কোভিড 19 থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী সময় কেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ...

author img

By

Published : May 24, 2021, 1:14 PM IST

Updated : May 24, 2021, 1:31 PM IST

প্রতীকী ছবি

গত বছর থেকে কোভিড 19 নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । নিত্যদিন নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে । ইটিভি ভারতের সুখীভব এমনই হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করেছে । হায়দরাবাদের ভিআইএনএন হাসপাতালের কনসালটেড ফিজিসিয়ন রাজেশ ভুক্কালা এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করলেন । একবার সুস্থ হওয়ার পর কী করবেন, কীভাবে থাকবেন, বিভিন্ন জটিলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন কীভাবে, এমনই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি ।

ভারতে কোভিড 19 এর দ্বিতীয় তরঙ্গ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে । বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন । এমনকি, ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়ার পরেও আক্রান্ত হওয়ার বহু খবর পাওয়া গিয়েছে । এখন যেহেতু বহু মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সঙ্গে টিকা নেওয়াও হয়েছে, তার পরও কীভাবে সংক্রমণ হচ্ছে ? বা একবার টিকা নেওয়ার পর সংক্রমণ হলে কী করা হবে? এছাড়াও সংক্রমণের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা কয়েক সপ্তাহ পর কীভাবে থাকা উচিত, কীভাবে নিজেকে সুস্থ করা উচিত, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নগুলি নিয়েই আমাদের অবহিত করলেন চিকিৎসক (এম ডি) রাজেশ ভুক্কালা । তিনি হায়দরাবাদের ভিআইএনএন হাসপাতালের কনসালটেড ফিজিসিয়ন ।

কেন ফিরে আসছে ভাইরাসটি ?

ভুক্কালা জানাচ্ছেন, "ভাইরাসটি গত বছরের পর থেকে নিয়মিত পরিবর্তিত হচ্ছে । যে মিউট্যান্টটি এখন মানুষকে আক্রান্ত করছে, তার সঙ্গে আগেরটার কোনও মিল নেই । সুতরাং, আপনি ভ্যাকসিন নিলেন বা আপনার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হল, তা এক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর হবে না । সুতরাং, একবার কোভিড 19 আক্রান্ত হওয়ার পর ফের এখন হতে পারেন । তবে এটা ঠিক, আগের মতো এক্ষেত্রে পরিস্থিতি ততটা ভয়ঙ্কর হবে না ।

অনেক বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে, এক বার সংক্রমিত হয়ে গেলে, এক জন ব্যক্তির দেহে ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অ্যান্টিবডি তৈরি থাকে । এ প্রসঙ্গে ভুক্কালা বলেছেন, কে কখন কী ভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়বেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনও কিছু বলা সম্ভব নয় । বয়স, নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কোমর্বিডিটির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কতটা ভাইরাসের সংস্পর্শ রয়েছেন, এই বিষয় গুলি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া ভাইরাস কীভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করবে, তার উপরও সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ হবে, তা নির্ভর করে ।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটা, পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সময় কত লাগতে পারে ?

সংক্রমণ ধরা পড়ার সাত থেকে 14 দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে সপ্তম থেকে নবম দিনের মধ্যে শরীরে বিভিন্ন পার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে । ভাইরাসটি ছয় দিন শরীরে থাকার পর আস্তে আস্তে তার শক্তি বাড়িয়ে আরও ক্ষতি করতে পারে । শরীরে ভাইরাসটি নানা ভাবে সমস্যা তৈরি করে । একে সাইটোকাইন ঝড় বলে । এর ফলে ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, ডায়রিয়া, স্ট্রোক বা দেহের কোনও কোনও অঙ্গ বিকলও পর্যন্ত হতে পারে ।

ভুক্কালা আরও জানাচ্ছেন, একজন ব্যক্তির হৃদস্পন্দন ১৫০ - ১৬০ বিপিএম পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে । এই পরিস্থিতিকে ট্যাকিয়ারেডমিয়াস বলে । একই রকম ভাবে হৃদস্পন্দন 30 থেকে 40 বিপিএমও হতে দেখেছি । এই পরিস্থিতি ব্রেডিয়ারেডমিয়াস নামে পরিচিত । এই অবস্থা অতি অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী । ভাইরাল সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় এটি ।

সংক্রমণ হওয়ার 14 দিন পর যখন সুস্থতার দিকে এগোচ্ছেন কেউ, তখন বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায় । এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভুক্কালা বলেছেন, সমস্যাটি দেখা যায় মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, রক্তনালীতে । দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলিও প্রভাবিত হয় । স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাপ্রাপ্ত হয় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে । হৃদযন্ত্রে সমস্যা ডেকে আনতে পারে হার্টঅ্যাটাক । ফুসফুসের সমস্যা শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ করে দিতে পারে । এসবই মৃত্যুর কারণ হতে পারে । আর এগুলি দেখা দিতে পারে, দ্বিতীয় সপ্তাহের পর ।

করোনা থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী সময় উদ্বেগের আরও বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে । যে সকল রোগীর স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা চলছে, যাঁদের রক্তে শর্করার হার নানা ভাবে ওঠা নামা করে, এমন রোগীদের মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে । এপ্রসঙ্গে বলা যায়, মুখের এক পাশে ব্যথা বা জ্বালা করা, জ্বর, বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন । রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা শুরু করা দ্রুত প্রয়োজন ।

কী ভাবে সমস্যা এড়িয়ে থাকতে পারবেন

সংক্রমণ গুরুতর, একাধিক কঠিন ওষুধ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন চিকিৎসকরা । এমন রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পর সময়টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এসময় এই ধরণের রোগীদের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে । এপ্রসঙ্গে ভুক্কালা বলছেন, হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়ার সময় তাঁদের ভাল করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় । রক্তের প্রোফাইল, হাঁটাচলা করার ক্ষেত্রে ক্ষমতা, শ্বাস প্রশ্বাস সহ বিভিন্ন দিকগুলি ভাল করে পরীক্ষা করা হয় । এরপর রোগীর প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে দুই থেকে চার সপ্তাহের ওষুধ দেওয়া হয় ।

এপ্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত

1) পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং ডায়েট এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম

2) নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে হবে

3) একটু সুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকদের দেখিয়ে দেওয়া এবং পরামর্শ ক্রমে ধীরে ধীরে ব্যায়াম করতে হবে । যা ফুসফুস সতেজ রাখার পাশাপাশি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ।

এছাড়া কোভিড 19 থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর শারীরিক কিছু অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেন, বিশেষ করে জ্বর, শ্বাস কষ্টের মতো, বিষয়গুলি অবিলম্ব চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত । প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সমস্যাগুলি ধরা হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্য আনা সম্ভব হবে । এছাড়া যদি সুস্থ হওয়ার পর আবারও কোভিড 19 এর কোনও লক্ষণ নজরে আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

আরও পড়ুন : 12 দিনে মৃত 50 হাজার, মোট মৃত্যু ছাড়াল 3 লাখ

Last Updated :May 24, 2021, 1:31 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.