Two Girls braved all Odds: বীরভূমের মৌসুমী, ফরাক্কার সুলতানা ! লক্ষ্মীবারে বাংলা দেখল দুই ধন্যি মেয়ে'র উপাখ্যান
Published: Mar 16, 2023, 10:50 PM


Two Girls braved all Odds: বীরভূমের মৌসুমী, ফরাক্কার সুলতানা ! লক্ষ্মীবারে বাংলা দেখল দুই ধন্যি মেয়ে'র উপাখ্যান
Published: Mar 16, 2023, 10:50 PM
মৌসুমী দলুই ও সুলতানা খাতুন । শত বাধা পেরিয়ে পরীক্ষা দিলেন দুই উচ্চমাধ্য়মিক পরীক্ষার্থী । দুই জেলার দুই মেয়েকে মেলাল নাছোড়বান্দা মনোভাব । দুই মেয়ের লড়াই বুঝিয়ে দিল, নারী সত্যিই দি 'বস' (Two girls who braved all odds to pursue their dreams) ।
হায়দরাবাদ, 16 মার্চ: সাঁঝলিকে মনে আছে ? কামিন খেটে যা মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছিল । দেবব্রত সিংয়ের 'তেজ' কবিতায় সাঁঝলির ছিল অদম্য মানসিকতা, শৈশবেই সে বুঝে নিয়েছিল, পেটে বিদ্যে থাকলে জগত থাকে হাতের মুঠোয় । বাস্তবে যা বুঝে গিয়েছে সুলতানা খাতুন ও মৌসুমী দলুই । রাজ্যের দুই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একে অপরকে চেনে না । তাদের বাড়ির দূরত্ব কয়েকশো কিমি, তাদের ধর্ম আলাদা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিটাও আলাদা । সেই দুই ধন্যি মেয়েকেই মিলিয়ে দিল তাদের নাছোড়বান্দা মনোভাব (Two girls who braved all odds to pursue their dreams) ।
বৃহস্পতিবার ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা । সকাল থেকেই তুমুল ব্যস্ততা রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের ঘরে, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রত্যেকে । ঠিক একই সময় দুই জেলায় আলাদা লড়াই লড়ছে সুলতানা, মৌসুমি । শত বাধার মাঝেও যাদের হাতিয়ার, হার না-মানা মনোভাব । প্রথম দিন পরীক্ষা দিয়েছিল সুলতানা । দ্বিতীয় দিন থেকে বেঁকে বসে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজন । অ্যাডমিট কার্ড-সহ ব্যাগ ফেলে দেওয়া হয় পাশের জঙ্গলে, বাড়িতে আটকে দেওয়া হয় সুলতানাকে । অন্যদিকে, ভোররাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন মৌসুমীর বাবা ।
বিপর্যয়েও একচুল টলানো যায়নি দু'জনকে । কোনওরকমে ছাড়া পেয়ে থানায় পৌঁছয় সুলতানা । সমস্ত ঘটনা জানায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিককে । জানিয়ে দেয়, সে পরীক্ষা দিতে চায়, যে কোনও উপায়ে । তার সঙ্গেই ঘরে আসে পুলিশ । শ্বশুরবাড়ির লোকজন, স্বামী বান্টি শেখকে পাকড়াও করে ব্যাগের সন্ধান পাওয়া যায় । শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় নিউ ফারাক্কা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয় সে ।
অন্যদিকে, বাবার মৃত্যুর পর সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেও সামলে ওঠে মৌসুমী । বাবা অষ্টম দলুই চেয়েছিলেন, মেয়ে পড়াশোনা শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে । বাবার কথা রাখতে মনকে বুঝিয়ে বোলপুর শৈলবালা হাইস্কুলে পৌঁছয় সে । পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে এসে বাবার শেষকৃত্যের কাজ সারে । এখনও বাকি আরও 4টে পরীক্ষা । প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের সেরাটা দেওয়াই এখন লক্ষ্য মৌসুমী, সুলতানার।
আরও পড়ুন: বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখে উচ্চমাধ্যমিক দিল মেয়ে, ফিরে করল মুখাগ্নি
রাজ্যের দুই মেয়ের এহেন মনোভাবে উচ্ছ্বসিত লীনা গঙ্গোপাধ্যায় । রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, "ওরা যেটা করেছে, সেটা অনেককে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে । অনেক মেয়েই শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে । খারাপ পরিস্থিতিতেও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে । আমাদেরও উচিৎ, ওদের পাশে দাঁড়ানো ।"
এই চিত্র আনন্দ দিচ্ছে মীরাতুন নাহারকেও । তিনি নারী শিক্ষায়নে বহূদিন ধরেই ব্রতী । স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ বলেন, "কোনও বাধা এলে সেটা পেরনোর মানসিকতা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তৈরি হয়ে যায় । এই দুটি ক্ষেত্রেই সেটা ঘটেছে । এটা যে সার্বিক চিত্রটাতেই বদল ঘটাবে, তার বিষয়ে আমরা আশাবাদী ।"
বাবার স্বপ্ন সত্যি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর মৌসুমী । মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গেলেও পরিবারের বাকিদের অবশ্য লড়াইয়ে পাশে পেয়েছে সে । অন্যদিকে, সুলতানার লড়াইটা একা । সমাজ, প্রশাসনকে পাশে পেলেও প্রতিনিয়ত যুঝতে হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে । যদিও সমস্ত কষ্টেও আপাতত দু'জনেরই লক্ষ্য, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া । সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া । নারী দিবসের কয়েকদিনের মাথাতেই দুই মেয়ের উপাখ্যান যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, নারী সত্যিই দি 'বস' ।
আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে বাধা শ্বশুরবাড়ির, পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গৃহবধূ
