Durga Puja 2022: ঘটপুজো করেই নিয়মরক্ষা হচ্ছে বেলদার দেব পরিবারের পুজােয়

author img

By

Published : Sep 26, 2022, 6:09 PM IST

Kushmuri Durga Puja 2022

বেলদা থানার কুশমুড়ির দেব পরিবারে দুর্গাপুজােয় এখন আর দেবী দশভূজার মূর্তি গড়া হয় না । ঘট বসিয়েই দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয় (Kushmuri Durga Puja 2022) ।

বেলদা, 24 সেপ্টেম্বর: একসময় জমিদারি পুজোর সুবাদে কামান দেগে জাঁকজমকভাবে দুর্গাপুজো হত দেব পরিবারে ৷ কিন্তু কালের গর্ভে জাঁকজমক হারানোই পরবর্তী প্রজন্ম ঘট পুজো করে কোনওক্রমে ঐতিহ্যের এই দুর্গাপুজো চালিয়ে যাচ্ছেন । সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি মন্দির সংরক্ষণে সরকার সাহায্য করুক এমনই দাবি পরিবারের (Dev family Durga puja of Kushmuri) । তবে পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সদস্যরা ভিন দেশ থেকেও ফিরে এসে এই দুর্গাপুজোতে অংশ নেন ।

নেই কামানের শব্দ । হাতিশালায় হাতি আর ঘোড়াশালায় ঘোড়াও নেই আর । বেলদা থানার কুশমুড়ির দেব পরিবারের পুজোর উৎসবে কাছাড়ি বাড়ির প্রাঙ্গণে আর বাজে না নহবৎ। তবু দুর্গাপুজাে এলে অতীতের সেই ঐতিহ্য ফিরে আসে ঢাক-কাঁসর-ঘণ্টা এবং শঙ্খধ্বনিতে।

আরও পড়ুন: দেবীর আবাহনে নারীশক্তি, মহিলা বাদ্যশিল্পীরাই সূচনা করলেন দুর্গাপুজোর

শতবর্ষ প্রাচীন দেব পরিবারের দুর্গাপুজােয় এখন আর দেবী দশভূজার মূর্তি গড়া হয় না । ঘট বসিয়েই দেবী দুর্গার আরাধনা হয় । জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে কাছারিবাড়ির জৌলুস কমলেও ঐতিহ্য রক্ষায় দেব পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরিরা আপ্রাণ প্রয়াসী । এই কাছারিবাড়ি এখন পোড়া বাড়িতে পরিণত হয়েছে । দেব পরিবারে বাড়িতে ঢোকার মুখেই এখনও রয়েছে প্রায় ভঙ্গুর, তৎকালীন সেই প্রাচীন ঐতিহ্যশালী একটি তোরণ । যার সামনে একসময় ঘোড়ায় ও হাতির পিঠে চড়ে তৎকালীন রাজা ও ইংরেজরা আসতেন রাজবাড়িতে ।

জানা যায়, প্রায় দেড়শো বছর আগে বিহারের রাজপুতদের একজন গুরুপ্রসাদ দেব কুশমুড়ি এলাকায় সুদের ব্যবসা করতে আসেন । উদায়স্ত ঋণ ব্যবস্থা ছিল। সূর্যাস্তের পর ঋণ শোধ করতে না পারলেই ঋণ গ্রহীতার জমি দখল করে নিতেন ঋণ দাতা । এভাবেই পুরনো বেলদা 1 নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশমুড়িতে দেব পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন । এই পরিবারের দুই সন্তান রাধামোহন দেব এবং গোলকমোহন দেব । এরাই তদানীন্তন রাজার কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি লাভ করেন । চৌধুরী রাধামোহন দেব এবং চৌধুরী গোলকমোহন দেব, পরিবারের কুলদেবতা ব্রজরাজ দেব মহাপ্রভুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ৷

আরও পড়ুন: শিব মন্দিরের এবারের থিম 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর'

কথিত আছে দেব পরিবারের কুলদেবতার এই মন্দির তৈরি করতে প্রায় 12 বছর সময় লেগেছিল । বর্তমানে উত্তরসূরিরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন । আর এই কুল দেবতার মন্দিরের কাছেই রয়েছে দুর্গা মন্দির । তবে তার অবস্থা এখন জরাজীর্ণ । বর্তমান যে সকল উত্তরসূরিরা রয়েছেন তাঁরা সবাই মিলে অর্থ দিয়ে এবছর মন্দিরটিকে পুনরায় ঠিক করেছেন । আর কয়েকটা দিন পর পুজো, তাই পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে ।

বর্তমানে পরিমল দেব, অমল দেবরা এই পুজো চালু রেখেছেন । আগে ডাকের সাজের দেবী দশভূজা তৈরির জন্য খরচ হত লক্ষাধিক টাকা । কিন্তু একদিকে জমিদারির পতন আর অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে পুজার খরচ কমানো হয়েছে । তাই 1972 সাল থেকে কুশমুড়ির প্রাচীন কাছারিবাড়ির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঘটপুজো । অথচ একসময় কুশমুড়ির দেবপরিবারের দূর্গাপুজা ছিল জেলার সেরা পুজা । এখানকার জমিদারই কেশিয়াড়ির সর্বমঙ্গলা মন্দিরের জন্য প্রায় 50 বিঘা জমি দান করেছিলেন । দেব পরিবারের দুর্গাপুজা শুরুর আগে সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজা দেওয়া হত । এই প্রথা এখনও আছে ।

ঘটপুজো করেই নিয়মরক্ষা হচ্ছে বেলদার দেব পরিবারের পুজােয়

আরও পড়ুন: 'মিস ইউ', বাগুইআটি উদয়ন সংঘ এবার স্মরণ করবে সাধারণ ও গুণীজনদের

দেব পরিবারের দুর্গাপুজাে শুরুর আগে কামান দাগা হত । এখনও কুলদেবতার মন্দিরে নিত্যপুজা হয়। সেইপুজার খরচ ও সব শরিক মিলে দেন । দেবীর মূর্তি গড়তেন মেদিনীপুর ও ঘাটালের শিল্পীরা । জমিদার পরিবারের লোকজন পালকি ছাড়া বেরতেন না । এখন আর সেসব নেই । পুজার আচার মেনে এখানে ঘটপুজাে শুরু হয় সপ্তমী থেকে । সপ্তমীতে পাতপেড়ে খাওয়ানো ও হয় অতিথিদের ।

তবে বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসা কুল পুরোহিত গোবিন্দ মিশ্র বলেন, "কোনওক্রমে পুজো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে । তবে সরকারি সাহায্য না পেলে এ পুজো বন্ধ হয়ে যাবে আগামিদিনে । কেবলমাত্র ঘটপুজো করে পুজো সারছেন পরিবারের সদস্যরা ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.