কোভিড টিকাকরণ – আপনার যা যা জানা দরকার

author img

By

Published : Mar 16, 2021, 1:15 PM IST

COVID-19 vaccination

করোনার টিকা নেওয়ার জন্য কী কী গাইডলাইন আপনাদের মেনে চলতে হবে ? আলোচনায় মুম্বইয়ের ফর্টিস হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের অধিকর্তা এবং মহারাষ্ট্রের কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য চিকিৎসক রাহুল পণ্ডিত ৷

আমরা বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছি । কিন্তু বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যা এই কর্মসূচির সাফল্যকে ব্যাহত করতে পারে এবং কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করতে পারে।

হ্যাঁ, টিকাকরণই কোভিডের বিরুদ্ধে সবথেকে কার্যকর হাতিয়ার, যাতে আমরা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারি। ভারতে টিকাকরণ অভিযান প্রথম দিন থেকেই গতি পেয়েছে। প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর উৎসাহে আমরা আস্তে আস্তে লক্ষ্যপূরণের দিকে এগোচ্ছি। স্বাস্থ্যকর্মী ও কোভিড যোদ্ধাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর, আমরা আমাদের ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকদের এবং কো-মর্বিডিটি আছে, 45 বছরের ওপরের এমন মানুষদের রক্ষা করতে টিকাকরণ করছি।

আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের টিকাকরণের জন্য গাইডলাইন নিচে দেওয়া হল:

1. সমস্ত বড়রা টিকা নেবেন ও অন্যদেরও নিতে উৎসাহিত করবেন।

2. খেয়ে দেয়ে ভ্যাকসিন নিতে যাবেন। শরীর যেন হাইড্রেটেড থাকে।

3. ভ্যাকসিনের উপাদানে যাঁদের অ্যানাফাইল্যাক্সিস (অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া) আছে, একমাত্র তাঁদেরই ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়।

4. কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন সহ সমস্ত অনুমোদিত ভ্যাকসিনই

* করোনায় মৃত্যু রুখতে 100 শতাংশ সফল।

*গুরুতর কোভিড-19-এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর।

* সিম্পটোম্যাটিক কোভিড-19-এর বিরুদ্ধে বেশি থেকে মাঝারি (60 শতাংশ থেকে 95 শতাংশ) সাফল্যের হার।

*একমাত্র উপসর্গহীন কোভিড-19-এর বিরুদ্ধে পুওর এফিকেসি।

আরও পড়ুন : ভ্যাকসিন পাঠানোয় মোদিকে ধন্যবাদ ভিভ, রিচার্ডসনদের

5. ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষদের – ষাটোর্ধ্ব এবং 45 বছরের বেশি যাঁদের কোমর্বিডিটি আছে, তাঁদের টিকাকরণ মৃত্যুহারকে একেবারে নিচে নামিয়ে আনবে। বর্তমানে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে এই ধরণের মানুষই প্রায় 90 শতাংশ। সুতরাং এই বয়সের মানুষদের টিকা নিতে উৎসাহিত করা উচিত।

6. আগে যাঁদের কোভিড-19 সংক্রমণ হয়েছে, তাঁদের সেরে ওঠার 8-12 সপ্তাহ পরেই টিকা নেওয়া উচিত।

7. যাঁদের কোভিড সংক্রমণের জন্য প্লাজমা থেরাপি করতে হয়েছে, তাঁদেরও ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে 8-12 সপ্তাহ অপেক্ষা করা উচিত।

8. হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, রেনাল ফেলিওর ও হৃদরোগ, যাঁদের বাইপাস হয়েছে, অ্যানজিওগ্রাফির পর এবং যাঁদের ডায়ালিসিস চলছে, তাঁদেরও টিকা নিতে অসুবিধে নেই।

