Durga Puja : বিষ্ণুপুরের মণ্ডল জমিদারদের দুর্গাপুজোয় জড়িয়ে 250 বছরের ইতিহাস

author img

By

Published : Oct 10, 2021, 10:22 PM IST

mandal family durga puja of bankura

বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের মণ্ডল পরিবারের পূর্বপুরুষরাই এককালে এই এলাকার জমিদার ছিলেন ৷ এই বাড়ির পুজোর বয়স 250 বছর ৷ সাবেকি রীতি মেনেই আজও পুজো চলছে ৷

বিষ্ণুপুর, 10 অক্টোবর : সময়টা 1712 থেকে 1720 ৷ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তখন গোপাল সিংহ, চৈতন্য সিংহের আমল ৷ সেই সময় বর্ধমানের নীলপুর গ্রাম থেকে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে বর্তমান পাত্রসায়রের হদল গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন জনৈক মুচিরাম ঘোষ ৷ পরিচয় হয় তৎকালীন পারুলিয়া পরগনার দেওয়ান শুভঙ্কর রায়ের সঙ্গে ৷ প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ শুভঙ্কর রায়ের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের তৎকালীন রাজা গোপাল সিংয়ের সঙ্গে আলাপ হয় মুচিরামের ৷ ধীরে ধীরে রাজার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি ৷ পরবর্তীতে রাজা গোপাল সিংয়ের কাছ থেকে জমিদারি সত্ত্ব পান মুচিরাম ৷ সঙ্গে পান মণ্ডল উপাধি ৷ সেই থেকেই তাঁর নতুন পরিচয় হয় জমিদার মুচিরাম মণ্ডল হিসাবে ৷ জমিদারির হাতে পেয়েই প্রাসাদোপম বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন তিনি ৷ সেই প্রথা আজও অব্যাহত ৷

আরও পড়ুন : Durga Puja : দশভূজার হাতে সিপাহীর তরোয়াল তুলে দিয়েছিলেন হরিপুরের জমিদার

জমিদার বাড়ির এই পুজোর বয়স 250 বছর ৷ সাবেকি প্রথা অনুযায়ী আজও দশভূজার মৃণ্ময়ী রূপে গঙ্গামাটির প্রলেপ পড়ে জন্মাষ্টমীর দিন ৷ সপ্তমীর দিন সকালে পালকিতে চড়ে বোদাই নদীর ঘাট থেকে আসেন নবপত্রিকা ৷ নহবৎখানায় বেজে ওঠে সানাই ৷ গুদাম ঘর থেকে পুরনো দিনের ঝাড়বাতি বের করে তার ধুলো ঝেড়ে দুর্গাদালানে টাঙানো হয় ৷ পুজো হয় বৈষ্ণব মতে ৷

তবে জমিদার মুচিরাম মণ্ডল পুজো শুরু করলেও তার জাঁকজমক বাড়ে চার পুরুষ পর, জমিদার বেচারাম মণ্ডলের সময় থেকে ৷ জমিদারির পাশাপাশি রেশম ও লাক্ষার ব্যবসা ছিল বেচারামের ৷ ছিল নীলকুঠি ৷ বস্তুত, নীলের ব্যবসা করে মণ্ডলরা তখন বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন ৷ ঠিক সেই সময়েই ব্যবসায় উপার্জিত প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে বজরা করে কলকাতা থেকে গঙ্গা পথে গ্রামে ফিরছিলেন বেচারাম মণ্ডল ৷ কিন্তু, মাঝপথেই শ্রীরামপুরে জল দস্যুদের কবলে পড়েন তিনি ৷ কথিত আছে, সেই সময় হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেবী দুর্গার স্মরণাপন্ন হন বেচারাম ৷ দেবী তাঁকে রক্ষা করেন ৷ প্রাণ নিয়ে ফেরার পর সেই বজরায় থাকা যাবতীয় সম্পত্তি মা দুর্গাকেই অর্পন করেন বেচারাম ৷

mandal family durga puja of bankura
দুর্গা দালান, রাস মঞ্চ, রথ মন্দির, নাট মন্দির ও নহবৎখানা ৷

এরপর সেই বিপুল সম্পদ দিয়ে বিশাল দুর্গা দালান, রাস মঞ্চ, রথ মন্দির, নাট মন্দির ও নহবৎখানা তৈরি করা হয় ৷ এমনকী, বংশ পরম্পরায় পুজা পরিচালনা করতে যাতে কোনও আর্থিক সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে বহু জমি ও পুকুর কিনে সেগুলি দেবী দুর্গার নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত করে দেন জমিদার বেচারাম মণ্ডল ৷ তাঁর আমলে দুর্গাপুজোর সময় টানা সাত দিন নহবৎ বসত ৷ দুর্গা মন্দির-সহ সমস্ত মন্দির সাজান হত বেলজিয়াম গ্লাসের বিশাল বিশাল ঝাড়বাতি দিয়ে ৷ বসত পুতুল নাচের আসর, হত যাত্রাপালাও ৷ জমিদার বেচারাম মণ্ডলের আমলে দুর্গাপুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হত তোপধ্বনি মাধ্যমে ৷ দূর-দূরান্তের অসংখ্য মানুষ আর প্রজারা হাজির হতেন মণ্ডলদের জমিদারবাড়িতে ৷

বিষ্ণুপুরের মণ্ডল জমিদারদের দুর্গাপুজোয় জড়িয়ে 250 বছরের ইতিহাস

আরও পড়ুন : Durga Puja: 156 বছরে পড়ল বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

আজ আর সেই নীল কুঠিও নেই, নেই জমিদারিও ৷ তবু বিশাল দেবোত্তর সম্পত্তির আয়ে দুর্গাপুজার আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখে না মণ্ডল বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম ৷ কর্মসূত্রে দেশ, বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা আজও পুজোর দিনগুলিতে পূর্ব পুরুষের ভিটেয় ছুটে আসেন ৷ জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্য ধীরাজ মণ্ডল বলেন, ‘‘আজ সবটাই অতীত ৷ জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম সদস্যদের প্রায় 55 টি পরিবার রয়েছে ৷ তাঁরা এখন কেউ চাকুরিজীবী, কেউ ব্যবসা করেন ৷ অনেকের অনটন নিত্যসঙ্গী ৷ তবে, পুজোর সময় পরিবারের সকলে একজোট হন ৷ ক’টা দিন আনন্দে কাটে ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.