Bhatra Beel : মালদাবাসীর নয়া সপ্তাহান্তের ছুটির ঠিকানা মিনি দিঘা

author img

By

Published : Aug 12, 2021, 6:16 PM IST

ভাটরা বিল

এই বিল ঘিরে পর্যটন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হলে পঞ্চায়েতের উপার্জনের বড় সম্ভাবনা রয়েছে । তবে তার জন্য পরিকাঠামো এবং এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে ৷

মালদা, 12 অগস্ট : করোনাকালে ঘরবন্দী মানুষের মন । বিশেষত শিশুদের মনে যেন শিকলের বেড়ি । এই অবস্থায় কাছে বা দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া সবচেয়ে উপকারী । খোলা হাওয়ায় মন সতেজ হবে । মনস্তত্ববিদরাও বলছেন সেকথা । কিন্তু সেখানেও ভাইরাসের গেরো । এখনও 100 শতাংশ মানুষের টিকাকরণ হয়নি । দেশে আঠারোর নিচে থাকা ছেলেমেয়েদের ভ্যাকসিন দেওয়াও শুরু হয়নি । এই পরিস্থিতিতে গণ পরিবহণে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেড়াতে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই । ঠিক সেই সময় মালদাবাসীর সপ্তাহান্তের ছুটির ঠিকানা হয়ে উঠেছে পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অখ্যাত দক্ষিণ ভাটরা গ্রাম । এই গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে বিশাল বিল । সেই বিলের রূপ বর্ষায় যেন সমুদ্রের মতো হয়ে ওঠে । এখন শনি ও রবিবার সেই বিলের পাড়ে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড় । সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও প্রচুর মানুষকে সেখানে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে ।

শুখা মরশুমে দক্ষিণ ভাটরা বিল প্রায় শুকনোই থাকে । কিন্তু বর্ষা শুরু হতেই তার রূপ পালটে যায় । বিলের এপার থেকে ওপার আর দেখা যায় না । যেখানে একসময় ধানচাষ হত, সেখানে তখন চলে নৌকা । এই বিলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে মহানন্দা, টাঙন ও বেহুলা নদীর । বর্ষায় নদীতে জল বাড়লেই অতিরিক্ত জল এই বিলে ঢুকতে শুরু করে । তাতেই ভাটরা বিল হয়ে ওঠে মোহময়ী । বিলের জলে প্রবল স্রোত । ঢেউ ভাঙে পাড়ে ।

ভাটরা বিল
বিলের রূপ বর্ষায় যেন সমুদ্রের মতো হয়ে ওঠে

করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর গত বছর থেকেই ভাটরামুখী মালদার মানুষ । শুধু শহর নয়, জেলা থেকে শুরু করে দুই দিনাজপুরের মানুষের ডেস্টিনেশনও এখন এই বিল । তা দেখে সম্প্রতি এই বিল ঘিরে সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থাও নেয় সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরাতন মালদা ব্লক প্রশাসন । সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি । যতদূর খবর, এবার বিলের জল নামলেই সেই কাজ শুরু করা হবে । তবে একটা বিষয়ে সবাই নিশ্চিত, এই বিল ঘিরে পঞ্চায়েতের উপার্জনের বড় সম্ভাবনা রয়েছে । যদিও পরিকাঠামো আর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। বিলে যাওয়ার রাস্তা তেমন ভাল নয় । নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যথাযথ নয় । নিরাপত্তার অভাবেই গত বছর বিলের জলে নেমে প্রাণ গিয়েছে দু’জনের । সন্ধের পর সেখানে মহিলাদের উপস্থিত থাকাটাও যথেষ্ট নিরাপদ নয় বলে জানাচ্ছেন সবাই ।

ভাটরা বিল
বর্ষায় নদীতে জল বাড়লেই অতিরিক্ত জল এই বিলে ঢুকতে শুরু করে

ভাটরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মালদা শহরের তুষার দাস জানান, “দুপুরের খাবার খেয়ে পরিবার নিয়ে এখানে চলে এসেছি । খুব ভাল লাগছে । প্রকৃতিকে উপভোগ করার খুব সুন্দর জায়গা । পরিবেশ খুব ভাল । তবে এখানে প্রশাসনের তরফে মানুষের জন্য কিছু ব্যবস্থা করা হলে আরও ভাল হত । নিরাপত্তার দিকটাও রয়েছে । অনেক মানুষ এখানে আসে । সেটা প্রশাসন জানে কিনা তা অবশ্য জানা নেই ।”

