Chanchal Super Speciality Hospital : অনেক জায়গায় ঘুরেও কাজ হয়নি, শেষে দু’টাকার টিকিটে হাঁটতে শুরু করেছে ন’বছরের আজমিরা

author img

By

Published : May 14, 2022, 8:11 PM IST

Malda News

চাঁচল 1 নং ব্লকের মকদুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইসমাইলপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদ আলি ও রুনা পারভিনের একমাত্র মেয়ে আজমিরা ৷ সেরিব্রাল পালসির শিকার হয় সে । মালদার চাঁচল হাসপাতালের ডাক্তারের সহযোগিতায় ধীরে ধরে সুস্থ হরে শুরু করেছে সে (Cerebral palsy treatment at Chanchal Super Speciality Hospital) ৷

মালদা,14 মে : জন্মের সময় ওজন ছিল কেজি চারেক । কিন্তু তারপরেই হু হু করে কমতে থাকে ওজন । এভাবেই বিছানায় মিশে যেতে থাকে ছোট্ট বাচ্চাটি । বয়স বাড়লেও তার শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয়নি । যেন হাড়ের উপর শুধু চামড়ার আস্তরণ । সরু পা দুটো শরীরের ভার নিতে পারত না । হাঁটতে পারত না মেয়েটা । মেয়ের এই অবস্থায় দুশ্চিন্তার দিনযাপন শুরু হয় বাবা মায়ের । আর্থিক সঙ্গতি তেমন নেই । তবু চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে গিয়েছেন শিলিগুড়ি, কলকাতা, এমনকি রাঁচিও । জলের মতো বেরিয়ে গিয়েছে টাকাপয়সা । কোথাও কিছু হয়নি । শেষ পর্যন্ত ঘরের কাছে সরকারি হাসপাতালে দু'টাকার টিকিট কেটে মেয়েকে দেখান (Cerebral palsy treatment at Chanchal Super Speciality Hospital) । এক বছর চিকিৎসার পর অবশেষে মেয়ে মাটিতে পা ফেলতে পেরেছে । অন্যকে ভর করে হাঁটছে । তা দেখে আনন্দে আত্মহারা মা । এর জন্য চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই তাঁর ।

চাঁচল 1 নং ব্লকের মকদুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইসমাইলপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদ আলি । পেশায় রাজমিস্ত্রি । স্ত্রী রুনা পারভিন গৃহবধূ । তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে । ছেলে বড় । তার কোনও সমস্যা নেই । ন'বছর আগে মেয়ে আজমিরার জন্ম হয় । জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের কোলই ভরসা ছিল তার । হাঁটাচলার ক্ষমতা ছিল না । ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না । আসলে সেরিব্রাল পালসির শিকার হয় সে । বয়স যত বাড়ছিল, নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছিল তার। কীভাবে মেয়েকে ঠিক করবেন, সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছিল বাবা-মায়ের । রুনাদেবী বলেন, "জন্মের সময় মেয়ের ওজন ছিল চার কিলো । কিছুদিনের মধ্যেই তার ওজন দু'কিলো হয়ে যায় । তখনই বুঝতে পারি, কোনও একটা সমস্যা হচ্ছে । দিন কাটার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে বাড়তে শুরু করে । কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাকে হাঁটাতে পারিনি । ধীরে ধীরে ওর দুটো পা বেঁকে যেতে শুরু করে । চিকিৎসার জন্য ওকে প্রথমে শিলিগুড়ি নিয়ে যাই । সেখান থেকে কলকাতা । একবার ওকে রাঁচিও নিয়ে গিয়েছিলাম । অনেক টাকাপয়সা খরচ হলেও মেয়ে ঠিক হয়নি । শেষ পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে একজন এসে জানান, চাঁচল হাসপাতালে এই রোগের ভালো চিকিৎসা হয় । বছরখানেক আগে মেয়েকে এখানে নিয়ে আসি । দু'টাকার টিকিট কেটে মেয়েকে দেখাই । শেষ পর্যন্ত মেয়ে এখন পা ফেলতে পারছে । মনে হচ্ছে, ও হাঁটতে পারবে । আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে ।"

চাঁচোল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত আজমিরার

আরও পড়ুন : কন্যাসন্তানের জন্মের খুশিতে ভূরিভোজ বহরমপুরে

হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট সুনির্মল ঘোষ বলেন, "এক বছর আগে বাচ্চাটিকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল । তাঁর বাবা-মা খুব ভেঙে পড়েছিলেন । এক বছর চিকিৎসার পর তাকে বিশেষ ধরনের জুতো পরিয়ে হাঁটানো হয় । প্রতি মঙ্গলবার সে এখানে আসে । বাকি ছ'দিন তাঁর মা বাড়িতেই তাকে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি চালান । তার জন্য তাঁকেও আমরা প্রশিক্ষণ দিই । তবে শুধু হাঁটানোই নয়, বাচ্চাটিকে আমরা স্পিচ থেরাপিও দিচ্ছি । এভাবে আমরা এখানে 11টি বাচ্চাকে হাঁটাতে পেরেছি ।"

হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু কর্মকার বলেন, "তিন বছর আগে এখানে ফিজিওথেরাপি ইউনিট চালু হয় । সেখানে বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। এই বাচ্চাটিকে এক বছর ধরে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাঁকে বিনামূল্যে ক্যালিপার শু দেওয়া হয়েছে । শুধু সেরিব্রাল পালসি নয়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.