Lata Mangeshkar : না যেয়ো না...সুরেলা সফরের সমাপ্তিতে সবার কণ্ঠে সেই লতাই

author img

By

Published : Feb 6, 2022, 10:04 AM IST

Updated : Feb 6, 2022, 11:19 AM IST

Lata Mangeshkar obituary

ছোট থেকেই গানই তাঁর জীবন ৷ তাঁর সুমধুর কণ্ঠে রেকর্ড সংখ্যক গান গেয়েছেন ৷ সেই ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar passes away) আজ আর নেই ৷

কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: তাঁর কণ্ঠের জাদুতে বুঁদ গোটা দুনিয়া ৷ মধুবালা থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া - বলিউডে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিনেত্রী বদলেছে ৷ তবে বদলায়নি তাঁদের প্লে-ব্যাক সিঙ্গার ৷ গায়ের চামড়া কুঁচকে গেলেও, তাঁর কণ্ঠ থেকে গিয়েছে এভারগ্রিন ৷ ভারতের নাইটিঙ্গল, ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের অবদান এককথায় অপরিসীম (Lata Mangeshkar passes away) ৷

জন্ম ইন্দোরে ৷ 1929 সালের 28 সেপ্টেম্বর ৷ বাবা প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী তথা নাট্যশিল্পী পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর, মা সেবন্তী ৷ মাত্র 5 বছর বয়সে বাবার কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি ৷ তবে ছোট্ট লতা ভালোবাসতেন অভিনয়ও ৷ বাবার লেখা বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে ধরা দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর ৷ তবে ছোট থেকেই মানুষের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে তাঁর কোকিলকণ্ঠ ৷ লতা মঙ্গেশকরের বাকি ভাইবোন, অর্থাৎ মীনা, আশা, ঊষা ও হৃদয়নাথ, সবারই গানের জগতে বেশ প্রতিষ্ঠিত ৷

লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গীত জীবন দীর্ঘ আট দশকের কাছাকাছি (Musical life of Lata Mangeshkar) ৷ হাজার খানেক হিন্দি ও 36টি আঞ্চলিক ভাষার ছবিতে 5000-এরও বেশি গান গেয়েছেন ৷ ভারতীয় সিনেমায় গানের ক্ষেত্রে তিনি সাক্ষাৎ সরস্বতী ৷ সেই 1942 সাল থেকে একের পর এক হিট উপহার দিয়ে উন্নতির শিখরে চড়েন কিংবদন্তি গায়িকা ৷ তাঁর গলার বৈচিত্র্য তাক লাগিয়ে দেয় শ্রোতাদের ৷ কখনও গজল, কখনও পপ, আবার কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত ৷ তাঁর গলায় যে কোনও ধরনের গানই আলাদা মাত্রা পেয়েছে ৷

1942 সালে বাবার প্রয়াণের পর গোটা পরিবারের দায়িত্ব চলে আসে লতা মঙ্গেশকরের কাঁধে ৷ পণ্ডিত দীনানাথের বন্ধু মাস্টার বিনায়ক তরুণী লতাকে বড়ি মা ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন ৷ সেই ছবি দিয়েই গানের সফর শুরু ৷ আর ফিরে তাকাতে হয়নি ৷ 1949 সালে বম্বে গিয়ে ওস্তাদ আমন আলি খানের কাছে হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে তালিম নেওয়া শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর ৷

আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar Passes Away : তারাদের দেশে পাড়ি সুর সম্রাজ্ঞীর

তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারে রাহুল দেব বর্মন, মদন মোহন, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, এআর রহমান-সহ বিভিন্ন ডাকসাঁইটে সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন সুরসম্রাজ্ঞী ৷ মদন মোহনের সঙ্গে একাধিক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন ৷ আপ কি নজরোঁ নে সমঝা..., লগ যা গলে..., ন্যায়না বরসে রিমঝিম...৷ তাঁর কালজয়ী গানগুলির মধ্যে অন্যতম ৷ লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের সুরে 700-রও বেশি গান গেয়েছেন ৷ তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য মেরে নসিব মে ও শিশা হো ইয়া দিল হো ৷

