মালদা, 25 মার্চ : তিনি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। মালদা দক্ষিণে তৃণমূল প্রার্থীও। ফলে দুটি দিকই তাঁকে সামলাতে হচ্ছে। এই ব্যস্ততার মাঝেও ETV ভারতের মুখোমুখি হলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর কথায় উঠে এল মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক তথ্য। তাঁর দাবি, এই আসনে নিশ্চিতভাবে জিতবেন। এমনকী নিজের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীও খুঁজে পাচ্ছেন না। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে চতুর্থস্থান পেয়েছিলেন তিনি।
ETV ভারত : এবারের ভোটটা আপনি কীভাবে দেখছেন ?
মোয়াজ্জেম হোসেন : সপ্তদশ লোকসভা ভোট চলে এসেছে। গতবারের থেকে এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে চলছে। রাজ্য সরকার কীভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইশুগুলিও এই ভোটে প্রাধান্য পাবে। গতবারের সাংসদরা কী কাজ করেছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত দিক আলোচনা করেই আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। এবারও এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী গতবারের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি। মালদা উত্তরে কংগ্রেস এখন অনেক ছোটো হয়ে গেছে। কংগ্রেস থেকে অনেক নেতানেত্রী আমাদের দলে এসেছেন। এমন কী মালদা উত্তরের প্রাক্তন সাংসদ মৌসম নুরও আমাদের দলে এসেছেন। এর ফলে আমরা এই জেলায় একটা বলিষ্ঠ দল হিসাবে উঠে এসেছি। তার প্রমাণ আমরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিয়েছি। এই মুহূর্তে সাংগঠনিক দিক থেকেও মালদায় আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছেন, তা জনগণ দেখছে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় নরেন্দ্র মোদি যা প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিলেন তার উলটোটা হয়েছে। মানুষকে বঞ্চিত করেছেন, মিথ্যাচার করেছেন। নোটবাতিল, GST সবকিছুই মানুষের বিপক্ষে গেছে। গোটা পৃথিবীর তুলনায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। GDP কমে যাচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া হয়েছে। GST লাগু হওয়ায় ছোটো ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই দোকানে বিভিন্ন দ্রব্যের বিভিন্ন ধরনের GST লাগু হয়েছে। এত হিসাব রাখা ছোটো ব্যবসায়ীদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, এরা ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে। সংবিধান মানছে না। এতে মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত। মোদির জমানায় মনুষ্যত্বের উপর আঘাত আসছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের নেত্রীই প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করে আসছেন। তাই তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে ভোটকে সামনে রেখে মোদি আবার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু করেছেন। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে।
ETV ভারত : বিরোধীরা বারবার বলছেন পঞ্চায়েত ভোট লুট করা হয়েছে, কী বলবেন ?
মোয়াজ্জেম হোসেন : সেই সময় আমাদের বিরোধী কে ছিল ? মোথাবাড়ির সাবিনা ইয়াসমিন। রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। উত্তর মালদার সাংসদ মৌসম নুর। পঞ্চায়েত ভোটে লুটই যদি হত তাহলে কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল ছেড়ে তাঁরা কেন আমাদের দলে ভিড়লেন ! কারণ, তাঁরা বুঝে গেছেন, ওদের পায়ের তলার মাটি শেষ। আর তাঁদের এই দলে থাকতে হবে। বাংলার মানুষের জন্য যদি কিছু করতে হয়, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকেই করতে হবে। পঞ্চায়েতে আমাদের তো এত ভালো ফল হয়েছে। তাহলে বিধানসভা নির্বাচনে আমরা জেলার 12টি আসনের মধ্যে 12টিতেই হারলাম কেন ? পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিফলন লোকসভা ভোটেও পড়বে, আমরা আশাবাদী। এই ভোটে আমরা জেলার দুটি আসনেই জিতব। তবে দক্ষিণ মালদার সাংসদ শ্রদ্ধেয় মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আমি কিছু বলব না। তবে এটুকু বলব, তিনি 2 বার বিধায়ক ছিলেন। 12 বছর ধরে সাংসদ রয়েছেন। এই 12 বছরের প্রতি বছর 5 কোটি টাকা করে উন্নয়নের জন্য পেয়েছেন। কিন্তু, উনি একবার বলুন তো, নিজের 7টি বিধানসভা কেন্দ্রের কোথাও 1 কোটি টাকার কাজ করেছেন কি না ? শুধু ভোট চাইতে এলাকায় আসব, ভারতীয় সংবিধান একথা বলে না। এটা কোনও জনপ্রতিনিধির কাজ নয়। আমি সব ছেড়ে 24 ঘণ্টা দলের জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাই। আমি জনপ্রতিনিধি নই। কিন্তু, যেহেতু সরকারের কাছাকাছি রয়েছি, তাই গত 5 বছর ধরে জেলার উন্নয়নের জন্য যে সাহায্য করেছি, তার প্রমাণ সবাই পাবেন। 3-4টি ভোট পেরিয়ে গেলেও মানুষ সাংসদের কাছ থেকে কোনও কাজ পাননি। আমি সেই সব কাজ করে দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি তাঁর হাত ধরেই ফের ফিরে এসেছে৷
ETV ভারত : ভোটে জেতার অঙ্কটা কী হবে ? মানুষকে কী বলছেন ?
মোয়াজ্জেম হোসেন : বাংলার অবক্ষয়িত সমাজকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য শিক্ষিত, সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে যেতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে BJP-র কোনও সংগঠন সেভাবে নেই। কংগ্রেসের সংগঠনও আমরা অনেক ছোটো করে দিয়েছি। আমি স্থানীয় বাসিন্দা। এলাকাকে হাতের তালুর মতো চিনি। গতবার আমাদের সংগঠন ছিল না। তাই হেরে গেছিলাম। আমার কিছু করার ছিল না। কিন্তু, গত 5 বছরে এলাকার বুথস্তরেও শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। ফরাক্কা ও সামসেরগঞ্জের কিছু কিছু অংশ ছাড়া CPI(M) নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় কে দ্বিতীয় হবে তা আমি বলতে পারব না। তবে সবদিক থেকে এখন আমরা এগিয়ে আছি। কে আমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, তা বিরোধীদেরই ঠিক করতে হবে। আমি নীচের দিকে তাকাব না। সামশেরগঞ্জ আর ফরাক্কায় এবার অন্তত 70 হাজার ভোটে লিড করব। কালিয়াচক এলাকা থেকে এবার অন্তত 40-50 হাজার ভোটে লিড করব। মোথাবাড়ি, বৈষ্ণবনগর, মানিকচক, ইংরেজবাজারেও ভালো লিড পাব। সব মিলিয়ে বলতে পারি, আমাদের এখন জায়গা অটুট। এবার আমাদের ভোট খুব ভালো হবে। খুব ভালো ফল করব।