9. গর্ভাবস্থায় ঝুঁকির থেকে লাভ বেশি থাকলে ভ্যাকসিন নেওয়াই উচিত। যেমন, কোনও কোভিড-যোদ্ধা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন, সেক্ষেত্রে তাঁর টিকা নেওয়া দরকার।

10. ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কতদিন সন্তানধারণ করা যাবে না, সে ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই। তবে ভাইরাস যদি নিস্ক্রিয় বা মৃত হয়, সেক্ষেত্রে 6-8 সপ্তাহ পর সন্তানধারণ করা নিরাপদ বলেই মনে করা হয়।

11. যাঁদের ফুড অ্যালার্জি, ওষুধে অ্যালার্জি আছে(ভ্যাকসিনের উপাদান বাদে), এবং হাঁপানি, অ্যালার্জিক রিনাইটিস এবং অ্যালার্জিক ডার্মাইটিস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন নিরাপদ। তবে নেওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।

আরও পড়ুন : কোভিডে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে ওবেসিটি ?

12. যাঁরা অ্যাসপিরিন এবং ক্ল্যাপিডোগ্রেলের মতো অ্যান্টি-প্লেটলেট ওষুধ খান, তাঁদের ওষুধ চালিয়ে অব্যাহত রেখেই কোভিড টিকা নিতে পারেন।

13. যাঁরা ওয়ারফারিনের মতো ব্লাড থিনার এবং অ্যান্টি-কোয়াগুলেশন এজেন্ট নেন, তাঁদের ইঞ্জেকশনের জায়গাটা ফুলে যাওয়ার সামান্য ঝুঁকি থাকে। যাঁরা এগুলো নেন, তাঁদের সকালের ডোজ না নিয়ে, ভ্যাকসিন নিয়ে, তারপর পরের ডোজ নেওয়া উচিত।

14. স্ট্রোক, পার্কিনসন্স, বা ডিমেনশিয়ার মতো স্নায়বিক সমস্যা থাকা রোগীদের পক্ষেও ভ্যাকসিন নিরাপদ।

15. যাঁরা ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট খাচ্ছেন (অর্থাৎ যাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে) তাঁরাও নিরাপদেই ভ্যাকসিন নিতে পারেন। যদিও এক্ষেত্রে ইমিউনো রেসপন্স সম্পূর্ণ নাও হতে পারে। নাম নথিভূক্ত করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।

16. ভ্যাকসিন নিলে অ্যালকোহল খাওয়া যাবে না, ভ্যাকসিন যৌনক্ষমতা নষ্ট করে, ভ্যাকসিন আপনার ডিএনএ বদলে দেবে – এগুলো সবই ভুল কথা।

17. শিশুদের ক্ষেত্রে এখনও কোনও ট্রায়াল হয়নি। তাই 18 বছরের নিচে ভ্যাকসিন নেওয়া আপাতত বিলম্বিত রয়েছে।

18. ক্যান্সারের রোগী এবং যাঁদের কেমোথেরাপি চলছে, তাঁদের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কেমোথেরাপি সাইকলের মাঝখানে ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় বার করতে হবে। সাধারণত, কেমোথেরাপির অন্তত চার সপ্তাহ পরে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।

19. ভ্যাকসিন নেওয়ার পর জ্বর, গায়ে ব্যাখা, ঝিমুনি, মাথাব্যথা খুব সাধারণ ব্যাপার।

20. ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রয়োজন হলে একটা প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। বেশির ভাগ উপসর্গই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।

গুজবে কান দেবেন না। সঠিক তথ্য জানার সেরা উপায় হল সেই ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলা, যাঁরা কোভিড ভ্যাকসিন দিচ্ছেন। মনে রাখবেন, ভ্যাকসিন থেকে পাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা হার্ড ইমিউনিটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমশ বাড়তে থাকা ভাইরাস-আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার আপাতত এটাই একমাত্র পথ। আসুন, পাল্টা লড়াই করে এই মহামারীকে বরাবরের মতো নির্মূল করে দিই ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.