পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

Odisha Train Accident: অ্যাম্বুলেন্স হাঁকিয়েছে 20 হাজার, গয়না বন্ধক রেখে ওড়িশা থেকে কাটোয়ায় ভাইয়ের দেহ আনলেন দাদা

By

Published : Jun 4, 2023, 1:44 PM IST

Odisha Train Accident

ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কাটোয়ার বাসিন্দা 31 বছরের সাদ্দাম হোসেন শেখের ৷ তাঁর দেহ বাড়িতে ফিরে আনার জন্য গয়না ও জিনিস বন্ধক রেখে ধার করলেন মৃতের দাদা ৷ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিতে হয়েছে কুড়ি হাজার টাকা ৷

গয়না বন্ধক রেখে ওড়িশা থেকে কাটোয়ায় দেহ আনলেন মৃতের দাদা

কাটোয়া, 4 জুন:ওড়িশায়ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কাটোয়ার সাদ্দাম হোসেন শেখের (31)। শোকে মূহ্যমান পরিবারকে আরও কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হল পরিস্থিতির কারণে ৷ সাদ্দামের দেহ খুঁজে পেলেও তা বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য কালঘাম ছোটাতে হয় মৃতের দাদাকে ৷ মৃতদেহ ওড়িশা থেকে কাটোয়া আনার জন্য সেখানকার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া হেঁকেছে কুড়ি হাজার টাকা । গরিব পরিবার অগত্যা সোনার গয়না ও জিনিসপত্র বন্ধক রেখে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া জোগাড় করেছে এবং শেষ বারের জন্য বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে ঘরের ছেলের নিথর দেহ ৷

কাটোয়া 1 ব্লকের কৈথনের মালপাড়া । ওই এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম শেখ । কেরলে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন । দিন সাতেক আগে তিনি তাঁর দেড় মাসের সন্তানকে দেখতে বাড়িতে ফিরেছিলেন । বাড়িতে কয়েকদিন কাটিয়ে শুক্রবার কেরলের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি । ট্রেনে উঠে দুপুর নাগাদ শেষবারের জন্য বাড়িতে ফোনে কথা বলেন সাদ্দাম । তারপরেই রাতের দিকে বাড়ির লোক ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পান । সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তাঁর পরিবার । পরে খবর আসে, সাদ্দাম আর বেঁচে নেই ।

সেই খবর পাওয়ার পরেই শোকের ছায়া নেমে আসে বাড়িতে ৷ সাদ্দামের দেহ ফিরিয়ে আনতে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন সাদ্দামের দাদা ফিরোজ শেখ । বালাসোরের বাহানাগা বাজারের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি দেখেন, চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ । কারও কারও দেহের বিভিন্ন অংশ এমনভাবে টুকরো টুকরো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে, কার দেহ তা চেনা সম্ভব হচ্ছে না ৷

আরও পড়ুন:ট্রেন দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়েছে প্রায় 20জনের, বিষাদের সুর দক্ষিণ 24 পরগনায়

এ দিকে, মৃতদেহ খোঁজার ক্ষেত্রেও পরিবার পরিজনকে প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য করা হয়নি বলে অভিযোগ । প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারগুলিকে জানানো হয়, নিজেদের উদ্যোগেই মৃতদেহ খুঁজতে হবে । সেই দেহ শনাক্ত করার পরে প্রশাসন শুধু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে । প্রশাসনের তরফে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা কোনও গাড়িরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি । গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স চাইতে গেলে তাঁদের জানানো হয় এত মানুষের জন্য গাড়ির জোগাড় করা সম্ভব নয় । অগত্যা ধার দেনা করে, গয়না বন্ধক রেখে গাড়ি জোগাড় করতে হচ্ছে মৃতদের আত্মীয়দের ৷ তার উপর এই সুযোগে ইচ্ছামতো গাড়ির ভাড়া হাঁকাচ্ছেন গাড়ির চালকেরা । বাহানাগা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নেওয়া হয়েছে কুড়ি হাজার টাকা ।

মৃতের ভাই ফিরোজ শেখ বলেন, "ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভাইয়ের । অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দেহ নিয়ে এলাম । কুড়ি হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে । প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি । তারা বলেছে তাদের কাছে কোনও ব্যবস্থা নেই । কত মানুষকে অ্যাম্বুলেন্স দেব । আমি দেখলাম, আমার ভাইকে তো আমাকে নিয়ে যেতেই হবে । তাই গয়না, জিনিস বন্ধক দিয়ে টাকা জোগাড় করেছি । অনেক মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে এখানে ওখানে পড়ে আছে । বাড়ির লোকজন গিয়ে কেউ চিনতে পারছেন আবার কেউ তাও পারছেন না । হাউহাউ করে তাঁদের কাঁদা ছাড়া উপায় নেই । প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, নিজেদের মৃতদেহ নিজেরা খুঁজে নিয়ে যান । ফলে বাধ্য হয়ে ধার দেনা করেই আনতে হয় ভাইয়ের মৃতদেহ ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details