এই 18টা মাস দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে, জীবনে কোনও দিনই ভুলব না...

author img

By

Published : Jul 2, 2021, 4:32 PM IST

3 migrant workers return to alipurduar from Bhutan amid corona pandemic

পেটের টানে কাজ করতে গিয়েছিলেন ভুটানে ৷ করোনা আবহে 18 মাস সেখানেই আটকে পড়েন রাজু হক ৷ এই সময়টা কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো ৷ অবশেষে তিনি বাড়ি ফিরলেন ৷ জানালেন, বাড়ির জন্য কতটা চিন্তায় দিন কেটেছে তাঁর ৷ তাঁর সঙ্গে ভুটান থেকে দেশে ফিরেছেন আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক৷

আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট এলাকায় থাকি ৷ আমার হাতে কোনও কাজ ছিল না ৷ তাই ঠিকাদাররা যখন বললেন ভুটানে যেতে হবে কাজের জন্য, তখন না করিনি ৷ সেখানে গিয়ে 18 মাস কাজ করেছি ৷ কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় ওখানে আটকে পড়ি ৷ করোনার সময়ে বাড়ির কী অবস্থা, পরিবারের সবাই কেমন আছেন, এই ভেবে ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম ৷ বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছিলাম ৷ কিন্তু মালিক রাজি হননি ৷ তিনি স্পষ্ট বলে দেন, এই অবস্থায় বাড়ি ফেরা যাবে না ৷

ওখানে যিনি মালিক ছিলেন তাঁকে বলেছিলাম, আমি বাড়িতে ফিরতে চাই ৷ মালিক বললেন, বাড়িতে যেতে হবে না ৷ তাঁকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম, 18 মাস ধরে কাজ করছি ৷ এখন বাড়ি যেতে চাইছি, যেতে পারব না ? বাড়িতে যদি কোনও অসুবিধে হয় কী করব ? এই সময়ে আমার বাবা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে কী করব ? মালিক কোনও কথা কানে তোলেননি ৷ ওই সময়টা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে ৷ জীবনে কখনও এই দিনগুলির কথা ভুলতে পারব না ৷

আরও পড়ুন: বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়ে উধাও করোনা বিধি, মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন...

এতদিন ধরে তদ্বির করার পর ভুটানে ভারতীয় দূতাবাস ও ভুটান প্রশাসনের সহযোগিতায় আলিপুরদুয়ার জেলার ভুটান সীমান্ত জয়গাঁতে আমাকে নিয়ে আসা হয় ৷ আমার সঙ্গে ছিলেন আরও দু জন পরিযায়ী শ্রমিক । তাঁরাও বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না ৷ কাজ করতে গিয়ে করোনা আবহে আটকে পড়েছিলেন ভুটানে ৷ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ভুটান প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ভারত-ভুটান সীমান্ত পার করি ৷ এরপর জয়গাঁ ডেভলপমেন্ট অথরিটির এক্সিকিউটিভ অফিসার ভূষণ শেরপা ও জয়ঁগা থানার ওসি অভিষেক ভট্টাচার্য আমাদের ভুটান গেট থেকে দেশে ফিরিয়ে নেন ৷ তাঁরাই আমাদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ৷

আরও পড়ুন: "ঘাবড়াবেন না মোহনবাবু, ও ভ্যাকসিনে বিষ নাই !" মগনলাল মেঘরাজকে নিয়ে আসরে বাবুল

ঠিকাদাররা বেশি টাকা নিয়ে আমাদের এখানে এনেছিল কি না জানি না ৷ ঠিকাদার ও মালিকের মধ্যে কী কথা হয়, তার মধ্যে আমরা থাকি না ৷ তবে বাড়িতে ফিরতে না-পেরে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম ৷ খুব মনে পড়ত বাড়ির সবার কথা ৷ কিন্তু হাত-পা যেন শেকল দিয়ে বাঁধা ছিল ৷ পেটের টানে বিদেশ-বিভুঁইয়ে এসে দারুণ বিপাকে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ বাড়ির কাছেই যদি একটা কাজের ব্যবস্থা হত, তাহলে আর এই দিন দেখতে হত না ৷ ভুটানে 18 মাসে যা কাজ করেছি, তার পারিশ্রমিক এতদিনে পেলাম ৷ এত কিছুর পরে বাড়ি ফিরতে পেরেছি ৷ এতেই আমি দারুণ খুশি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.