, যেটা দেখা যায় সংক্রমণের দ্বিতীয়ার্ধে (7-10 দিনে )। যদি সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় স্টেরয়েড প্রয়োগ না হয়, তাহলে বিশেষ করে ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের উপর তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে । স্টেরয়েডের ভুল ব্যবহারের জন্য ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে সেরে উঠতে দেরি হতে পারে ।

কী মনে রাখবেন ?

নিজের ইচ্ছেমতো দোকান থেকে স্টেরয়েড কিনবেন না । এটা একমাত্র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই নেওয়া উচিত । চিকিৎসক ভুক্কালার পরামর্শ, সংক্রমণের 14 দিনের সময়সীমায় ডায়াবেটিকরা প্রতিদিন নিজের সুগার মাপুন । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না বুঝতে এই ব্যবস্থা । এছাড়াও স্টেরয়েড ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত সুগার মাপা জরুরি ।

আরও পড়ুন : বিশ্ব হাইপারটেনশন দিবস 2021

চিকিৎসক ভুক্কালা জানান যে স্ট্রেস থেকেও সরাসরি সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে । তিনি বলেন, “কোভিডকেও সহজভাবে নেওয়াটা জরুরি । ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয় । রিল্যাক্সড থাকা দরকার । সময়ে সমস্ত ওষুধ খান । এছাড়াও পর্যাপ্ত সময় ঘুমোন । কোনওরকম ইনফ্লেমেশন হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং কিছু দেখলেই ডাক্তারকে জানান ।”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.