নীতি পুনর্বিবেচনা জরুরি

author img

By

Published : May 6, 2021, 7:13 AM IST

নীতি পুনর্বিবেচনা জরুরি

আগামী 15 দিনের মধ্যে কোভিড ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে । একদিকে মৃত্যু মিছিল যেমন বাড়বে, তেমনই 50 লাখের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হবেন । আমেরিকা এবং ব্রাজিলের পর কোভিডে মৃতদের তালিকায় তৃতীয় দেশটির নাম ভারত । অত্যন্ত মর্মান্তিক হলেও এটাই সত্যি যে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় বিশ্বব্যাপি যে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশই ভারতে ।

করোনার প্রথম তরঙ্গটির তীব্রতা সামান্য কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সরকার সব রকম কোভিড সতর্কতা যেন মুছে দিয়েছিল । কোটি কোটি দেশবাসীর এই যে কষ্ট, হাহাকার এসব কিছুর জন্য সরকারের অবহেলাই দায়ী । বিশ্বের যে দেশগুলি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে বা করছে, তারা ভারতকে বড় ভাই হিসেবে বিবেচনা করেছিল । আর এ দেশের নেতাদের স্বল্পদৃষ্টির জন্য গোটা দেশে ভ্যাকসিনের এমন হাহাকার, ঘাটতি দেখা দিয়েছে ।

পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন প্রাপকদের বয়সসীমা শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । 18 থেকে 45 বছর পর্যন্ত বয়সের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যে নীতি নিয়েছে, সে সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা । ভ্যাকসিন প্রস্তুত কারক সংস্থাগুলির হাতে দাম নির্ধারণের স্বাধীনতা রেখে যে ভাবে রাজ্যসরকারগুলির কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা কেন্দ্রের এক অতি বিপজ্জনক পদক্ষেপ বলে অনেকেই অভিহিত করেছেন ।

এই কারণে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে প্রশ্ন তুলেছিল, কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী টিকা দেওয়ার যে পন্থা অনুকরণ করা হচ্ছে, কোভিডের টিকার ক্ষেত্রে কেন তা অনুসরণ করা হবে না ? টিকা দেওয়ার পদ্ধতি এবং নীতি বিবেচনা করার কথা শোনা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের মুখেও । পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক দিকটার কথা চিন্তা করে এবং টিকা দেওয়ার মতো বিষয়টি, যেখানে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সবার আগে জরুরি, এ সব দিক বিবেচনা করে আদালতের প্রশ্ন ছিল, " দরিদ্ররা কোথা থেকে টিকা কেনার টাকা পাবেন ?"

দেশের সংবিধানে জীবনের অধিকার সম্পর্কিত যে ধারা আছে, কেন্দ্রের টিকা দেওয়ার নীতি তার থেকে সম্পূর্ণ উল্টো । উপলব্ধি বেঞ্চের । কোভিডের এই ভয়াবহতা থেকে দেশকে বাঁচাতে এখনই সরকারের চোখ খোলা উচিত ।

আরও পড়ুন : রাজ্যে লাগামছাড়া করোনা সংক্রমণ, 24 ঘণ্টায় আক্রান্ত 18 হাজারের বেশি

মোদি সরকার আদালতে জানিয়েছিল, দুই হাজার কোভিড হাসপাতালে 4.68 লাখ কোভিড বেড তৈরি করা হয়েছে । পাশাপাশি সরকার দাবি করেছিল, কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি ত্রিস্তরীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে । তবুও এটা সত্যিই যে, দেশের 35 লাখ মানুষ কোভিডে আক্রান্ত । এই একটি মাত্র পরিসংখ্যান দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।

হাসপাতালে বেডের অপ্রতুলতা এবং অক্সিজেনের অভাবে হাজার হাজার রোগীর মৃত্যু নিঃসন্দেহে মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় । একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস নিয়ে হাস্যকর মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন । কিন্তু, তার প্রশাসন দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছিল ভ্যাকসিন তৈরি, গবেষণা এবং উৎপাদনের জন্য । সেই কাজের জন্য আমেরিকা আজ অনেকটাই নিরাপদ । ইজরায়েলের মতো দেশগুলিও গত বছরের মে মাসের মধ্যেই তাদের সব কটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাকে অগ্রিম মিটিয়ে দিয়েছিল । এ জাতীয় দেশগুলি আজ যথেষ্ট নিরাপদে রয়েছে ।

এখনও পর্যন্ত বিশ্বে 116 কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে । ভ্যাকসিন প্রদানকারী দেশগুলির তালিকায় ভারতের স্থান 74 । নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাবের কারণেই আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়ে এই হাহাকার চলবে । সাধারণ মানুষ অক্সিজেন এবং জীবনদায়ী ওষুধের জন্য চোখের জল ফেলছে ।

তিনশো টন জরুরি চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা দেশের ডিলি বিমানবন্দরে আটকে রয়েছে, বহু দিন হতে চলল । সরকারের এই ধরনের হৃদয়হীন মনোভাব নাগরিকদের হৃদয় আঘাত করতে বাধ্য । সরকারের উচিত অবিলম্বে দেশের মানুষের মন থেকে এই ধরনের অদ্ভূত মনোভাব অবিলম্বে অপসারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে । কোভিড নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে, পুরো বিষয়টা বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা অনুসারে করা উচিত ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.