পঞ্চমদার সুরে লতা মঙ্গেশকর প্রথম গানটি করেন 1961 সালে ছোটে নবাবে ৷ তাঁর সুরে লতার শেষ গান 1994 সালে, 1942: আ লাভ স্টোরিতে ৷ অক্সারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এআর রহমানের সুরে রং দে বসন্তীতে লুকা ছুপি (2006) এবং লগানে ও পালনহারে (2001) শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে ৷ মুঘল-এ-আজমে পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া থেকে শুরু করে দিল আপনা অউর প্রীত পরাইতে আজিব দাস্তাঁ হ্যায় ইয়ে, প্রেম পুজারীতে রঙ্গিলা রে, দিল সে-তে জিয়া জলে - দশকের পর দশক ধরে সঙ্গীতের সাম্রাজ্যে রাজত্ব করে গিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর ৷ 2012 সালে তিনি তৈরি করেন নিজের ব্র্যান্ড এলএম মিউজিক ৷

কিশোর কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে লতা মঙ্গেশকরের যে গানগুলি আজকের প্রজন্মকেও মাতিয়ে রেখেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কোরা কাগজ থা ইয়ে মন..., ভিগি ভিগি রাতোঁ মে..., থোড়া হ্যায় থোড়ে কি..., হাম দোনো দো প্রেমী-সহ আরও বহু গান ৷ বাংলার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে-ও সুরসম্রাজ্ঞীর সঙ্গে বহু সুপারহিট গান দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ৷ মান্না দে-র সঙ্গে তাঁর যে গানগুলি কালজয়ী হয়ে থাকবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া..., রামাইয়া বস্তাবাইয়া..., ইয়ে রাত ভিগি ভিগি..., আজা সনম মধুর..., যাহা ম্যায় জাতি হুঁ... ৷ আর বলিউডের হেমন্ত কুমার ও লতা মঙ্গেশকরের অনবদ্য সৃষ্টি, ছুপা লো ইউ দিল মে, বাঁশুরিয়া ফির সে বাজে, বেদর্দ জমানা, নিন্দ না মুঝকো আয়ে, হল্কে হল্কে চলো সাওয়ারে, ইতনা তো কহে দো হামসে... ৷

আরও পড়ুন: Achivements of Lata Mangeshkar : ফিরে দেখা সুর সম্রাজ্ঞীর মুকুটে রত্নের তালিকা

দীর্ঘ কেরিয়ারে অগুন্তি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ৷ 1974 সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে পারফর্ম করার সুযোগ পান ৷ তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, 15টি বাংলার চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংগঠনের পুরস্কার, সেরা গায়িকা হিসেবে চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, দুটি স্পেশ্য়াল ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার-সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর ৷ 1989 সালে তিনি পান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার ৷ দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন পান 2001 সালে ৷ 2007 সালে তাঁকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দিয়েছে ফ্রান্স সরকার ৷ এ ছাড়াও ইতিহাসে সর্বাধিক গানের রেকর্ডের অধিকারী লতা মঙ্গেশকরের নাম গিনেস বুকে ওঠে 1974 সালে ৷ 2019 সালে তাঁর 90তম জন্মদিনে তাঁকে দেশের কন্যা (Daughter of the Nation award) পুরস্কারে সম্মানিত করে কেন্দ্রীয় সরকার ৷

লতা মঙ্গেশকর একটা যুগ ৷ একটা অধ্যায় ৷ একটা প্রতিষ্ঠান ৷ যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজত্ব করে যাবেন মানুষের হৃদয়ে ৷ চোখের জলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত তাঁর সুরেই যেন আজ বলছেন, "রজনী এখনও বাকি, আরও কিছু দিতে বাকি, বলে রাত জাগা পাখি ৷ না যেও না..."

Last Updated :Feb 6, 2022, 11:19 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.