Jalpaiguri District Hospital : জলপাইগুড়িতে চিকিৎসক ‘প্রভাবশালী’, আউটডোরে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ রোগীদের

author img

By

Published : Sep 28, 2021, 10:13 PM IST

Updated : Sep 29, 2021, 10:13 AM IST

patients-are-facing-many-problem-in-jalpaiguri-hospital-eye-department

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের আউটডোরে প্রতি মঙ্গলবার রোগীর দেখার কথা ডাঃ সুশান্তকুমার রায়ের ৷ কিন্তু তিনি যে আজ রোগী দেখেননি, তা তো জানা হয়েই গেল ৷ তবে এটা শুধু একদিনের ব্যাপার নয় ৷ বরং তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ ৷ এমনকী, আউটডোরে থাকলেও তিনি রোগী দেখেন না বলে অভিযোগ ৷

জলপাইগুড়ি, 28 সেপ্টেম্বর : চরম অব্যবস্থার মধ্যে চলছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চক্ষুবিভাগ ৷ এমনটাই অভিযোগ তুলছেন রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা ৷ তাঁদের দাবি, এই বিভাগে অর্ধেকদিন চিকিৎসক মেলে না ৷ থাকলেও তাঁরা সময়মতো আসেন না ৷ আবার একজন চিকিৎসক তো থাকলেও রোগী দেখেন না বলে অভিযোগ তুলছেন তাঁরা ৷

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চক্ষুবিভাগের ওপিডির সামনে চিকিৎসকদের রোগী দেখার যে তালিকা দেওয়া আছে, সেখানে মঙ্গলবার ও শুক্রবারের পাশে রয়েছে ডাঃ এস কে রায়ের নাম ৷ অর্থাৎ ড. সুশান্তকুমার রায় ৷ যাঁকে অবসরের পর পুনর্নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার ৷ তাঁকে জলপাইগুড়ি চক্ষুবিভাগের চিকিৎসকের পাশাপাশি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য-ওএসডি হিসেবে ৷

আরও পড়ুন : Northbengal health osd : উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য-ওএসডির ছেলের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এমডি পড়াকালীন বেতন নেওয়ার অভিযোগ

তাঁর বিরুদ্ধেই ওই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন রোগীর আত্মীয়রা ৷ গত শনিবার ওই হাসপাতালের ওপিডিতে এক আত্মীয়কে নিয়ে এসেছিলেন টুম্পা রায় ৷ তাঁর দাবি, ওপিডি থাকলেও রোগী দেখেন না সুশান্তকুমার রায় ৷

patients-are-facing-many-problem-in-jalpaiguri-hospital-eye-department
ড. সুশান্তকুমার রায়

স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, যে কেন তিনি এমন করেন ? তাহলে কি তিনি কোনওদিনও হাসপাতালে আসেন না ? আজ, মঙ্গলবার (28.09.2021) সেটাই খতিয়ে দেখতে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে যাওয়া হয়েছিল ৷ রোগী দেখানোর জন্য নিয়মমাফিক টিকিট করানোর সময়ই হাসপাতালের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ডাঃ এসকে রায় রোগী দেখবেন না ৷ বদলে অন্য কেউ দেখবেন ৷

আরও পড়ুন : North Bengal OSD: উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের উপর জুলুমের অভিযোগ

তবে এটা শুধু আজকের চিত্র নয় ৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে বলে অভিযোগ ৷ জলপাইগুড়ির সমাজসেবী সংগঠন গ্রিন জলপাইগুড়ির সম্পাদক অঙ্কুর দাসের অভিযোগ, ‘‘অবসরের পর ডাঃ সুশান্ত রায় চক্ষু বিভাগে পুরনায় নিয়োগ পেলেও তিনি কোনওদিন আউটডোরে বসেন না । আমরাও চোখ দেখাতে গিয়ে তাঁকে পাইনি ।’’

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তার কোনও সদুত্তর অবশ্য কেউ দিতে পারলেন না ৷ চক্ষুবিভাগের এক কর্মী জানালেন, উত্তরবঙ্গের ওএসডি হওয়ায় ডাঃ এসকে রায়কে আরও অনেক দায়িত্ব সামলাতে হয় ৷ তাই তিনি রোগী দেখেন না ৷ এদিন আউটডোরে রোগী দেখেন ডাঃ এসএস চৌধুরী ৷ তিনি জানালেন, এখন চারজন ডাক্তার রয়েছে চক্ষুবিভাগে । গত এক মাস ধরে চক্ষুবিভাগে অনেক ভিড় হচ্ছে ।

patients-are-facing-many-problem-in-jalpaiguri-hospital-eye-department
সুশান্তকুমার রায়কে পুনর্নিয়োগের সরকারি চিঠি

আরও পড়ুন : OSD Controversy : কোন যোগ্যতায় উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি সুশান্ত রায়, প্রশ্ন বিরোধীদের

তবে ডাঃ সুশান্ত রায়ের রোগী দেখার প্রসঙ্গ নিয়ে ওই চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন । তিনি তো এখন ওএসডি। উনি আর চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেই । আপনাদের ভুল হচ্ছে । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন ।’’ জলপাইগুড়ির উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-2 ড. মৃদুল ঘোষ এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করছেন ৷

কিন্তু কেন এই বিভ্রান্তি ? বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে যে ডাঃ সুশান্তকুমার রায় খুবই প্রভাবশালী ৷ সেই প্রভাব খাটিয়েই তিনি একজন সাধারণ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হয়েও জলপাইগুড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ সেই প্রভাব থেকেই তিনি দুই দফায় উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য ওএসডির দায়িত্ব আদায় করে নিয়েছেন ৷

আরও পড়ুন : North Bengal OSD : সুশান্ত রায়ের নীলবাতির গাড়ি ব্যবহার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন, বিতর্ক

গ্রিন জলপাইগুড়ির সম্পাদক অঙ্কুর দাসের দাবি, ‘‘এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেও জেল খাটতে হয়েছে ৷ আসলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে সুশান্ত রায়ের ভাল সম্পর্ক ৷ তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলেও সব ধামাচাপা পড়ে যায় । তিনি জনগণের টাকায় বেতন নিলেও স্বাস্থ্য পরিষেবা দেন না ।’’

যদিও এই নিয়ে ডাঃ সুশান্তকুমার রায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি ৷ অন্যদিকে জলপাইগুড়ি সদরের বিধায়ক তৃণমূলের প্রদীপ বর্মা বলেন, ‘‘যে বিভাগে নতুন করে ডাক্তারকে নিয়োগ করা হবে, সেই বিভাগেই তাঁর বসা উচিত ৷ সেটাই কাম্য । তবে চক্ষুবিভাগে ডাক্তাররা নিয়মিত বসছেন না, এই বিষয়ে আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব ।’’

আরও পড়ুন : Child Fever : শিশুদের জ্বর সংক্রান্ত তথ্য লুকোনোর অভিযোগ ওএসডি সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে

এবিষয়ে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সহ-সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডাঃ সুশান্ত রায়ের পদন্নতি হয়েছে ৷ তাই তিনি চোখ আর দেখেন না । তার জন্য আলাদা অফিস ঘরে চেয়ার রয়েছে । চক্ষুবিভাগে সপ্তাহে দু’দিন তাঁর আউটডোরে বসার কথা ।’’

Last Updated :Sep 29, 2021, 10:13 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.