কোভিড সুনামিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

author img

By

Published : May 5, 2021, 3:16 PM IST

কোভিড সুনামিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

আমরা করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের কথা বলছি । এটা আসলে সুনামি । দিল্লিতে অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে বলতে গিয়ে এক শুনানিতে সম্প্রতি এ কথা বলছে দিল্লির হাইকোর্ট । গত বছর জানুয়ারিতে কোভিডের প্রথম ঘটনাটি সামনে এসেছিল । আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে এই ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন ২৫ লাখের বেশি মানুষ । দ্বিতীয় তরঙ্গটির ধাক্কায় মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত হন ২৬ লাখেরও বেশি মানুষ । এই সময় ২৩,৮০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে । সরকারি তথ্য বলছে, শুধুমাত্র মার্চ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪১৭ জন । সরকারি তথ্য থেকে আরও স্পষ্ট হয়েছে, শুধুমাত্র এপ্রিল মাসে ৪৫০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ।

এই মুহূর্তে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে । সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ লাখ । এই সব তথ্য ভয়াবহ সামাজিক সঙ্কটের দিকের কথাই ইঙ্গিত করে ।

বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভারতে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যাবে । এবং এই মাসে দৈনিক মৃত্যুর হার ৫ হাজার হবে । এই সব তথ্য সামনে আসার পরই দেশ জুড়ে ফের এক বার লকডাউনের দাবি উঠতে শুরু করেছে । কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই হল মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং দিল্লিতে । ইতিমধ্যেই ১৫০ জেলায় কঠোর লকডাউনের কথা বলেছে, যে জেলাগুলিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা অত্যাধিক হারে বেশি ।

হরিয়ানা এবং ওড়িশা ইতিমধ্যেই লকডাউন ঘোষণা করেছে । বেশ কয়েকটি রাজ্য কার্ফু জারি করেছে । পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থার কথা বলেছে । তবে এত কিছুর পরেও করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না । বেশ কয়েকটি দেশ ভারত থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । বলা ভাল, ভারতকে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সংক্রমণের হার কমানো এবং নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অবিলম্বে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা এবং লকডাউন করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা ।

সুপ্রিমকোর্টও সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশের মানুষের জীবনের কথা ভেবে কেন্দ্রীয় সরকারের লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে আবার বিবেচনা করা উচিত । পাশাপাশি আদালত দেশের দরিদ্র মানুষজনকে ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আর্থ-সামাজিক দিকটিতে নজর দিয়ে ভাবনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অগ্রিম ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে । আমেরিকার জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফৌসি মনে করেন, যেহেতু দেশের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে, সে জন্য কয়েকটা সপ্তাহের জন্য লকডাউনের চিন্তাভাবনা করা উচিত । তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, চিন যে ভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কোভিড হাসপাতাল তৈরি করেছিল, ভারতেরও উচিত একইভাবে পদক্ষেপ করা । তিনি আরও বলেছেন, অক্সিজেন, ওষুধ এবং হাসপাতালে বেড যাতে সাধারণ মানুষ সহজে পান, তা সহজলভ্য করার দিকটা দেশের সরকারকে নজর দেওয়া উচিত ।

প্রধানমন্ত্রী যেমন কোভিড টাস্কফোর্স গঠন করেছেন, তেমনভাবে আরও কিছু পদক্ষেপ করা উচিত, যাতে মানুষকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করা যেতে পারে । ফেডারেশন অব ইণ্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মতে, করোনার ভয়াবহতা কম করে চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত থাকবে । তাঁদের অনুমান, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কম করে দুই লাখ আইসিইউ বেড, তিন লাখ নার্স এবং দুই লাখের কাছাকাছি জুনিয়র ডাক্তারের প্রয়োজন ।

রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা এবং দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশের শিল্পসংগঠনগুলিও । দেশের সামনে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । কেন্দ্রের উচিত রাজ্যগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা । পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা বিবেচনা করা । আর প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অবশ্যই মানসিক দিক থেকে ভাবনাচিন্তা করা । করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ফলে ব্যাপক মৃত্যুর হারকে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতেই হবে ।

আরও পড়ুন : 24 ঘণ্টায় সর্বাধিক 3780 মৃত্যু, দেশে করোনায় আক্রান্ত আরও 3.82 লাখ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.