শহরের সৌরভ নন্দী বলেন, “ভাটরা বিলে এসে সত্যিই খুব ভাল লাগছে । বছরের সবসময় এখানে এত জল থাকে না । তবে বর্ষায় বিল জলে ভরে যায় । প্রশাসন এই বিলটিকে টুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসাবে সাজিয়ে তুললে খুব ভাল হয় । এখানে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব ভাল নয় । বর্ষায় জল-কাদা জমছে । বিলে যদি বোটিং-এর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আরও ভাল । শুনেছি, সন্ধের পর এখানে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে । প্রশাসন যদি এখানে পুলিশের ব্যবস্থা করে তাহলে বেশ হয় ।”

ভাটরা বিল
শনি ও রবিবার সেই বিলের পাড়ে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়

প্রকৃতিকে উপভোগ করতে বিলে হাজির জেন ওয়াইও । তাদেরই একজন সৌভিক সাহা বলেন, “ভাটরা বিলের সৌন্দর্য যে এত ভাল, তা না দেখলে কল্পনা করা যাবে না । দুর্দান্ত পরিবেশ । মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে । খুব ভাল লাগছে । শুনেছি, এখানেই আরও একটি বিল রয়েছে । যাত্রাডাঙা বিল । সেখানে অবশ্য আমি যাইনি । ভাটরা বিল এখন আমাদের কাছে মিনি দিঘা । প্রশাসনের তরফে এখানে কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার দেওয়া হয়েছে । তবে তাঁদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না । বিলের জলে নামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত কোনও ব্যবস্থা নেই । দু’বছর ধরে এই জায়গাটি মালদাবাসীর কাছে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে । এখানে যদি লোহার রড দিয়ে একটা ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়, তবে মানুষ নিশ্চিন্তে বিলের জলে নামতে পারে । এখানে আসার রাস্তাটা সংস্কার করা হলে আরও বেশি মানুষ বিলে আসতে পারত । এখানে মানুষ বেশি আসলে গ্রামেরও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে ।”

মালদাবাসীর নয়া সপ্তাহান্তের ছুটির ঠিকানা মিনি দিঘা

বিলে প্রকৃতি উপভোগ যাওয়া মানুষজনের কথা জানানো হয়েছিল সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান উকিল মণ্ডলকে । তিনি বলেন, “প্রতিবারের মতো এবার বর্ষা মরশুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ ভাটরা বিলে ভিড় হচ্ছে । কেউ যেন বিলের জলে না নামে, তার জন্য ইতিমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে । কিছু জায়গায় বোর্ডও লাগানো হয়েছে । বিলে নৌকা চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে । মালদা থানার আইসির সঙ্গে কথা বলে আমরা সেকানে সিভিক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি । তা সত্ত্বেও মানুষ আবেগের বশে বিলে নেমে পড়ছে। এনিয়ে আজ আমি বিডিওর সঙ্গে কথা বলব। সেখানে নিরাপত্তার আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব । 3-4 টি রাস্তা দিয়ে ওই বিলে যাওয়া যায়। একটি রাস্তার মুখ আটকে দেওয়া হলে মানুষ ঘুরপথে বিলে যাচ্ছে। এনিয়ে আমরা পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বৈঠকও করেছি। নিরাপত্তার স্বার্থে সবাই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । গতবার বিলে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরেই আমরা নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শুনতে পেয়েছি, সেখানে অনেকে মদ্যপানও করছে। বিশেষ করে শনি ও রবিবার সেখানে ভিড় উপচে পড়ছে। আগামী উইক এন্ডে আমরা সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করব বলে ঠিক করেছি। আর বিল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে প্রচুর ট্র্যাক্টর ধান নিয়ে যাওয়া আসা করে। তাতে রাস্তার ক্ষতি হয়। রাস্তায় মাটি পড়ে থাকে। তাই ধান নিয়ে ট্র্যাক্টর যাতায়াতের জন্য আমরা সেখানে আরেকটি রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার কাজও শুরু হয়েছে।”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.