Model School in Gaighata : সীমান্তে মডেল স্কুল, একটাও স্কুলছুট নেই, বললেন প্রধান শিক্ষক

author img

By

Published : Nov 26, 2021, 11:12 AM IST

model school

শশাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ ভিতরে গেলে মনেই হবে না এটা কোনও স্কুল ৷ মনে হবে কোনও শিশু উদ্যানে রয়েছেন ৷ স্কুলের ভিতরের পরিবেশ কচিকাঁচাদের পাশাপাশি মন কাড়বে বড়দেরও ৷ কী আছে স্কুলে ? ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷

গাইঘাটা, 26 নভেম্বর : রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই এখন গড়ে উঠছে মডেল স্কুল ৷ যার উদ্দেশ্য মূলত, পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করে স্কুলছুটের সংখ্যা কমানো ৷ এবার সীমান্তবর্তী গাইঘাটাও (Model School in Gaighata) হাঁটল সেই পথে ৷ সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে স্কুলছুটের সংখ্যা অন্যান্য জায়গার তুলনায় একটু বেশি ৷ তবে এখন আর একটাও স্কুলছুট নেই এখানে জোর গলায় বলছেন শশাডাঙা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবুলাল সরকার ৷

Childrens park in school premises
স্কুল প্রাঙ্গনে শিশু উদ্যান

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গাইঘাটায় (Model Primary School in Gaighata) অবস্থিত শশাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ 1953 সালে এলাকার বাচ্চাদের কথা ভেবে কয়েকজনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই স্কুল ৷ এরপর 1998 সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করেন বাবুলাল সরকার ৷ পড়ুয়ার সংখ্যা তখন ছিল খুবই কম ৷ সেই থেকেই চাইতেন নতুন কিছু করতে যাতে শিশুরা স্কুলমুখী হয় ৷ স্কুলছুট কমাতে অনেক বই ও সংবাদপত্র পড়ে, বিভিন্ন দেশের পড়ানোর ধরন সম্পর্কে জানতেন তিনি ৷ এরপর ধীরে ধীরে আজকের এই মডেল স্কুল ৷

model school
হাতে কলমে পড়ুয়াদের শেখাচ্ছেন শিক্ষক

বাবুলালবাবুর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই শশাডাঙা প্রাথমিক স্কুলের (Sashadanga FP School) ঝুলিতে এসেছে একাধিক পুরস্কার । 2012 সালে প্রথম শিশু মিত্র বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় এই স্কুল । 2013-তে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার, 2015 সালে সেরা বিদ্যালয় ও 2016-তে যামিনী রায় পুরস্কার অর্জন করেছে এই স্কুল । 2019 সালে এই স্কুলের হাত ধরেই বাবুলালবাবু পান শিক্ষারত্ন পুরস্কার ।

আরও পড়ুন : School Special : স্কুলছুট রুখতে ছবিতে সাজল অমরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়

লকডাউনে স্বাভাবিকভাবেই বাড়িতে বসে পড়াশোনা বিমুখ হয়ে যাচ্ছিল শিশুরা ৷ হারিয়ে যেতে বসেছিল নিয়মিত স্কুলে আসা ও লেখাপড়ার অভ্যেস ৷ তাই স্কুল খোলার পর কীভাবে পড়ুয়াদের ফের স্কুলের প্রতি টান ফেরাবেন, তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন প্রধান শিক্ষক বাবুবালবাবু ৷ তার ফলস্বরূপ লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে পড়ুয়াদের উপহার দিয়েছেন এই মডেল স্কুল ৷ সহ-শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় এই স্কুল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি ৷ এর জন্য নিজের বেতনের অধিকাংশ টাকাও খরচ করেছেন বলে জানালেন বাবুলালবাবু ৷

তাঁর কথায়, "বইয়ে পড়ার চেয়ে হাতে কলমে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি ৷ যে কোনও জিনিস স্পর্শের মাধ্যমে শেখা যায় খুব তাড়াতাড়ি ৷ তাই সেইভাবেই স্কুল প্রাঙ্গনে তৈরি করা হয়েছে শিক্ষামূলক উদ্যান ৷ যেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের খেলা, যা শিশু মন বিকাশে সহায়তা করবে ৷ খেলার ছলেই অঙ্ক, ইংরাজি সব শিখবে পড়ুয়ারা ৷ যাতে পড়াশোনাটা তাদের কাছে বোঝা বলে মনে হবে না ৷ স্কুলের প্রতিটি কোণাকে পাঠ্য বইয়ের আকারে গড়ে তোলা হয়েছে ৷ যাতে বই বন্ধ করার পরেও স্কুলের যে দিকে তাকাবে, যেখানে যাবে সেখান থেকেই শিক্ষালাভ করতে পারবে ৷"

বাবুলালবাবুর ইচ্ছা, যদি সরকারি তরফে কোনও ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এই স্কুলকে রাজ্যের মধ্য়ে সেরা স্কুল হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন ৷

আরও পড়ুন : Nayagram Primary School : স্কুল না পার্ক ? নয়াগ্রামে নজর কাড়ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

বুধবার স্কুলের ভিতরে এই পার্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে পড়ুয়া-সহ অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল স্কুল ৷ তাতেই দেখা গেল কচি কচি মুখগুলোতে যেন হাসি আর ধরে না ৷ অনেকদিন পর স্কুলে এসে খুশি তারা ৷ তার উপর উপরি পাওনা এই পার্ক ৷ প্রথম দিনে তাদের অভিব্যক্তিই জানান দিচ্ছে স্কুলে আসতে কতটা আগ্রহী তারা ৷

প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগে পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা সকলেই খুব খুশি ৷ অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক খুবই ভাল ৷ বাচ্চাদের কথা ভাবেন সবসময় ৷ স্কুলের এই পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ বাড়ছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ৷ রোজই স্কুলে আসতে চাইছে তারা ৷ কবে থেকে নিয়মিত স্কুল খুলবে তার জন্য অপেক্ষা করছে ৷ এমনকি আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেতেও চাইছে না স্কুলে আসবে বলে ৷

বাবুলালবাবু এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গাইঘাটা চক্রের প্রাথমিক শিক্ষার এসএই মনোজ মণ্ডল বলেন, "প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে । লকডাউনের পরে প্রাইমারি স্কুল খুললে আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হবে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা । সেদিক থেকে বাবুলালবাবু ও তাঁর সহকারী শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে এডুকেশনাল পার্ক তৈরি করেছেন আমার আশা আগামী দিনে তা পড়ুয়াদের মন কাড়বে এবং তারা উপকৃত হবে । তাঁর কাছ থেকে উৎসাহিত হয়ে আমি আমার সার্কেলের সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের উৎসাহিত করব এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ।"

আরও পড়ুন : Anganwadi : শিশুদের স্কুলমুখী করতে বাসের আদলে অঙ্গনওয়াড়ি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.