Pakistan Economic Crisis: অর্থনৈতিক সংকট পাকিস্তানে থাকা কাশ্মীরি নেতা ও ক্যাডারদের উপর প্রভাব ফেলবে

author img

By

Published : Feb 24, 2023, 5:38 PM IST

Pakistan Economic Crisis

পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি চরমে পৌঁছালেও (Inflation in Pakistan), অর্থনীতি ডুবে গেলেও ভারতের প্রতিবেশী এই দেশ রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনে (UNGA) কাশ্মীর ইস্যুতে সরব হয়েছে ৷ এই বিষয়ে বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন ইটিভি ভারত-এর নেটওয়ার্ক এডিটর বিলাল ভাট ৷

অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান (Pakistan Economic Crisis) ৷ এর প্রভাব ওই দেশের উপর ব্যাপক ভাবে পড়েছে ৷ একই ভাবে কাশ্মীরি বিচ্ছন্নতাবাদীদের (Kashmiri separatists) উপরই এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে ৷ কারণ, ওই বিচ্ছন্নতাবাদীদের ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য আশ্রয় নেয় পাকিস্তানে ৷ কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতির দিক থেকে থেকে পাকিস্তানের অবস্থা এখন স্থিতিশীল নয় ৷ ভারতের প্রতিবেশী এই দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে ৷ বেশ কয়েকমাস ধরেই ওই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে ৷ তার পর অর্থের সংকট সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷

বিচ্ছিন্নতাবাদ: পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন সমর্থন করে ৷ এদিকে সীমান্ত এলাকায় উপজাতিদের বিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে ওই দেশের অন্দরে সমস্যা বেড়েছে ৷ একটা প্রবাদ আছে যে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনও মিশন শুরু করলে আপনার কাছে দু’টি বুলেট থাকতে হবে ৷ একটি শত্রুর জন্য ও অন্যটি নিজের জন্য । 1971 সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল ভারত ৷ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে তারই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল ৷ 1980-র দশকে তারা খালিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করে ৷ শিখদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পূরণ করিয়ে দিয়ে ভারতকে ভাঙার ছকেই ওই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান ৷ সেই সময় ইসলামাবাদ কাশ্মীর থেকে নিজেদের নজর ঘুরিয়ে নিয়েছিল ৷ অথচ তার আগে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করার বহু চেষ্টা তারা করেছে ৷

কে-ফ্যাক্টর: পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের জন্য কাশ্মীর ইস্যু (Kashmir Issue) লাভজনক হয়ে উঠেছিল ৷ যাঁরা কাশ্মীর বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষ নিয়েছেন, নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁরা বরাবর সাফল্য পেয়েছেন ৷ এটাও সত্যি যে কাশ্মীরের প্রতি ক্ষোভ যাঁরা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা দেশবাসীর রোষের মুখে পড়েছেন ৷ তাই পুরো পাকিস্তান যখন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, তখনও কাশ্মীর নিয়ে তাদের অবস্থান একই রয়েছে ।

23 ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (UNGA) পাকিস্তান আরও একবার কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করেছে ৷ এই ইস্যুতে তারা নিজেদের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছে ৷ তারা বুঝিয়ে দিয়েছে যে তাদের দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও তারা এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান থেকে নড়বে না ৷

রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব: পাকিস্তান ভুলে গিয়েছে যে তাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যাগুলিই কার্যত তাদের দেশের সম্পদকে শেষ করে দিয়েছে ৷ আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর খারাপ করে তুলেছে ৷ সাম্প্রতিক বন্যা ওই দেশের আর্থিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলেছে । পাকিস্তানের বাজেটের একটি বড় অংশ সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয় ৷ এটা তাদের কাছে অনেকটা সাদা হাতি পোষার মতো ৷ কারণ, এর থেকেই সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়া হয় ৷ আবার আফগানিস্তান সীমান্তে কড়া নজরদারি করা হয় ৷ ওই দেশ তৈরি হওয়ার পর থেকেই তাদের সরকার এই কাজ করে আসছে ৷ পাকিস্তানের প্রতিটি রাজনৈতিক দল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর নির্ভর করে থাকে ৷ তাই কোনও নেতারই এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই ৷ পাকিস্তান প্রায় ডুবতে বসেছে ৷ তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ৷ তার পরও তাদের কাশ্মীর নীতিতে তারা এখনও অনড় ৷

