কলকাতা, 20 মে : বাম আমলে চিরকুটে চাকরি হত ৷ এই মন্তব্যের পর ফের বামফ্রন্ট আমলের অনিয়ম নিয়ে সরব হলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম । পৌর কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশও দিলেন তিনি (Firhad Hakim ordered investigation into allegations of irregularities) ৷ যাদবপুরের সরকারি প্রেক্ষাগৃহ বেসরকারি ট্রাস্টের পরিচালনা নিয়ে সিপিএম-তৃণমূল তর্জায় উত্তপ্ত হল কলকাতা পৌর অধিবেশন ।
যাদবপুরের নিরঞ্জন সদন প্রেক্ষাগৃহ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের জমিতে কেএমডিএ তৈরি করে । কলকাতা পৌরনিগমকে দেয় । তবে অভিযোগ বামফ্রন্টের সময় এটি ট্রাস্টের হাতে দিয়ে দেয় । তৃণমূলের অভিযোগ, সেই ট্রাস্ট আসলে সিপিএমের । মাথায় আছে যাদবপুরের প্রাক্তন বিধায়ক । এই হল ভাড়া দিয়ে বিপুল টাকা রোজগার করে সিপিএম । সেই টাকা পৌরনিগমকে দেওয়া হয় না । হলের সংস্কারের কাজও হয়নি । ওই টাকা দিয়ে সিপিএম-কর্মীদের ভাতা দেয় । আর তৃণমূলের এই অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় অধিবেশন ।
আরও পড়ুন : Govt employees on DA order: ডিএ নিয়ে আদালতের রায়ের দিনেও আশঙ্কার সুর সরকারি কর্মীদের মধ্যে
তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী এদিন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়ে জানান, নিরঞ্জন সদনের পাখা খারাপ, বসার জায়গা খারাপ । খুব বাজে অবস্থায় আছে । আমূল সংস্কারের দরকার । তাঁর দাবি, হলটা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের জায়গায় । সেই সময় জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেন । তবে সরকারি জমিতে, সরকারি টাকায় হলটা হলেও একটি প্রাইভেট ট্রাস্টের হাতে দেওয়া হয়েছে । নাম না-করে জানান, সেই ট্রাস্টের মাথায় আছেন সুজন চক্রবর্তী । তাঁর কথায়, এখান থেকে বিপুল টাকা তুলে দলের কর্মীদের ভাতা দেয় সিপিএম । যাঁরা টেলিভিশনে রোজ নীতির কথা বলছেন তারা আগে হলটা ঠিক করুন । যাদের বাংলার মানুষ শূন্য করে দিয়েছে তারা এই হলটা শূন্য করে দিতে চাইছে ।
একই সুরে আরও এক কাউন্সিলর তপন দাসগুপ্ত জানান, যিনি ওখানকার বাসিন্দা নন তিনি ট্রাস্টের মাথায় আর ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বসুন্ধরা গোস্বামী কেন নেই, কেন বর্তমান বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার নেই ৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন কর কত বাকি আছে সেটা দেখা হোক । প্রতিদিন দুটো হলের ভাড়া আসছে 15-18 হাজার টাকা । এই টাকার হিসেব চাই ।
এই দুই কাউন্সিলরের সঙ্গেই কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার জানান, ওই কমিটিতে আমি নেই । নিরঞ্জন সদন নামে একটা পুরনো হল ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের আগে থেকে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য তৈরি হয়েছিল ওই হল । 2011 থেকে যে কত হল বেসরকারিকরণ করেছি ৷ যারা মুখে কেন্দ্রীয়করণ করার কথা বলেন তাঁরাই বেসরকারি ট্রাস্টের হাতে দিয়ে দিলেন । নাম বদলে নিরঞ্জন সদন । পুরসভা, কেএমডিএ-র কাউন্সিলর সদস্য হওয়ার কথা । তারা নেই ওই ট্রাস্টে । 2011 পর আমায় বলা হয় । কিন্তু পাপের ভাগিদারী আমি নেব না । যিনি এখন সব বিষয়ে মামলা করেছেন তিনি মেয়র ছিলেন । একটি হকার পুনর্বাসন করার জন্য তৈরি বহুতল বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে গেল । 101 নম্বর ওয়ার্ডে কলতান থেকে শুরু করে 96 নিরঞ্জন সদন সব একই অবস্থা ।
আরও পড়ুন : Firhad Hakim on Property Tax : ফ্ল্যাট বিক্রির আগে পর্যন্ত সম্পত্তি করের দায় প্রমোটারের, ঘোষণা ফিরহাদের
এরপরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দেন বামফ্রন্ট আমলে সরকারি সম্পত্তি কোথায়, কী অনিয়ম হয়েছে তদন্ত করতে হবে কলকাতা পৌর কমিশনারকে । একমাস সময় ধার্য করেন তিনি । তাঁর কথায়, বামফ্রন্ট আমলে সরকারি উদ্যোগে তৈরি হল সিপিএম বিয়েবাড়ি ভাড়া দিচ্ছে, নানা ট্রাস্টের নামে বেসরকারি লোকজন দখল করে আছে । এগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে বলেছি পৌর কমিশনারকে । হকার পুনর্বাসনের জন্য তৈরি বহুতল বেসরকারি হাসপাতালকে দিয়ে দিয়েছে । এমন অনিয়ম হয়েছে বামফ্রন্ট আমলে । সেই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করতে বলেছি ।
এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন বামফ্রন্ট কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব । তিনি জানান, পৌরনিগমের নামে আসলে এরা ওই হল দখল করতে চাইছে তৃণমূল । নিরঞ্জন সদন 1991 সালে চালু হয় বিজয় গড়ে । রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত ছিল । ট্রাস্টের সদস্যরা কেন মিটিংয়ে যান না ? না গিয়ে শুধু সমালোচনা করলে হয় না । তাহলে বোর্ড থেকে সরে যান । কাজের জায়গায় যাবেন না, অথচ সমালচনা করবেন । ট্রাস্ট পুরসভাকে কর দিচ্ছে । অডিট করা হয় । পুরসভা কেন নতুন দায়ভার নেবে ? কাউন্সিলরদের কোনও কাজ হলেই পুরসভা বলে টাকা নেই । পুরসভা চাইলে ট্রাস্টের সঙ্গে আলোচনা করুক ।