সন্ত্রাসে মদত: ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিল, কাশ্মীরের একাধিক ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠন এক ছাতার তলায় এনে কাজ করে ৷ এদের প্রধান ঘাঁটি পাকিস্তানে ৷ এই কাউন্সিলের নেতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন ৷ তিনি 20 বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছেন । বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির এই সংগঠন তৈরি করা হয় অর্থনৈতিক কারণে, যাতে কাশ্মীরে আরও টাকার ব্যবস্থা করা যায় ৷ বিভাজনের কৌশলে আরও অর্থ বেশি আসে ৷ জেকেএলএফ (JKLF), হিজব (Hizb) ও তেহরিক উল মুজাহিদিনের মতো একাধিক সংগঠন বিভিন্ন নেতার অধীনে চলে ৷ একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে থাকলে অনুদান বেশি পাওয়া যায় ৷

তহবিলের ঘাটতি: বর্তমানে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট চলছে ৷ তারা মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে (Inflation in Pakistan) ৷ এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদে বা অন্য কোথাও গোপনে কাজ করা বিচ্ছিন্নতাবাদী শিবিরগুলি চালানো তাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জের হবে । কাশ্মীরেপ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির প্রতিনিধিরা পাকিস্তানে রয়েছে ৷ কিন্তু তাদের প্রধান কমান্ডার-সহ নেতাদের রসদ জোগানো আর্থিক সংকটের জন্য পাকিস্তানের পক্ষে কঠিন হতে চলেছে ৷

সামাজিক প্রভাব: কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব ছাড়াও আরও একটা সমস্যা বড় হতে চলেছে ৷ সেটা হল মুদ্রাস্ফীতি ৷ এই মুদ্রাস্ফীতির জন্য ওই দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিভাজনকে আরও প্রশস্ত করতে চলেছে ৷ এমনিতেই সেখানে সমাজের দু’টি শ্রেণীর মধ্যে বিশাল বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে । মুদ্রাস্ফীতি সেই পরিস্থিতিকে আরও গভীর করবে ৷ পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ক্যাডার ও নেতাদের ক্ষেত্রেও একই প্রভাব পড়তে চলেছে ৷

মুদ্রাস্ফীতি: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রায় 30 শতাংশ বেড়েছে পাকিস্তানে ৷ ফলে রান্নার জন্য ন্যূনতম সামগ্রীও জোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছেন ওই দেশের মানুষ ৷ ওই দেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছেন ৷ পরিস্থিতি এমনই যে অনেককে সংসার চালাতে ঋণ নিতে হচ্ছে ৷ অনেককে তো খাবার জোগাড়ের জন্য ভিক্ষা করতে হচ্ছে ৷ যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের পরিস্থিতিও ভালো নয় ৷ কারণ, তাঁদের বেতন বাড়ছে না ৷ কিন্তু দাম বৃদ্ধির ফলে খরচ বাড়ছে ৷ সম্প্রতি আইএমএফ-এর সঙ্গে পাকিস্তানের বৈঠক হয় (Pakistan Meeting with IMF) ৷ সেখানে আর্থিক সাহায্য বা বেলআউটের জন্য আবেদন করা হয় ৷ কিন্তু বৈঠকে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি তুলে ধরেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা ৷

আইএমএফের আর্থিক সাহায্য: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড ৷ সংক্ষেপে আইএমএফ ৷ এটি একটি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা ৷ পাকিস্তানকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে তারা যে টাকা দেবে, সেই পদক্ষেপের আগে ওই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন ৷ তার পর থেকেই এই নিয়ে আইএমএফ ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৷ ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা যে যে শর্ত রেখেছেন, তার মধ্যে অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের আয়ের উপর কর বৃদ্ধি করা ও দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানের বিষয়টি রয়েছে ৷ আইএমএফের প্রস্তাবে সম্মত হলে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে ৷ কর বৃদ্ধির বিষয়টি ধনীদের উপর নিপীড়ন হিসেবেই বিবেচিত হবে । আইএমএফের ডিরেক্টর মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৷ কারণ, তা বেশিরভাগ দরিদ্রদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে ৷

বিচ্ছিন্নতা: রাওয়ালপিন্ডিতে এক সপ্তাহ আগে কাশ্মীরি জঙ্গি নেতাদের রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৷ পাকিস্তান ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শিবিরের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক যে চলছে না, এটা তারই ইঙ্গিত । বিশৃঙ্খলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে । ঘোষিত জঙ্গি জেহাদ কাউন্সিলের প্রধান সৈয়দ সালাহুদিনকে রাওয়ালপিন্ডিতে এক জঙ্গির অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে ৷ এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরতে চাইছে পাকিস্তান ৷ সেই প্রচেষ্টায় সমস্যা তৈরি করবে এই সালাহউদ্দিনের প্রকাশ্য উপস্থিতি ৷

আরও পড়ুন: 'বছর খানেক আগে দেশে সন্ত্রাসবাদ ফিরিয়েছে সরকার !' তোপ পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.